শিরোনাম
গণমাধ্যমকর্মীরা স্বাধীন ও স্বচ্ছ হতে হবে- ওয়াদুদ ভূইয়া আগামীকাল সংবর্ধিত হচ্ছে সাফজয়ী পাহাড়ের ৫নারী ফুটবলার যুক্তরাষ্ট্রে আদানির বিরুদ্ধে মামলা, বিদ্যুৎ চুক্তিতে সুবিধা পেতে পারে বাংলাদেশ সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের শপথ রোববার দুর্নীতি প্রতিরোধে সাবেক লে. জেনারেল মতিউর রহমানের মত কর্মকর্তার প্রয়োজন,আ’লীগ সরকারের দুর্নীতিবাজদের রক্ষায় মরিয়া একাধিক চক্র গুমের সঙ্গে জড়িতরা রাজনীতিতে ফিরতে পারবে না : প্রেস সচিব খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের নবগঠিত কমিটি’র সভাপতি তরুণ কুমার ভট্টাচার্য, সম্পাদক এইচ এম প্রফুল্ল ও সাংগঠনিক দিদারুল আলম নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আইসিসির গ্রেফতারি পরোয়ানা ৫ দেশে গমনেচ্ছু বাংলাদেশিদের জন্য সতর্কতা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা নিয়ে ড. ইউনূসের বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে আরএসএফ

‘মারা গেলে আমার লাশ ফেলে যাইস না’

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৪
  • ৭৫ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- পঁচিশ বছরের টগবগে যুবক পারভেজ হাওলাদার। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট। পরিবারের আদরের ছেলেটির স্বপ্ন ছিল বিদেশ যাবে। তারপর একটা সুন্দর বাড়ি করবে।
সেই বাড়িতে মাকে নিয়ে থাকবে। তবে বাড়ি করতে না পারলেও পারভেজের নামে একটি সড়কের নামকরণ করেছে এলাকাবাসী। কারণ বাড়ি করার স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিয়েছে একটি বুলেট। নিভে গেছে পারভেজের জীবন প্রদীপ। কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেয়া পারভেজ শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মাত্র দুই ঘণ্টা আগে মাথায় বুলেটবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। এরআগে সকালে ফেসবুকে সে তার আইডি থেকে শেষ স্ট্যাটাস দেয় ‘আল্লাহ তুমি ভালো পরিকল্পনাকারী, আল্লাহ তুমি বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের জীবনের খেয়াল রাইখো।

দেশের জন্য দশের জন্য যেইটা ভালো হয় তাই কইরো আল্লাহ। আজকে যেন কোনো মায়ের কোল খালি না হয়। আমিন’। আর আন্দোলনের মাঠে বন্ধুদের বলেছিল, ‘আমি মারা গেলে আমার লাশ ফেলে যাইস না, পরিবারের কাছে লাশ পৌঁছে দিস, বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে যেন আমার দাফন না হয়’।

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের নিমাকাইশারী বাজার এলাকায় জনৈক রমজানদের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকতো পারভেজ। কথা হয় পারভেজের পরিবার ও তার বন্ধুদের সঙ্গে।
তাদের দেয়া তথ্যমতে, সানারপাড় শেখ মোরতোজা আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসপি পাশ করার পর আর্থিক সংকটের কারণে লেখা-পড়া আর করতে পারেনি পারভেজ। তারপরও শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন তাকে ঘরে থাকতে দেয়নি। পরিবারের সকল বাধা উপেক্ষা করে আন্দোলনে যোগ দেয় সে। ৩ বোন ২ ভাইয়ের মধ্যে সে ছোট। তার সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেয় তার বড় বোন সেলিনা আক্তার, মেঝ বোন রোকসানা আক্তার ও ভাগ্নি সিদ্বেশ্বরী ডিগ্রি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী মাহমুদা আক্তার। ৪ঠা আগস্ট একের পর এক নিহতের ঘটনায় পারভেজ বোন আর ভাগ্নিকে আন্দোলনে যেতে নিষেধ করে। কিন্তু বাইরে নাস্তা খেতে যাই বলে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের মার্চ টু ঢাকা ঘোষিত কর্মসূচিতে যোগ দিতে ৫ই আগস্ট সকাল সাড়ে ৯টায় ঘর থেকে বেরিয়ে যায় পারভেজ। মহসিন, শাকিলসহ অনেকের সঙ্গে মৌচাক থেকে পায়ে হেঁটে রওনা হয় তারা। প্রায় ৫ কিলোমিটার পথ হেটে কাজলা এলাকায় পুলিশের বাঁধায় পড়ে তারা। সেখানে হাজার হাজার ছাত্র-জনতার সঙ্গে বিক্ষোভ করে পারভেজরা। দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে টোল প্লাজার সামনে একটি গুলি এসে পারভেজের বাম চোয়াল ভেদ করে পিছনে ঘাড় দিয়ে বেরিয়ে যায়। মুহূর্তেই লুটিয়ে পড়ে সে। মোহসিন ও শাকিল সহ কয়েকজন দ্রুত তাকে উদ্ধার করে পাশে সালমান হসপিটালে নিয়ে যায়। সেখানে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎক পারভেকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে তার লাশ বাসায় নিয়ে আসা হয়। ওইদিনই আছরের নামাজের পর বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে নামাজের জানাজা শেষে শুকুরসী কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়। পরদিন এলাকাবাসী পারভেজের নামে নিমাকাশারী বাজার রোডের নাম করণ করেন‘ শহীদ পারভেজ রোড’।

পারভেজের বড় বোন সেলিনা আক্তার বলেন, আমি আমার বোন রোকসানা ও আমার মেয়ে মাহমুদা আক্তার কোটা সংস্কার আন্দোলনে সাইনবোর্ড এলাকায় কয়েকদিন গিয়েছি। যখন একের পর নিহত হচ্ছিল ছাত্ররা। তখন পারভেজ বলে, তোমরা বাসায় থাকো। গুলি খেয়ে মরে গেলে তো এক কথা। আর না মরলে পঙ্গু হয়ে গেলে তো তোমার মেয়ের বিয়ে দিতে পারবা না। তার ভবিষ্যত নষ্ট হয়ে যাবে। তখন তাকে বলি ঠিক আছে আমরা যখন আন্দোলনে যাবো না তাহলে তুমিও যেতে পারবে না। সে বলে আচ্ছা। কিন্তু সকালে নাস্তা খেতে যাওয়ার কথা বলে বেরিয়ে যায়। সকাল ১০টার দিকে ফোন দিলে বলে ঠিক আছি কোন চিন্তা করো না। বলি সাবধানে থাকিস। বলে কোন সমস্যা নাই। আবার ১১টার দিকে ফোন দিলে বলে, ঠিক আছি। সাড়ে ১১টায় বন্ধু মহসিনকে বলে‘ ‘আমি মারা গেলে আমার লাশ ফেলে যাইস না, পরিবারের কাছে লাশ পৌছে দিস, বেওয়ারিশ ভাবে যেন আমার দাফন না হয়’। ১২টার পর শাকিল ফোন করে বলে পারভেজ মারা গেছে।

কান্নাজড়িত কন্ঠে সেলিনা আক্তার বলেন, পারভেজ বলতো আমি ছাত্র ছিলাম। এখন ছাত্রদের আন্দোলনে কি ঘরে বসে থাকা যায়। জীবন দিয়ে হলেও তাদের সঙ্গে আছি। আর্থিক সংকটের কারণে বেশিদূর পড়তে পারেনি সে। এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডারের দোকানে কাজ করে সংসারে কিছুটা সহায়তা করতো। আর বলতো আমাকে বিদেশ পাঠিয়ে দাও। বিদেশ গিয়ে এই নিমাইকাশারীতে একটা বাড়ি করবো। সবাইকে নিয়ে সেই বাড়িতে থাকবো। বলতাম এতো টাকা কই পাবো। ধৈর্য ধরো, টাকা যোগাড় হলে বিদেশ পাঠাবোনে। সে বলতো ‘স্বপ্ন দেখতে সমস্যা নাই। স্বপ্ন পুরন করবো আল্লাহ’। কিন্তু ভাইয়ের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেলো।
পারভেজের মা হাসি বেগম বলেন, গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি দিঘীরপাড় এলাকায় নদী ভাঙ্গায় সব শেষ হয়ে গেছে। ৩৫-৪০ বছল আগে গ্রাম থেকে চলে আসি। স্বামী মজিবুর রহমান ঢাকার সদরঘাটে ফেরি করে। কালিগঞ্জের চরে আশ্রয় নেই। এরপর পারভেজের বয়স যখন ৬ বছর তখন নিমাইকাশারী এলাকায় ভাড়ায় বাসায় উঠি। গ্রামে কিছুই নাই। তাই এখানেই ভোটার হই। ১৪ মাস আগে পারভেজের বাবা মারা যায়। সবার ছোট পারভেজ অনেক আদরের সন্তান ছিল আমার। মাঝে মাঝেই আমার হাতে খেত। ৪ আগস্ট রাতেই নিজ হাতে খাওয়াইছি। আজ আমার বাবা (পারভেজ) নাই। কান্নায় ভেঙে পড়েন হাসি বেগম। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার কিছু চাওয়ার নাই। আমার ছেলেকে যেন মানুষ ভুলে না যায়। সে দেশের মানুষের জন্য শহীদ হয়েছে। সরকার যেন তার নাম শহীদ হিসেবে লিখে রাখে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions