৫ হাজার কোটি লোপাটে এক জুটি

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৪৮ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:-বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির নকল সিগারেট তৈরি এবং নকল ব্যান্ড রোল লাগিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে আসছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটন। তাঁর এ দুর্নীতির সারথি সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। অভিযোগ রয়েছে, বিজয় ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো এবং তারা ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকোর মাধ্যমে মন্ত্রী-প্যানেল মেয়রের জুটি গত চার বছরে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক ফাঁকি দিয়ে লোপাট করেছেন কমপক্ষে ৫ হাজার কোটি টাকা। এ দুর্নীতির অভিযোগ নজরে আসার পর তদন্ত করছে একাধিক সংস্থা। কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট চট্টগ্রামের কমিশনার সৈয়দ মুসফিকুর রহমান বলেন, ‘বিজয় ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো এবং তারা ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকোর নকল সিগারেট তৈরি এবং নকল ব্যান্ড রোল লাগিয়ে সরবরাহের বিষয়টি একাধিক সংস্থা তদন্ত করছে। কিছু ফাইন্ডিংও আছে। তদন্ত শেষ হওয়ার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।’ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের (সিআইসি) ডেপুটি কমিশনার নুরুল বশির বলেন, ‘বিজয় ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো এবং তারা ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো নকল সিগারেট তৈরি এবং নকল ব্যান্ড রোল লাগিয়ে সরবরাহ করার অভিযোগ ওঠার পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি এখন কাজ করছে।’ ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর থেকে পলাতক সাবেক মন্ত্রী নওফেল এবং প্যানেল মেয়র লিটন। তাঁদের মোবাইলও রয়েছে বন্ধ। তাই অভিযোগের বিষয়ে তাঁদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশে নকল সিগারেট তৈরি এবং নকল ব্যান্ড রোল লাগিয়ে বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সিগারেট তৈরির নেতৃত্বে রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটনের মালিকানাধীন দুই প্রতিষ্ঠান বিজয় ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো ও তারা ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো। এর মধ্যে একটি কোম্পানির ৪০ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা রয়েছে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের। অভিযোগ রয়েছে, বিজয় এবং তারা ইন্টারন্যাশনাল কয়েকটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সিগারেট তৈরির কাঁচামাল-অ্যাসিটেট টো, পরিশোধিত তামাক ও সিগারেট মোড়ানোর জন্য কাগজ সংগ্রহ করে। পরে কক্সবাজারের চকরিয়া এবং কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার শিবপুরের কারখানায় নকল সিগারেট তৈরি করে। তাদের কারখানায় তৈরি হওয়া বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সিগারেটে লাগানো হয় নকল ব্যান্ড রোল। নকল এ সিগারেট দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়। বিজয় ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো ও তারা ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো প্রতিষ্ঠার পর থেকে কমপক্ষে ১০ হাজার টন সিগারেট তৈরির কাঁচামাল সংগ্রহ করেছে সিগারেটের কাঁচামাল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে; যা দিয়ে ৫ কোটি সিগারেটের শলাকা তৈরি সম্ভব। এখানে সরকার ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাবদ রাজস্ব হারিয়েছে কমপক্ষে ৩ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া লিটন সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে বিভিন্ন তামাক কোম্পানির সিগারেটের শলাকায় ব্যবহার করা ব্যান্ড রোল সংগ্রহ করে পুনরায় ব্যবহারের অভিযোগও রয়েছে। এ সিন্ডিকেটের সদস্যরা পানের দোকান থেকে সিগারেট কোম্পানির ব্যবহার করা ব্যান্ড রোল সংগ্রহ করেন। এজন্য প্রতি কেজিতে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা দেওয়া হয় দোকানদারকে। পুরনো ব্যান্ড রোল বারবার ব্যবহার করে এ সিন্ডিকেট ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাবদ লোপট করেছে কমপক্ষে ২ হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে বিদেশি ব্র্যান্ডের নকল সিগারেট ও ব্যান্ড রোল জালিয়াতি করে দুই প্রতিষ্ঠান লোপাট করেছে কমপক্ষে ৫ হাজার কোটি টাকা। ওই দুই কোম্পানির মধ্যে বিজয় ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকোর কিছু দলিল বাংলাদেশ প্রতিদিনের হাতে এসেছে। ওই দলিল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসের (আরজেএসসি) তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বিজয় ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি প্রতিষ্ঠা হয়। এ কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন চসিকের সাবেক প্যানেল মেয়র ও নওফেলঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আবদুস সবুর লিটন। কোম্পানিতে শেয়ারের সংখ্যা ১০ হাজার। ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে রয়েছেন লিটনের ভাই আবদুল মান্নান খোকন। তাঁর শেয়ারের সংখ্যা ২ হাজার। ওই কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার হিসেবে রয়েছে নিহান ইনভেস্ট হোল্ডিং লিমিটেডের প্রতিনিধি এমা ক্লেয়ার বার্টন। ওখানে দেওয়া তথ্যে এমার স্বামী হিসেবে মহিবুল হাসান চৌধুরীর নাম দেওয়া হয়েছে। ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে ২০৭ চশমা হিল আবাসিক এলাকা, খুলশী, চট্টগ্রাম; যা মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের পৈতৃকনিবাস। এক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানান, নিহান ইনভেস্ট হোল্ডিং লিমিটেডের ৯৯ শতাংশ শেয়ার হচ্ছে নওফেল ও তাঁর স্ত্রী এমার। বাকি ১ শতাংশ তাঁদের এক পারিবারিক বন্ধুর।

জানা যায়, বিজয় ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো এবং তারা ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো নকল সিগারেট তৈরি এবং নকল ব্যান্ড রোল কারখানার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে বারবার অভিযান পরিচালনা করেছে বিভিন্ন সংস্থা। কিন্তু প্রতিবারই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকেছে দুই প্রতিষ্ঠান। সর্বশেষ ২৫ সেপ্টেম্বর তারা ইন্টারন্যাশনালের কারখানায় যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে ৫৩ হাজার অবৈধ রাজস্ব স্ট্যাম্প এবং ১৩ লাখ ১৯ হাজার ৮২০ শলাকা সিগারেট জব্দ করা হয়। পরে নকল সিগারেট উৎপাদনের অভিযোগে তারা ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো কোম্পানিকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এর আগে ৯ মে শুল্ক গোয়েন্দা তারা ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকোতে অভিযান চালায়। গত ২১ মে শুল্ক গোয়েন্দারা কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় বিজয় ইন্টারন্যাশনালের কার্যালয়ে অভিযান চালান। সেখানে নকল সিগারেট তৈরির মালামাল জব্দ করা হয়। বিজয় ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো এবং তারা ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকোর নকল সিগারেট ও নকল ব্যান্ড রোল লাগিয়ে সিগারেট সরবরাহের অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করে চট্টগ্রাম সিআইডি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে বিজয় ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো ও তারা ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকোর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করা হয়। তদন্তে সাবেক মন্ত্রী নওফেলের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি আমরা জানতে পারি। কিন্তু এক পর্যায়ে অদৃশ্য চাপে থমকে যায় সে তদন্ত। পরে এ ফাইল ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর মামলার কী অবস্থা হয়েছে তা জানি না।’বাংলাদেশ প্রতিদিন

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions