২০ হাজার কোটি টাকা লোপাটের অনুসন্ধানে স্থবিরতা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৬৯ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা লোপাটের অনুসন্ধান শুরু করা হয়েছিল। একাধিক মামলাও হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির অর্থ আত্মসাতের ঘটনায়। মামলার তদন্ত ও আরও অনুসন্ধানের কাজ চলমান। কিন্তু অনুসন্ধান ও তদন্ত দুটোই থমকে গেছে। দুদকের বীমা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান শাখার আওতাধীন এমন আরও বেশ কিছু অনুসন্ধান-তদন্ত থমকে রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন ওই শাখায় অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী পর্যাপ্ত লোকবল নেই। মূল অর্গানোগ্রামের অর্ধেকেরও বেশি সংখ্যক কর্মকর্তা দিয়ে চলছে বীমা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির শাখা। এ নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন দুদকের একাধিক কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, যে ক’জন দিয়ে শাখার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে তাদেরও অন্য শাখার অনুসন্ধান ও দায়িত্ব দিয়ে রাখা হয়েছে। ফলে এদিক-ওদিক কোনোটিই সঠিক প্রক্রিয়ায় করা হচ্ছে না।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি নিয়ে কাজ করা দুদকের শাখাটি একজন পরিচালকের নেতৃত্বে ৩৭ জন কর্মকর্তা অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করার কথা। কিন্তু কাগজে কলমে এই মুহূর্তে বিভিন্ন আর্থিক দুর্নীতির অনুসন্ধান ও তদন্তের দায়িত্বে রয়েছেন মাত্র আটজন। এই আটজনের মধ্যে সবাইকেই দুদকের অন্য শাখার অনুসন্ধানের দায়িত্ব দিয়ে রাখা হয়েছে।

সূত্র বলছে, অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী- একজন পরিচালক, দশ জন উপ-পরিচালক, ১৬ জন সহকারী পরিচালক, দশজন উপ-সহকারী পরিচালক মিলিয়ে বীমা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান শাখা কার্যক্রম পরিচালনার কথা। কিন্তু দুদকের ওই শাখায় বর্তমানে দায়িত্বে রয়েছেন একজন পরিচালক, তিনজন উপ-পরিচালক, দুজন সহকারী পরিচালক এবং দুজন উপ-সহকারী পরিচালক। এর মধ্যে তিন উপ-পরিচালকের মধ্যে দুজনকে সম্প্রতি অন্য শাখায় বদলি করা হয়েছে। ফলে আনুষ্ঠানিকভাবে পাঁচ জন মিলে এই বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান শাখাটির কার্যক্রম চলছে।

দুদকের কর্মকর্তারা জানান, সংশ্লিষ্ট শাখাটিতে বাংলাদেশের আর্থিক খাতের বড় বড় অনিয়মের অনুসন্ধান ও তদন্ত চলমান। যেখানে বর্তমানে অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা লোপাটের অনুসন্ধান চলছে সেখানে এত কম সংখ্যক কর্মকর্তা থাকলে সঠিক সময়ে তদন্ত কাজ শেষ হবে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, এটা বিশাল এক কর্মযজ্ঞ। যেখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুসন্ধানগুলো চলছে সেখানে এত কম কর্মকর্তা দিয়ে হয় না। অর্গানোগ্রামের অর্ধেক সংখ্যক কর্মকর্তাও এই শাখার দায়িত্বে নেই। সময়মতো অনুসন্ধান ও তদন্ত শেষ না করতে পারলে বীমা ও আর্থিক খাতে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত মাফিয়ারা যেকোনো সময় পালিয়ে যেতে পারেন। ফলে তাদের আইনের আওতায় আনাটাও কঠিন হয়ে পড়বে। সঙ্গে লোপাটকারীরা অর্থ পাচার করে থাকলে সেটিও ধরা পড়বে না।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, দুদকের অনেক মামলায় আসামিরা গাঢাকা দিয়েছেন। কেউ কেউ হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছেন বিদেশে। এদের আদালত সাজা দিলেও তা ভোগ করানোর সুযোগ নেই বললেই চলে। আর এসব আসামিরা পালিয়ে চলে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে যায় দুদকেরই ধীরগতির কার্যক্রমের কারণে। দ্রুত অনুসন্ধান ও তদন্ত শেষ করতে পারলে কোনো আসামিই শাস্তির হাত থেকে রেহাই পায় না।

দুদক সূত্র ও বিভিন্ন সময়ের অনুসন্ধান সূত্র বলছে, বর্তমানে সংস্থাটির বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান শাখায় অন্তত বিশ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান শেষে মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ফারইস্ট ইসলামী ব্যাংকের ২ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা লোপাটের অনুসন্ধান চলছে ২০২৩ সালের শুরু থেকে। এর মধ্যে জমি কেনার নামে ১১৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী তাসলিমা ইসলামসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে গত বছরের ৭ই সেপ্টেম্বর। একই বছরের ২৩শে মে ফারইস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হেমায়েত উল্যাহর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিটির ৩৩টি ব্যাংক হিসাব থেকে ৩৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের টাকা আত্মসাতের বিষয়ে আরও কয়েকটি অনুসন্ধান চলমান রয়েছে দুদকে। পাশাপাশি গত বছর দায়ের হওয়া মামলাগুলো তদন্তাধীন রয়েছে।

এদিকে ২০২০ সালে শুরু হয়েছিল পিপলস লিজিং, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগে প্রশান্ত কুমার হালদারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান। এসব অনুসন্ধান করতে গিয়ে এফএএস ফিন্যান্স, প্রাইম ফিন্যান্সসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে আরও পাঁচ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পায় দুদক। ইতিমধ্যে আত্মসাতের অভিযোগে দুই ডজনের মতো মামলা করেছে দুদক। মামলার পর তদন্ত চলাকালে এস আলম গ্রুপের সম্পৃক্ততার প্রমাণও পেয়েছে সংস্থাটি। কিন্তু পর্যাপ্ত কর্মকর্তার অভাবে মামলাগুলো ঝুলেই রয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স করপোরেশন লিমিটেডের (বিআইএফসি) দশ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বিকল্প ধারা বাংলাদেশের সাবেক মহাসচিব ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মেজর (অব.) আবদুল মান্নানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অন্তত ১৩টি মামলা দায়ের করেছে দুদক। গত এক বছরে এই মামলাগুলো দায়ের করা হয়। এসব মামলা বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। তবে শাখায় পর্যাপ্ত কর্মকর্তা না থাকায় এসব তদন্তেও অনেকটা স্থবিরতা নেমে এসেছে।

অন্যদিকে উত্তরা ফিন্যান্সের তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগেও একাধিক মামলা করেছে দুদক। এ বিষয়ে অনুসন্ধানও চলমান সংস্থাটিতে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন এসব অনুসন্ধান ও তদন্ত কোনোটাই ঠিকভাবে চলছে না এ মুহূর্তে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ই আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সংস্থাটির কার্যক্রমের রূপরেখা বদলে যায়। তখন থেকেই কমিশন লোক দেখানো কাজের অংশ হিসেবে বিগত সরকারের এমপি-মন্ত্রীদের নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে। ফলে চলমান অনেক গুরুত্বপূর্ণ অনুসন্ধানই থমকে গেছে। ফলে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটকারীদের আইনের আওতায় আনার বিষয়টি নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।
একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখায় কর্মকর্তা সংকটের বিষয়ে জানতে দুদকের মহাপরিচালক (প্রশাসন) শাহরিয়াজের সঙ্গে কথা হলে তিনি বক্তব্য দিতে রাজি হননি। শাহরিয়াজ মানবজমিনকে বলেন, এ ব্যাপারে আমার কোনো বক্তব্য নেই। এ সময় জনসংযোগ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।

এ বিষয়ে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, এটা তো প্রশাসনিক ব্যাপার। আমার কিছু করণীয় নেই। আমি বিষয়টি সচিব মহোদয়কে অবহিত করবো।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions