শিরোনাম
মিয়ানমারে বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে ‘মুসলিম ফ্রন্ট’ মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিবের কোনো ভূমিকা ছিল না : মাহমুদুর রহমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে সুখবর ছদ্মবেশে বিহারে ৮ বছর, থাইল্যান্ডে পালাতে গিয়ে বাংলাদেশি গ্রেপ্তার দেশ ছাড়ার আগে যা বলতে চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা ডেঙ্গুতে একদিনে সর্বোচ্চ ১২৯৮ রোগী হাসপাতালে ভর্তি, আরও ৬ জনের প্রাণহানি পার্বত্য অঞ্চলের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে : ধর্ম উপদেষ্টা রাঙ্গামাটিতে ব্যাংক কর্মকর্তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার যখন তারা ডেকেছে গিয়েছি, এটা তো রুটি-রুজির জায়গা ৩ পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রশাসনিক ক্ষমতায় মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তারা

ক্ষমতার দাপটে শতকোটি টাকার মালিক হাজী মুছা মাতাব্বর ও তার অনুসারীরা,দেশ-বিদেশে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৪
  • ২৪২ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- হাজী মুছা মাতাব্বর রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের সদস্য মনোনীত হওয়া পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৫ বছরে এলাকায় একাই ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দেশ ও দেশের বাহিরে কয়েক শ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক বনে যান। দলের সাধারণ সম্পাদক ও রাঙ্গামাটি জেলা পলিষদের সদস্য মনোনীত হওয়ার পর তিনি দলের বাইরে গড়ে তুলেছিলেন ‘মুছা লীগ’। তাঁর বাহিনীর লুটপাট থেকে রক্ষা পায়নি কেউ। সে সময় ক্ষমতার দাপটের কারণে মামলা করারও সাহস পায়নি কেউ বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগিরা।
যৌথবাহিনী ও দুদুকে দেয়া অভিযোগে বলা হয়েছে, হাজী মুছা মাতাব্বর রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের সদস্য মনোনীত পদ লাভের সুযোগে রাঙ্গামাটির পুরা জেলার তথা জেলার ১০ উপজেলার অঘোষিত শাসনকর্তায় পরিণত হন। তাঁর বেপরোয়া আচরণে এলাকায় কায়েম হয় ত্রাসের রাজত্ব। লোকজনের জায়গাজমি ছাড়াও দখলের হাত থেকে রক্ষা পায়নি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্টান,ধর্মীয় প্রতিষ্টান এমনকি সামাজিক,সাংস্কৃতিক সংগঠনও। তাঁর অনুসারী আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাওয়ার উদ্দিনসহ বেশ কয়েক জনের নেতৃত্বে বিভিন্ন এলাকায় গড়ে তোলা হয় ক্যাডার বাহিনী। গত ১৫ বছরে বিভিন্ন এলাকায় গড়ে তোলা ক্যাডার বাহিনী দিয়ে টেন্ডারবাজি, ভর্তি ও নিয়োগবাণিজ্য ছিল ওপেন সিক্রেট। শুধু তাই নয়, রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদ ও বাজার ফান্ডের জমি এবং পাহাড় দখল চলত তার ছত্রছায়ায়। দলীয় কার্যালয়ে পরিণত হয়েছিল বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, রাঙ্গামাটি পৌরসভা, এলজিডি, সড়ক ও জনপদ বিভাগ, গণপূর্ত, পর্যটন, সড়কের টোল, ফরেস্ট, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট ও পাবলিক হেলথসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিণত হয় তার বাণিজ্যিক কেন্দ্রে। পক্ষান্তরে জিম্মি ছিলেন সাধারণ মানুষ। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এসব দুর্নীতির খোলস খুলতে শুরু করেছে পাহাড়ে। সাধারণ মানুষের ও সরকারি জায়গাজমি দখল, মামলার ভয় দেখিয়ে হয়রানিসহ নানা অপকর্ম করে শত শত কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়েছেন মুছা গংরা, মালিক হয়েছেন গাড়ি, বাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমির। জানা যায়, তাদের অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কে তদন্তাধীন।


অভিযোগে আরো দাবী করা হয়েছে, ক্ষমতাবলে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ, সরকারি দপ্তরের কমিশন বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য, টিআর-কাবিখা ও ত্রাণের প্রকল্প হরিলুট করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়েছেন। উপজেলা,পৌর ও ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্যের মাধ্যমে পকেটে ভরেছেন বিপুল অর্থ। ঢাকা,চট্টগ্রামে বাড়িসহ দেশ-বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি। তাঁর কাছে একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে বলে ও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মো. সাইফুল ইসলাম ভুট্টো অভিযোগ করে বলেন, রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক এমপি দীপংকরের দুর্নীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান। এমনকি শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগেই উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির (ওটিএম) মাধ্যমে লোপাট হয়েছে এক হাজার কোটি টাকা। তার মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডে ২০০ কোটি, জেলা পরিষদে ৪০০ কোটি, পাবলিক হেলথে ১০০ কোটি, এলজিডিতে ২০০ কোটি এবং সড়ক ও জনপদ বিভাগে ১০০ কোটি টাকার ওটিএম টেন্ডারের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন ক্ষমতাশীন দলের নেতা-কর্মীরা।


অন্যদিকে রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাভোকেট মো. মামুনুর রশিদ মামুন বলেন, ক্ষমতায় থেকে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা কি-না করেনি। সবখানে তাদের দুর্নীতিতে টইটম্বুর ছিল। দখলে ছিল তাদের স্বর্গরাজ্য। শহরের মানিকছড়ি এলাকায় বিএনপির অফিস দখল করে নিজেদের দলীয় কার্যালয় বানিয়েছেন। রাঙ্গামাটি শহরের ফিসারি বাঁধ এলাকায় কাপ্তাই হ্রদের জমি দখল করে বানিয়েছেন আওয়ামী লীগের জেলা কার্যালয়। শুধু তাই নয়, রাঙ্গামাটির ১০টি উপজেলাও বাদ পড়েনি। ভূমি দখল, টেন্ডারবাজি, ভর্তিবাণিজ্য ও নিয়োগবাণিজ্য ছিল তাদের অবৈধ টাকার উৎস। সাধারণ মানুষ ছিল আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে জিম্মি। পৌরসভার দুর্নীতির কারণে সাধারণ নাগরিকরা ছিলেন সুবিধাবঞ্চিত। এসব ঘটনায় দুর্নীতির মামলা হলেও ক্ষমতার
দাপটে কার্যকর হয়নি। রাঙ্গামাটিতে ঘরে ঘরে সাধারণ শিক্ষিত ছেলেমেয়ে বেকার। কারণ টাকা কিংবা ঘুষ ছাড়া চাকরি পাওয়া অসম্ভব ছিল। এসব ঘুষবাণিজ্যে লিপ্ত ছিল ছোট থেকে শীর্ষ নেতারাও। প্রকাশে ঘুষের লেনদেন চললেও মুখ খুলতে পারতেন না কেউ। প্রতিবাদ করলে হামলা-মামলা হয়রানির শিকার হতেন। দুর্নীতির কারণে রাঙ্গামাটির বিভিন্ন সড়ক, সেতু ও কালভার্টের বেহাল দশা। শোচনীয় অবস্থা রাঙ্গামাটি জেলার জেনারেল হাসপাতালও। স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির কারণে সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত ছিলেন রাঙ্গামাটির সাধারণ মানুষ। একসময় অর্থসংকটে সংসার চালাতেও হিমশিম খাওয়া তার অনুসারীরা কয়েকটি শপিং কমপ্লেক্সসহ অনেক স্থাবর সম্পত্তির মালিক। নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য, পাহাড় ও নদীর অবৈধ বালু উত্তোলন, সরকারি বরাদ্দ লুট, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে মালিক বনেছেন অঢেল সম্পদের। তবে প্রকৃত যারা আওয়ামীলীগের ত্যাগি নেতাকর্মী রয়েছে তারা হয়েছিল বন্চিত। যারা এক সময় রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে, দলের জন্য রক্ত জড়িয়েছে, হামলা মামলার শিকার হয়েছে তারা তাদের নিকট ছিল সব সময় অবহেলতি। গত ৩ ও ৪ আগস্ট তাদের নেতৃত্বে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে বাধা।

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালালে তারা ও আত্মগোপনে চলে যান। গাঢাকা দেয় তাঁর বাহিনীর লোকজনও। ৫ আগস্ট বিক্ষুব্ধ জনতা আওয়ামীলীগ অফিসে অগ্নিসংযোগ করে, তাদের বাসাবাড়িতে হামলাও ভাংচুর করে। মুছা, সাওয়ালসহ তাদের অনেক সহযোগিদের সম্পর্কে এত সব অভিযোগের বিষয়ে তাঁর কোনো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions