শিরোনাম
গণমাধ্যমকর্মীরা স্বাধীন ও স্বচ্ছ হতে হবে- ওয়াদুদ ভূইয়া আগামীকাল সংবর্ধিত হচ্ছে সাফজয়ী পাহাড়ের ৫নারী ফুটবলার যুক্তরাষ্ট্রে আদানির বিরুদ্ধে মামলা, বিদ্যুৎ চুক্তিতে সুবিধা পেতে পারে বাংলাদেশ সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের শপথ রোববার দুর্নীতি প্রতিরোধে সাবেক লে. জেনারেল মতিউর রহমানের মত কর্মকর্তার প্রয়োজন,আ’লীগ সরকারের দুর্নীতিবাজদের রক্ষায় মরিয়া একাধিক চক্র গুমের সঙ্গে জড়িতরা রাজনীতিতে ফিরতে পারবে না : প্রেস সচিব খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের নবগঠিত কমিটি’র সভাপতি তরুণ কুমার ভট্টাচার্য, সম্পাদক এইচ এম প্রফুল্ল ও সাংগঠনিক দিদারুল আলম নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আইসিসির গ্রেফতারি পরোয়ানা ৫ দেশে গমনেচ্ছু বাংলাদেশিদের জন্য সতর্কতা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা নিয়ে ড. ইউনূসের বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে আরএসএফ

এক ইন্টার্ন চিকিৎসকের বর্ণনায় ঢাকা মেডিকেলের ছয় দিন

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শনিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৪
  • ১২০ দেখা হয়েছে

কোটা সংস্কার আন্দোলনে আহত রোগীদের দিনরাত সেবা দিয়ে চলেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ দায়িত্বরত স্বাস্থ্যকর্মীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইন্টার্ন চিকিৎসক শোনাচ্ছেন ছয় দিনের অভিজ্ঞতা।

ডেস্ক রির্পোট:- অন্য দিনের মতোই নিয়মিত ডিউটি করছিলাম। হঠাৎ জানতে পেলাম, আমারই এক ব্যাচমেট কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। ক্যাজুয়ালটি বিভাগে ছুটে গেলাম। চেনা ক্যাজুয়ালটিতে নিজের ব্যাচমেটকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। তার মাথায় সাত-সাতটি সেলাই পড়ল। সিটি স্ক্যান করে দেখা গেল, একটা ডিপ্রেসড ফ্র্যাকচার হয়েছে। আরও কী হতে পারত, যখন ভাবছি, সেই মুহূর্তে ক্যাজুয়ালটির ছোট্ট রুমটায় এক এক করে আহত মানুষ আসতে লাগল। কারও হাতে আঘাত, পায়ে জখম, মাথায়-মুখে রক্ত আর রক্ত। ক্যাজুয়ালটির সবাই মিলে লেগে পড়লাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝলাম এ-ই শেষ নয়। ক্রমাগত আহত মানুষ আসছে। একে একে আরও ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা এসে যোগ দিলেন। কেউ রক্ত জোগাড় করছেন, কেউ ইনভেস্টিগেশন লিখছেন, কেউবা স্টিচ দিচ্ছেন, ড্রেসিং করছেন।

আরও খানিক পর আহত আনসার, পুলিশ সদস্যরাও আসতে থাকলেন। রাত ১০টা পর্যন্ত শ্বাস ফেলার সময়টুকুও পেলাম না। আস্তে আস্তে আহত মানুষের সংখ্যা কমতে থাকল। আমরা সবাই ততক্ষণে অত্যন্ত ক্লান্ত। অবিশ্রান্ত কাজের কারণে খাওয়ারও সময় হয়নি। তাই কেউ খেতে গেল, কেউ একটু বিশ্রাম নিতে ডক্টরস রুমে চলে গেল। আমি ভয়ার্ত চোখে দরজার দিকে চেয়ে ছিলাম। ক্লান্তশ্রান্ত শরীরে রাতটা কেটে গেল।
১৬ জুলাই ২০২৪, মঙ্গলবার

সারা রাত জেগে ছিলাম। বিকেলে ঘুম ভাঙল। কয়েক সেকেন্ড পরেই মনে হলো, না জানি আজ ক্যাজুয়ালটির কী অবস্থা। একজন জানালেন, আজকের অবস্থা গতকালের মতো নয়। রংপুরে আন্দোলন করতে গিয়ে আবু সাঈদ নামের এক ছাত্র মারা গেছেন। আমাদের জুনিয়ররাও ফুঁসে উঠেছে।
১৭ জুলাই ২০২৪, বুধবার

নিয়মিত ডিউটিতে ক্যাজুয়ালটিতে হাজির হলাম। মনে মনে দোয়া পড়ছিলাম, সেই রাতের মতো রাত যেন আর না আসে। আহত অনেকে এলেন, তবে সংখ্যায় আজ কম। তবে ১৫ জুলাইয়ের অবস্থা না দেখলে এই আহত ব্যক্তিদের দেখেই হয়তো আঁতকে উঠতাম।

১৮ জুলাই ২০২৪, বৃহস্পতিবার

বৃহস্পতিবারের ডিউটি বরাবরই বিশ্রামহীন যায়। সকালের নাশতা করে না গেলে বিকেলের আগে আর খাওয়ার সুযোগ হয় না। তাই সকালে ক্যাজুয়ালটিতে যাওয়ার আগেই কোনোমতে নাশতা সেরে নিলাম।

আজ কমপ্লিট শাটডাউন। সকালে পরিস্থিতি ঠান্ডাই ছিল। দুপুর নামতে নামতে আর ঠান্ডা থাকল না। সময়ের সমানুপাতিক হারে আহত লোকজন আসতে থাকল। এবার শুধু আহত নয়, মৃতদেহও দেখলাম। এক রোগী এসে আউটডোরের টিকিটটি আমাকে দিল। রক্তমাখা সেই টিকিটে লেখা ‘স্প্লিন্টার ইনজুরি’। রোগীর পিঠ খুলে দেখলাম, ছোট ছোট ছররা পিঠ ভেদ করে ১২ থেকে ১৩টি ক্ষত তৈরি করেছে। পিলেট বা স্প্লিন্টার ইনজুরি নিয়ে তো শুধু পড়েছি। তা–ই বা কতটুকু মনে আছে? সঙ্গে সঙ্গে দৌড় দিয়ে সিনিয়র এক আপুকে খুঁজে পেলাম। আপু শিখিয়ে দিলেন। অবাক হয়ে জানলাম, এই ছররাগুলো নাকি তার শরীরেই থেকে যাবে সারা জীবন। এগুলো নাকি রুপালি গোল গোল বলের মতো। বের করতে গেলেই পিছলে মাসল বা অন্যখানে চলে যায়। কোনোভাবেই ধরা যায় না।

রোগীকে ড্রেসিং করে ওষুধপথ্য লিখে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলাম, বাইরের অবস্থা কেমন?

রোগী থমথমে গলায় বললেন, ‘বাইরের অবস্থা ভালো নয়।’

হঠাৎ মনে হলো, কাঁদানে গ্যাস আর বম্ব ব্লাস্ট ইনজুরির চিকিৎসার বিষয়টি তো অনেক দিন আগে পড়েছিলাম। বইয়ের পিডিএফ খুলে একটু চোখ বুলিয়ে নিলাম। দু–তিন মিনিট পরই রুমে ঢুকল এক রোগী। বীভৎস চেহারা। এত বেশি বীভৎস যে দেখে শুধু আমিই নই, আশপাশের সবাই বুঝে গেলাম, আজ খারাপ কিছু হতে চলেছে। লোকটির মাথার পেছনে থেকে গুলি লেগে চোখ ফুটো করে বেরিয়ে গেছে। একটি চোখ বাইরে বেরোনো। পুরো মুখ কদাকার ফুলে আছে। নাক–মুখ দিয়ে ক্রমাগত ফেনা আসছে। স্যাচুরেশন (অক্সিজেনের মাত্রা) দেখলাম মাত্র ৫৬ শতাংশ। সঙ্গে সঙ্গে ওসেকে (ওয়ান–স্টপ জরুরি সেবা) নিয়ে গিয়ে রোগী ইনটিউবেট (রোগী নিজে যখন দম নিতে পারেন না, তখন মেশিনে দিতে হয়) করা হলো।

ক্রমাগত আসতে থাকল মাথায় গুলি, পায়ে গুলি লেগে এক পা উড়ে যাওয়া রোগী, হাতে গুলি লেগে মেজর আর্টারি-ভেইন দিয়ে গলগল করে রক্তপাত হওয়া রোগী, বুকে ছররা গুলি লেগে হিমোথোরাক্স, নিউমোথোরাক্সের রোগী, কপালের ঠিক মাঝখান দিয়ে ড্যাগার ঢোকানো রোগী, পেটের মধ্যে গুলি লেগে কিডনি ছিন্নভিন্ন হয়ে আসা রোগী, বাঁ পায়ের বাইরের দিকে গুলি লেগে সেটা ডান পায়ের বাইরের দিক থেকে বের হয়ে যাওয়া রোগী, পশ্চাদ্দেশে গ্লুটিয়াল রিজিওনে গুলি লেগে সামনের দিক থেকে ব্লাডার, ইউরেটার সব ছেদ করে বের হয়ে আসা রোগী আর নিহত মানুষ।

এই এক দিনে মনে হলো ১০ বছরের সমান হতাহত দেখে ফেলেছি। কেমন এক অসাড়তা ভর করতে লাগল। রক্তমাখা গায়ে হাত দিতে আর হাত কাঁপল না, পায়ের মাংসের এক ফালি মাত্র অবশিষ্ট আছে, এমন পা ড্রেসিং করতেও আর ভয় লাগল না।

হঠাৎ খবর পেলাম, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়েছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এ খবর পাওয়ার কিছুক্ষণের পর চারপাশের ভিড় অত্যধিক বেড়ে গেল। স্বজন হারানোর আহাজারিতে স্তব্ধ হয়ে রইলাম। আরও ইন্টার্ন জোগাড় করে জলদি রেড ক্রিসেন্টে ফোন দিলাম। তাদের চিকিৎসক লাগলে আমরা তৈরি আছি জানিয়ে রাখলাম। একদলকে ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত জোগাড় করার দায়িত্ব দেওয়া হলো, আরেক দলকে স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়া হলো, আরেক দলকে ব্লাড গ্রুপিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হলো। আমরা আরেক দল ক্যাজুয়ালটি রুমে দায়িত্ব থাকলাম। ডিরেক্টরের কাছ থেকে আদেশ এল সব ইন্টার্নকে ক্যাজুয়ালটিতে সহযোগিতা করার।
১৯ জুলাই ২০২৪, শুক্রবার

সকাল সকাল ক্যাজুয়ালটিতে চলে এলাম। দেখি গানশট ইনজুরির (গুলিতে জখম) খাতায় দুটি নাম উঠে গেছে। দিনরাতই শুধু গানশট ইনজুরির রোগী দেখলাম। খুব সহজ হিসাব শিখে গেলাম। এন্ট্রি উন্ড, এক্সিট উন্ড (ক্ষত প্রবেশমুখ, নির্গমন মুখ) খুঁজে পেলে আর রোগী ভাইটালি স্ট্যাবল (শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল) থাকলে ড্রেসিং করে বাড়ি পাঠিয়ে দেব। এক্সিট উন্ড খুঁজে না পেলে এক্স-রে করে ভর্তি করে নেব। কিন্তু গতকালই তো ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে উপচে পড়া ভিড় দেখেছি। আজকের এই রোগীদের কোথায় ভর্তি দেব, এ নিয়েই আমাদের মধ্যে কথাবার্তা চলতে থাকল। ইতিমধ্যেই ডিরেক্টর স্যারের অর্ডার এল, গানশট উন্ডের রোগীদের জন্য সার্জারি ওয়ার্ডে ৫টি করে বেড খালি করে ফেলো। আমরা এরপর সার্জারিতে ভর্তি দিতে থাকলাম।

ওয়ার্ডের চিকিৎসকদের ওপরে চাপ অসহনীয় হয়ে গেলে আমরা নতুন বুদ্ধি বের করলাম। সব রোগী তাৎক্ষণিক চিকিৎসাসহ সব কাগজপত্র ক্যাজুয়ালটি থেকেই পেয়ে যাবে। আমরা ইন্টার্নরা কেউ ব্লাড রিকুইজিশন লিখলাম, কেউ এক্স-রে রিকুইজিশন, কেউ অর্ডার শিট, কেউ ইনজুরি নোট, কেউবা রোগী রিসিভিংয়ের কাজ করতে থাকল। গাদায় গাদায় কাগজে আমরা সব রিকুইজিশন, অর্ডার শিট তৈরি করে রাখলাম, যাতে রোগী আসার পর বিন্দুমাত্র সময় আর অপচয় না হয়। শুনলাম, শুধু ক্যাজুয়ালটির অপারেশন থিয়েটারে কুলানো যাচ্ছে না। তাই আমাদের নিয়মিত সব অস্ত্রোপচার বন্ধ রেখে ওটি রুমগুলোতেও আহত রোগীদের নেওয়া হলো। বড় স্যাররা সবাই অস্ত্রোপচার করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।

রোগী আসা কিন্তু কমছে না। দুটি স্ট্রেচারে দুই রোগী বুক চাপড়াতে চাপড়াতে সজোরে চিৎকার করতে লাগল, আমাকে বাঁচান। সঙ্গে সঙ্গে পালস অক্সিমিটারটা লাগাতেই দেখলাম, দুজনের স্যাচুরেশন ৪০-এর ঘরে নেমে এসেছে। অক্সিজেন লাগানো হলো, বুকে সিরিঞ্জ ঢুকিয়ে দেখা হলো বাতাস আসছে নাকি রক্ত আসছে। বাতাস এলে নিউমোথোরাক্স, রক্ত এলে হিমোথোরাক্স। তাঁদের এক্স-রে করানোরও ফুরসত ছিল না। অক্সিজেন দিয়েও স্যাচুরেশন ৭০ শতাংশের ওপরে বাড়ছে না দেখে তাড়াতাড়ি তাঁদের ভেতরের ওটি রুমে নিয়ে যাওয়া হলো। আমি দৌড়ে গেলাম বুকে নল লাগানোর সবকিছু ঠিকঠাক করতে। র‍্যাপিড রেসপনস টিমের জ্যাকেট পরা নার্স, প্যারামেডিকরা সবাই তাড়াহুড়া করতে থাকলেন। কোনোমতে লোকাল অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে বুকে নল ঢোকাতেই রক্তে আর বাতাসে প্রায় অর্ধেক ভরে এল নলের ব্যাগ। আধঘণ্টার মধ্যেই রোগীর স্যাচুরেশন স্বাভাবিক হয়ে এল। ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডেই তাদের ট্রান্সফার করা হলো। রোগীর চাপে সার্জারি ওয়ার্ডও ভরে এল। নতুন ওয়ার্ড খোঁজা শুরু হলো। এর মধ্যেই ডিরেক্টর স্যারের আদেশে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে রোগী পাঠানোর নির্দেশ জারি হলো।

রাত তখন ১১টা। খবর এল আজ রাত ১২টার পর কারফিউ। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় খবরের একমাত্র উৎস ছিল বাসার মানুষ। তাঁরা আমাদের খোঁজখবর নিতে উদ্বিগ্ন হয়ে কল করতেন আর আমরা সঙ্গে সঙ্গে টিভির নিউজ জিজ্ঞেস করতাম।

রাত ১২টায় কারফিউ শুরু হলো। আমরা বুঝে উঠছিলাম না, এবার নিহত মানুষের সংখ্যা বাড়বে নাকি কমবে। গানশট ইনজুরির খাতার সন্ধ্যাকালীন কলাম বন্ধ করে রাতের কলাম খুলতে গিয়ে দেখলাম, সংখ্যাটা ৩০০-এর ঘরে এসে দাঁড়িয়েছে। রাতে ডিরেক্টর এসে আমাদের জন্য খাবারের বন্দোবস্ত করে দিলেন। আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারব, জানা নেই।
২০ জুলাই ২০২৪, শনিবার

হাসপাতালে গিয়ে জানতে পেলাম, এখন আর কোনো ইউনিট, ওয়ার্ড ভেদাভেদ নেই। হাসপাতালের আমরা সবাই একসঙ্গে ক্যাজুয়ালটি রোগীর ওটিতে থাকব। ওয়ার্ডের কাজ সেরে ওটিতে গেলাম। চোখে পড়ল একটা চেনা মুখ। এত রোগীর ভিড়ে তাঁর নামটা মনে করতে না পারলেও তিনি আমাকে ঠিকই মনে রেখেছিলেন। যখন ‘আমি সেই রিকশাওয়ালা’ বলে ব্যথায় কাতর কণ্ঠে ডাক দিলেন, তখন আর বুঝে উঠতে বাকি রইল না। এ সেই রিকশাওয়ালা, রুটিরুজির তাগিদে যিনি রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। এক হাত আর এক পায়ে গুলি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলেন। পরে এক পথচারী তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন। আমি অনেক কষ্টে তাঁর ভাঙা হাড়গোড় থেকে ময়লা পরিষ্কার করে ড্রেসিং করে ওয়ার্ডে পাঠিয়েছিলাম। তাঁকে ওটিতে তুলতেই হাতের মেটাকার্পাল, পায়ের টিবিয়ার অর্ধেক নিঃশেষিত অবস্থা দেখে সবাই ‘ইশ্‌’ করে উঠল। সম্পূর্ণ অজ্ঞান করার আগে তিনি আমাকে বললেন, ‘হাত-পা না থাকলে আমি কী করে খাব?’

ওই রিকশাওয়ালা হাত-পা দুটোই কেটে ফেলতে হবে—এ নিয়তি অবধারিত জেনে আর চাচার চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস হলো না।

আরেক ওটিতে গিয়ে দেখলাম, মাঝবয়সী এক পুরুষের পেটে গুলি লেগেছে। তাঁকে আর তাঁর স্ত্রীকে দেখে অবস্থাপন্ন পরিবারের মানুষ বলেই মনে হলো। আহত ব্যক্তির স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে বললেন, মেয়ের খাওয়ার দুধ কিনতে বাসার পাশের দোকানে যাচ্ছিলেন। তখনই গুলিবিদ্ধ হন। গানশট উন্ড কোনো প্রাইভেট হাসপাতালই ভর্তি নিতে চায় না। সবার শেষ আস্তানা ঢাকা মেডিকেল। বুঝলাম, বিশাল ঢাকা মেডিকেলের আনাচকানাচে যত ওটি আছে, প্রতিটি ওটি রুমেই এ রকম হৃদয়বিদারক সব মর্মান্তিক গল্প জমা আছে।প্রথম আলো

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions