শিরোনাম
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ পুনর্গঠনের দাবিতে রাঙ্গামাটিতে বিক্ষোভ-সমাবেশ ডিসেম্বরে বাংলাদেশ-ভারত বৈঠকের প্রস্তুতি, হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা বিচারের পর আ.লীগকে নির্বাচনে স্বাগত জানানো হবে-টাইম ম্যাগাজিনকে ড. ইউনূস আগামী নির্বাচন নিয়ে দিল্লি ভয়ংকর পরিকল্পনা করছে: জাগপা নেতা রহমত নতুন সিইসি নাসির উদ্দীনের নাম ছিল বিএনপির তালিকায় নাসির উদ্দীনকে সিইসি করে নির্বাচন কমিশন গঠন ‘জনগণ যাতে ক্ষমতার মালিক হতে পারেন তেমন দেশ গড়তে চাই’ রাঙ্গামাটির কাপ্তাই অটল ছাপ্পান্ন আয়োজনে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপন খালেদা জিয়াকে সেনাকুঞ্জে আনতে পেরে আমরা গর্বিত : প্রধান উপদেষ্টা সেন্ট মার্টিনে পর্যটন নিয়ন্ত্রণে কমিটি, অ্যাপস থেকে পাস

দুই মাসে কাটা হলো চারশ লাইটারেজ জাহাজ,অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন সেক্টরে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ, ২০২৩
  • ৪০৯ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:-দেশের অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন রুটে ভয়াবহ রকমের সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভাড়া কমে যাওয়ার পাশাপাশি স্ক্র্যাপ লোহার দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে অভ্যন্তরীণ রুটে পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত লাইটারেজ কেটে ফেলার হিড়িক পড়েছে। গত দুই মাসে অন্তত চার শতাধিক লাইটারেজ জাহাজ কেটে স্ক্র্যাপ বানিয়ে ফেলা হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও পণ্য পরিবহনের জাহাজ পাওয়া যাবে না। একের পর এক জাহাজ কেটে ফেলার ঘটনা রোধে সরকারের পদক্ষেপ নেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে গম, ভুট্টা, ডাল, চিনি, লবণসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য, সার, সিমেন্ট ক্লিংকার, কয়লা, স্টোনসহ রকমারি পণ্য নিয়ে আসা বড় বড় মাদার ভ্যাসেলগুলো চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে না। এসব জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থান করে। বহির্নোঙরে অবস্থানকারী মাদারভ্যাসেল থেকে লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে পণ্য খালাস করে কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন ঘাটসহ দেশের নানা অঞ্চলে সরবরাহ দেয়া হয়।

বিভিন্ন সময় চট্টগ্রাম বন্দরে বার্থিং নেয়া জাহাজের ওভার সাইড থেকেও লাইটারেজ জাহাজে পণ্য খালাস করে দেশের নানা অঞ্চলে সরবরাহ দেয়া হয়। সবকিছু মিলে দেশের পণ্য সরবরাহ নেটওয়ার্ক টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন সেক্টর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার ব্যবস্থা এই সেক্টরের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। লাইটারেজ জাহাজ সেক্টরের সংকট দেশের পণ্য সরবরাহ নেটওয়ার্ক পুরোপুরি ভেঙ্গে দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, শুধু পণ্য সরবরাহ নয়, সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য পরিবহন করার ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে লাইটারেজ জাহাজ সেক্টরের।

সাম্প্রতিক সময়ে এই গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরটি ভয়াবহ রকমের সংকটে পড়েছে। বিশেষ করে দেশের আমদানি কমে যাওয়ায় লাইটারেজ জাহাজ সেক্টর গত বেশ কিছুদিন যাবত সংকটের মাঝে রয়েছে। জাহাজগুলো প্রয়োজনীয় ভাড়া পাচ্ছিল না। গড়ে দুই মাসে এক ট্রিপ ভাড়া না পাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। বসিয়ে বসিয়ে নাবিকদের বেতন ভাতা যোগানোর পাশাপাশি ব্যাংক ঋণের সুদ যোগাতে গিয়ে নাজুক অবস্থায় পড়েন বহু জাহাজ মালিক। গতকালও কর্ণফুলী নদীতে ৬৩০টি জাহাজ অলস ভাসছিল। এরমধ্যে মাত্র ৩৬টি জাহাজ গতকাল ভাড়া পেয়েছে।

জাহাজ নিয়ে দেখা দেয়া এই সংকটের মাঝে দেশে স্ক্র্যাপ লোহার দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। গত বেশ কিছুদিন ধরে ৭৫ হাজার টাকারও বেশি দামে প্রতিটন স্ক্র্যাপ লোহা বিক্রি হচ্ছে। লাইটারেজ জাহাজগুলোর অধিকাংশই বানানো হয়েছে লোহা সস্তা থাকাকালীন। গড়ে ৪০ হাজার টাকার কমে কেনা প্লেট দিয়ে বানানো জাহাজ এখন দ্বিগুন দামে বিক্রি হচ্ছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে একের পর এক জাহাজ কেটে ফেলা হচ্ছে। গত দুই মাসে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন চার শতাধিক জাহাজ কেটে রি রোলিং মিলে লোহা বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। কর্ণফুলী নদীতে অলস ভাসতে থাকা শত শত লাইটারেজ জাহাজের কোন না কোনটিতে প্রায় প্রতিদিনই ক্রেতা বিক্রেতার দরাদরি চলে।

চট্টগ্রামের অতি বনেদি একটি কোম্পানির মালিকানাধী ৮টি লাইটারেজ জাহাজের সবগুলোই কেটে বিক্রি করে ফেলা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কোম্পানি সংশ্লিষ্ট একজন ঠিকাদার জানিয়েছেন, পুরানো জাহাজগুলো বেশ ভালোদামে বিক্রি হয়েছে। গত দুই মাসে চট্টগ্রামের এমভি জুয়েল–৪, এমভি নওরোজ, এমভি মোনা, এমভি নেপচুন, এমভি পোলারিশ, এমভি মার্কারী, এমভি ওয়াটার কিং, প্রাইড অব মীরসরাইসহ অসংখ্য জাহাজ কেটে স্ক্র্যাপ করে ফেলা হয়েছে।

দেশের অভ্যন্তরীণ নৌ রুটে পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত হাজার দুয়েক লাইটারেজ জাহাজের মধ্যে চার শতাধিক কেটে ফেলায় পুরো সেক্টর ভয়াবহ রকমের সংকটে পড়তে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করে একাধিক আমদানিকারক বলেছেন, জাহাজ স্ক্র্যাপ করে জাহাজ মালিকেরা লাভবান হচ্ছেন। সস্তায় কেনা স্ক্র্যাপ এখন চড়াদামে বিক্রি করে পুুঁজি এবং মুনাফা তুলে নিচ্ছেন। কিন্তু প্রয়োজনের সময় পণ্য পরিবহনের কোন জাহাজ পাওয়া যাবে না। তখন এই সেক্টরে আগের মতো সংকট তৈরি হবে। জাহাজ ভাড়া বেড়ে যাবে, বেড়ে যাবে পণ্যের পরিবহন খরচ। যার যোগান দিতে হবে সাধারণ ভোক্তাদের। বিষয়টি নিয়ে ব্যবসায়ীদের মাঝে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে বলেও তারা মন্তব্য করেন।

লাইটারেজ জাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান শেখ জাহাঙ্গীর এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধিকারী শেখ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর জানান, চার শতাধিক জাহাজ কেটে ফেলা হয়েছে। আরো কাটা হবে। আজও ২/৩টি জাহাজ স্ক্র্যাপ করার জন্য বিক্রি হয়েছে। তিনি বলেন, স্ক্র্যাপ লোহার দাম যদি প্রতিটন ১ লাখ টাকায় যায়, তাহলে দেশে আর একটিও লাইটারেজ জাহাজ থাকবে না। বিষয়টি খুবই উদ্বেগের বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এই সেক্টর রক্ষা করার পদক্ষেপ না নিলে একদিন চড়া মূল্য দিতে হবে।

বাংলাদেশ কার্গো ভ্যাসেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি এবং লাইটারেজ জাহাজের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) কনভেনর মোহাম্মদ নুরুল হক বলেন, পরিস্থিতি খুবই খারাপ। একের পর এক জাহাজ কেটে ফেলা হচ্ছে। তিনি বলেন, এই সেক্টরকে রক্ষা করার জন্য যেভাবে পৃষ্ঠপোষকতা কিংবা পদক্ষেপ নেয়া দরকার ছিল তা না করায় সেক্টরটি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এই সেক্টরকে ধ্বংসের জন্য শ্রমিকেরাই সবচেয়ে বেশি দায়ী বলে মন্তব্য করে বিষয়টি নিয়ে এখনিই ভাবতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, দাঁত থাকতে আমরা যেমন দাঁতের মর্যাদা দিতে চাইনা, তেমনি এই সেক্টর থাকায় আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি না। ধ্বংস হয়ে গেলেই কেবল বুঝা যাবে যে আমাদের কী সম্পদ আমরা নষ্ট করলাম। তিনি সরকারকে বিষয়টি নিয়ে জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান। আজাদী

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions