ডেস্ক রির্পোট:- ৯ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের সঙ্গে রাজধানীর রিকশাচালকরাও একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। গত কয়েকদিন ধরেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রিকশা থামিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে চালকদের স্লোগান দিতে দেখা গেছে। আজ শনিবারও রাজধানীতে এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে।
শনিবার ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় কেউ রিকশা থামিয়ে, কেউ রিকশার উপর দাঁড়িয়ে, কেউ মাথায় পতাকা আর হাতে লাল রঙের কাপড় বেঁধে চালকদের স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
ইতোমধ্যে রিকশাচালকদের বেশকিছু ছবি ও ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। এসব ভিডিওতে দেখা গেছে, রিকশাচালকরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারাও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে থাকবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছেন।
এছাড়া সাদা গেঞ্জি আর লুঙ্গি পরা একজন রিকশাচালকের ছবি নেটদুনিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ছবিটিতে দেখে যাচ্ছে, ওই রিকশাচালকের কপালে লাল-সবুজের পতাকা বাঁধা। রিকশায় দাঁড়িয়ে তিনি আন্দোলনকারীদের স্যালুট জানাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছবিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বর এলাকার। হাজার হাজার ছাত্র-জনতা যখন মিছিল নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তিনি আন্দোলনকারীদের অভিবাদন জানিয়ে আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেন। তবে তার পরিচয় জানা যায়নি।
এদিকে শনিবার দুপুরে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সামনের রাস্তায় রিকশাচালকরা অবস্থান নিয়ে সরকারবিরোধী নানা স্লোগান দেন। কপালে লাল কাপড় আর হাতে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে স্লোগান দেন তারা।
এ সময় এক রিকশাচালক বলেন, ‘আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গ্যাছে। তাই সারাদিন রিকশা চালায়া রুজি না করে মাঠে নেমেছি৷ আমাগো ছেলেগরে এভাবে মেরে তারা কীভাবে গদিতে থাকে?’
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলা ও হত্যার প্রতিবাদসহ পূর্বঘোষিত ৯ দফা দাবিতে আজ সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এছাড়া দেশব্যাপী রোববার থেকে ‘সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন’র ডাক দেওয়া হয়েছে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ঘোষিত ৯ দফা হলো:
১। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছাত্র-নাগরিক হত্যার দায় নিয়ে জাতির কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
২। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দলীয় ক্যাডার এবং সন্ত্রাসী কর্তৃক ছাত্র-নাগরিক হত্যার দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে মন্ত্রিপরিষদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। ইন্টারনেট শাটডাউন করে দেশে ডিজিটাল ক্র্যাকডাউন করায় তথ্য প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলককে পদত্যাগ করতে হবে। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় শহিদ শিক্ষার্থী এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদেরকে ড্রাগ অ্যাডিক্ট বলে কুরুচিপূর্ণ ও মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে এবং আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করায় তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতকে পদত্যাগ করতে হবে।
৩। ঢাকাসহ যত জায়গায় ছাত্র-নাগরিক শহিদ হয়েছে সেখানকার ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার ও পুলিশ সুপারদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে হবে।
৪। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে ক্যাম্পাসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা হয়েছে, প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও প্রক্টরদের পদত্যাগ করতে হবে।
৫। যে পুলিশ-বিজিবি-র্যাব ও সেনা সদস্যরা শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি করেছে, ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ যেসব সন্ত্রাসীরা শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলা চালিয়েছে এবং যেসব নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাদের নিরস্ত্র ছাত্র-নাগরিকদের ওপর গুলি করার নির্দেশ দিয়েছে তাদের আটক করে হত্যা মামলা দায়ের করতে হবে ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে।
৬। দেশব্যাপী যেসব ছাত্র-নাগরিক শহিদ এবং আহত হয়েছে তাদের পরিবারকে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৭। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র সংগঠনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে দ্রুততম সময়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ছাত্র সংসদ কার্যকর করতে হবে।
৮। অবিলম্বে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হল খুলে দিতে হবে। কারফিউ তুলে নিয়ে সারাদেশের সমস্ত ক্যাম্পাসে মোতায়েন করা পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সোয়াট এবং আর্মি তুলে নিতে হবে।
৯। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কোনো ধরনের হয়রানি করা হবে না এই মর্মে অঙ্গীকার করতে হবে। ইতোমধ্যে গণগ্রেফতার ও পুলিশি হয়রানির শিকার সমন্বয়ক ও ছাত্র-নাগরিকদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে ও সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।