সব রেকর্ড ভাঙল খোলাবাজারে ডলারের দাম

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় রবিবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৩
  • ১৬৮ দেখা হয়েছে

ঢাকা: ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালেই আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। এর বাইরে বর্তমানে দেশের ব্যাংকগুলো বাড়তি আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিয়ে প্রবাসীদের পাঠানো ডলার কিনতে পারে। বাড়তি এই প্রণোদনা ঘোষণা পর ডলারের খোলাবাজারে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আজ রাজধানীর দিলকুশা ও পল্টন এলকার কয়েকটি মানি চেঞ্জারে প্রতি ডলার কিনতে খরচ হচ্ছে ১২০ টাকা ৫০ পয়সা। দেশের ইতিহাসে এর আগে এই ঘটনা কখনও ঘটেনি।

রোববার (৫ নভেম্বর) রাজধানীর দিলকুশা ও পল্টন এলকা ঘুরে এসব তথ্য জানা যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, আজ খোলাবাজারে নগদ এক ডলার কিনতে গ্রাহকদের গুনতে হচ্ছে ১২০ টাকা ৫০ পয়সা। যেখানে গত সপ্তাহ আগে এক ডলার ছিল ১১৮ থেকে ১২০ টাকা। তবে গ্রাহক উপস্থিতি অন্যান্য দিনের তুলনায় কম।

রাফী আহসান নামের একজন গ্রাহক বলেন, জরুরী কাজে অল্প কিছু ডলারের প্রয়োজন ছিলো। ব্যাংকে গিয়ে ডলারের ব্যবস্থা করতে পারিনি। এজন্য খোলাবাজারে এসেছিলাম। এখানে ডলারের দাম অনেক বেশি। তাই ডলার ক্রয় না করেই চলে যাচ্ছি।

এর আগে সর্বপ্রথম ২০২২ সালের আগস্টে ডলারের দাম সর্বোচ্চ ১২০ টাকায় উঠেছিলো। এরপর বেশ কয়েক মাস ডলারের দাম কিছুটা কমতির দিকে ছিলো। তবে চলতি বছরের অক্টোবর মাসের শুরুর দিকে খোলাবাজারে ডলারের দাম ১২০ টাকায় ওঠে। তবে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন উচ্চতা ১২০ টাকা ৫০ পয়সা ঠেকেছে ডলারের দাম।

এদিকে বাড়তি প্রণোদনা দেওয়ার জন্য ব্যাংকগুলো বাধ্য নয়। ব্যাংক যদি প্রবাসী আয় কিনতে চায় তাহলে এই প্রণোদনা দিতে পারে। নতুন এই সিদ্ধান্তের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহে। সদ্য সমাপ্ত অক্টোবর মাসে প্রবাসীরা ১৯৭ কোটি ৭৫ লাখ ডলার পাঠিয়েছে। এর আগের মাসে এসেছিল ১৩৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে প্রবাসী আয় বেড়েছে ৬৩ কোটি ডলার।

অর্থনীতিবিদদের মতে, বাড়তি প্রণোদনা দেওয়ার ফলে স্বল্প সময়ের জন্য প্রবাসী আয় কিছুটা বাড়বে। তবে এটি কোন স্থায়ী সমাধান না। তাই সমস্যার পুরোপুরি সমাধান করতে হলে ডলারের দামের পার্থক্য আরও কমাতে হবে। কারণ এখনো ব্যাংকিং চ্যানেলে আসা ডলার ও হুন্ডির মাধ্যমে আসা ডলারের দরের মধ্যে এখনো বড় পার্থক্য রয়েছে।

ব্যাংক বাড়তি আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিলেও প্রতি ডলারের দাম পড়বে প্রায় ১১৬ টাকা। আর অপ্রাতিষ্ঠানিক চ্যানেলে বর্তমানে ডলারের দাম ১২০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এর ফলে বৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠানোয় প্রবাসী বাংলাদেশিরা উৎসাহীত হবেন না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় পাঠান না সৌদি প্রবাসী জাহিদ ইসলাম। তিনি গত ছয় বছর ধরে সৌদির বিভিন্ন খাতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। প্রথম এক বছর তিনি ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশটি থেকে অর্থ পাঠাতেন বলে জানান।

তিনি বলেন, বর্তমানে ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠালে প্রতি রিয়ালে ২৯ টাকা ২৮ পয়সা পাওয়া যায়। আর হুন্ডির মাধ্যমে ৩০ টাকা ৬০ পয়সা পাওয়া যায়। তাই এখন অধিকাংশ সময়ে হুন্ডিতে দেশে অর্থ পাঠাই। কারণ যেখানে বেশি দাম পাবো সেখানেই পাঠাবো। অনেকে কষ্ট করে আয় করতে হচ্ছে। অনেক সময় কাজ থাকে না, তখন খুব কষ্টে জীবন যাপন করতে হয়।

করোনার সময়ে দেশের রিজার্ভ ব্যাপকহারে বাড়তে শুরু করেছিলো। তখন রেকর্ড উচ্চতায় ঠেকেছিলো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। তবে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ব্যবসা-বাণিজ্য ঠিক হতে থাকে। এর ফলে ডলারের চাহিদা ও ব্যয় বাড়তে থাকে। এরপরে তৈরি হয় ডলারের ব্যাপক সংকট। সেই সংকট চলছে প্রায় দুই বছর ধরে। রিজার্ভ থেকে ধারবাহিকভাবে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে রিজার্ভ কমে ২ হাজার কোটি ডলারের ঘরে নেমে এসেছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions