ডেস্ক রির্পোট:- কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মোজেনা। বলেছেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক দলের উত্থান ঘটতে পারে। আবার পুরনো রাজনৈতিক দলগুলোও পুনরুজ্জীবিত হতে পারে। তিনি বলেন- এটা হতেও পারে, না-ও হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের টাইম টেলিভিশন চ্যানেলকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। তার এ সাক্ষাৎকারটি নেন টাইম টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আবু তাহের। মোজেনা বলেন, বাংলাদেশে আমি বহুদলীয় (রাজনৈতিক) প্রক্রিয়া সমর্থন করি। কয়েক দশক ধরে এখানে রাজনৈতিক অচলাবস্থা চলছে। এটা ভাঙা উচিত। এ জন্য প্রয়োজন অর্থপূর্ণ সংস্কার।
তিনি আরও বলেন, সীমান্তের কাছেই একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের ভেতরে পুনরেকত্রীকরণে নিজের স্বার্থেই সমর্থন করতে পারে ভারত। এমনও হতে পারে সহায়তা করতে পারে আন্তর্জাতিক বন্ধুরা। নৃশংসতার জন্য দায়ী নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে সম্ভবত নিষেধাজ্ঞা আরোপ হতে পারে। বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সমর্থন আসতে পারে।
তার কাছে জানতে চাওয়া হয় বর্তমানে তিনি অবসরে কেমন সময় কাটাচ্ছেন। ড্যান মোজেনা হেসে বলেন, আমি টায়ার্ড। সব সময় আমি সফর করি। তিনি বলেন, আমি ঢাকাকে মিস করি। বাংলাদেশকে মিস করি। বাংলাদেশের চমৎকার মানুষদের মিস করি। আমি সহসাই আবার বাংলাদেশে যেতে চাই। এ পর্যায়ে প্রশ্নকর্তা জানতে চান- আমি আপনার বাড়িতে একটি রিকশা দেখেছি। এটা আপনি বাংলাদেশ থেকে এনেছেন। হাসি-খুশি ড্যান মোজেনা তা নিয়ে মজা করেন। তিনি বাংলাদেশকে কতোটা ভালোবাসেন তা ফুটে ওঠে তার কথায়। তিনি বলেন, আমি বাজি ধরতে পারি, এই রিকশা আপনার বাড়িতে নেই। আমি এটা ভালোবাসি। জন্মদিনে একটি রিকশার পেইন্টিং আমার ছেলে ও মেয়ে আমাকে উপহার দিয়েছে। এটা আমাকে অনেক কিছু মনে করিয়ে দেয়। আমি প্রতিদিনই এটা দেখি।
প্রশ্নকর্তা জানতে চান, আপনি একজন রাষ্ট্রদূত হিসেবে বাংলাদেশে ছিলেন। এ ছাড়াও আপনি বাংলাদেশ দূতাবাসে ডেপুটি অব দ্য মিশন ছিলেন। কিন্তু তাকে সংশোধন করে দেন হাসি-খুশি মোজেনা। তিনি বলেন, ১৯৯৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পলিটিক্যাল কাউন্সিলর ছিলাম। আমি জন হোলসম্যান ও রাষ্ট্রদূত ম্যারিয়ান পিটার্সের সঙ্গে কাজ করেছি। এরপরই সাক্ষাৎকারে উঠে আসে কোটা সংশোধন আন্দোলনের প্রসঙ্গ। মোজেনার কাছে জানতে চাওয়া হয়- গত সপ্তাহে, এমনকি এখনো আপনি জানেন কয়েক শত কোটা আন্দোলনকারী বা সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রকৃত সংখ্যা আমরা জানি না। কারফিউ দেয়া হয়েছে। সেনাবাহিনী, বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে সব সময়ই আপনি বাংলাদেশকে পরামর্শ দিয়েছেন। সেখানে যখন এমন অবস্থা দেখেন, তখন পুরো ঘটনা নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী? আপনার বিশ্লেষণ কী বলে? এ প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ড্যান মোজেনার চোখে-মুখে হতাশার ছাপ দেখা যায়। তিনি বলেন- আপনি যেমনটা অনুভব করছেন আমিও তেমনটাই অনুভব করছি। আমি বিধ্বস্ত। যা ঘটেছে এবং যা ঘটছে তাতে আমি বিপর্যস্ত। এটার শুরু জুলাইয়ে, গত সপ্তাহে যা ঘটেছে তাতে আমি ভীতসন্ত্রস্ত। আমি জানি না কতো মানুষ নিহত হয়েছেন। এটা হতে পারে ১৫০, হতে পারে ২০০, হতে পারে ৪০০- আমি জানি না। সংখ্যাটা যা-ই হোক, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। যেসব মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, তারা বাংলাদেশের ভালো মানুষ। কেন তাদেরকে হত্যা করা হলো? কেন? আমি বিপর্যস্ত। আমি মনে করি প্রতিটি পরিবারকে ভয়ানক এই বেদনা স্পর্শ করেছে। এটাই আমার ইমোশনস।
তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বাংলাদেশে একজন রাষ্ট্রদূত ছিলেন আপনি। এই উত্তেজনাকর অবস্থা কীভাবে সৃষ্টি হলো এবং এটা প্রশমনের কী পথ থাকতে পারে বলে মনে করেন আপনি? জবাবে ড্যান মোজেনা বলেন, আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি না। এটা ইতিহাসবিদদের কাজ। আমি পেছনের দিকে নয়, সামনের দিকটা দেখছি। আমি যেটা দেখছি, আপনি কি করছেন, যা ঘটে গেছে তা আপনি ফেরত আনতে পারবেন না। আমি ১লা জুলাই সার্স করে দেখেছি। যা ঘটেছে তা ফেরাতে পারবেন না। আসুন আমরা এখন কোথায় আছি সেটা দেখি। বাংলাদেশ এখন কী করছে? আমার মায়ের কথা বলতে পারি। আপনি তাকে দেখেননি। মা এবং সবাই আমাকে ড্যান নামেই ডাকেন। তিনি আমাকে বলেছিলেন- ড্যান, তোমার জীবনে অনেক অনেক কালোমেঘ আসবে। কখনো কখনো সেই নিকষ কালোমেঘের মধ্যে তুমি ‘সিলভার লাইনিং’ দেখতে পাবে।
১লা জুলাই সেই কালোমেঘ দেখতে পেয়েছি আমি। আমার মায়ের কথা মনে হয়েছে। এই ভয়াবহতার মধ্যে কোনো ভালো কিছু থাকতে পারে। যা দেশের জন্য অধিকতর ভালো কিছু হবে। উত্তরটা হ্যাঁ হবে নাকি না হবে তাও জানি না। গত সপ্তাহে যে ভয়াবহতা দেখেছি, তা হয়তো হতে পারে বাংলাদেশে কয়েক দশক ধরে অচল রাজনৈতিক জ্যামকে ভাঙতে সহায়ক। আপনি জানেন আমি কি নিয়ে কথা বলছি। এর প্রেক্ষিতে আমার কি ধারণা সেটা শেয়ার করতে পারি। আমি নিশ্চিত এই ভয়াবহতা বাংলাদেশের জন্য ভালো কিছু নিয়ে আসবে। হতে পারে এটা একটি ব্যর্থ চর্চা। আমি এ বিষয়ে নিশ্চয়তা দিতে পারি না। প্রথমত, সর্বোপরি আজই এসব বন্ধ করুন। জাস্ট বন্ধ করুন।
এ কথা বলতে বলতে কঠিন এক হতাশা তার মুখে ফুটে ওঠে। তিনি ইংরেজিতে বলেন- টুডে ইট মাস্ট বি স্টপ। জাস্ট স্টপ। সেনাবাহিনীকে তার ব্যারাকে ফিরে যেতে হবে। প্রত্যেককে তাদের জায়গায় (কাজে) ফিরতে হবে। ইন্টারনেট মুক্ত করে দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দিতে হবে। আটক রাখা ছাত্রদের ছেড়ে দিতে হবে। এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, বিশ্বাসযোগ্য, নিরপেক্ষ/ক্রেডিবল/ইন্ডিপেন্ডেন্ট তদন্ত শুরু করতে হবে। তাতে পরিষ্কার করতে হবে কী ঘটেছিল এবং পরিষ্কার করতে হবে যে, কোন অপরাধের জন্য কে দায়ী। কেউ তো ওইসব মানুষকে হত্যা করেছে। আমি জানি না। আপনি রংপুরের আবু সাঈদের ঘটনা ভিডিওতে দেখেছেন। কেউ তো তাকে হত্যা করেছে। আমি মনে করি তাদেরকে জবাবদিহিতায় আনা উচিত। কংক্রিট স্টেপ আছে, যা শুধু সরকারকে নয়, সবাইকে অল্প সময়ের মধ্যে নিতে হবে। এরপর আসুন বৃহত্তর পরিসরে। আমি একজন আশাবাদী মানুষ। বাংলাদেশে কয়েক দশক ধরে রাজনৈতিক অচলাবস্থা আছে। এটাকে ভাঙতে হবে। অর্থপূর্ণ সংস্কার করতে হবে। সেটা হতে পারে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায়।
গণতন্ত্রের এই ধারায় নতুন রাজনৈতিক দলের উত্থান ঘটতে পারে। এমনও হতে পারে পুরনো রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরাই পুনরুজ্জীবিত হতে পারে। না-ও হতে পারে। আমি সেখানে একটি বহুদলীয় প্রক্রিয়াকে সমর্থন করবো। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ধারায় ভারত সহায়তা করতে পারে। ভারত সীমান্তের কাছে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র ভারতের স্বার্থ রক্ষা করবে না। ফলে ভারত সহায়তা করতে পারে। হতে পারে আন্তর্জাতিক বন্ধুরা র্যাবের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সহায়তা করতে পারে পুনরেকত্রীকরণের ক্ষেত্রে। নৃশংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়া যেতে পারে। এর আগে ২০২১ সালে র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
তার কাছে আরও জানতে চাওয়া হয়, আপনি যখন রাষ্ট্রদূত ছিলেন এই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় আপনি বিএনপি, আওয়ামী লীগ- উভয় দলকে আলোচনায় ডেকেছিলেন। কিন্তু আপনি জানেন বাংলাদেশে কোনো পার্টিই সংলাপে যায় না। কিন্তু একজন বন্ধু হিসেবে, একজন বিশেষজ্ঞ এবং একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি হিসেবে আপনি কি বলবেন- কীভাবে তারা একটি সংলাপ শুরু করতে পারে? এক্ষেত্রে বিরাট গ্যাপ আছে। এই গ্যাপ কমানোর উদ্যোগের মাধ্যমে কীভাবে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান হতে পারে?
ড্যান মোজেনা বলেন, এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সংলাপের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এক্ষেত্রে অপশন কী হতে পারে? কীভাবে বলবেন এর অবসান হবে? আমি মনে করি মানুষ হত্যা কারও জন্য মঙ্গল নয়। ধ্বংস নয়, আপনাদেরকে দেশটা গড়তে হবে।
এ পর্যায়ে হাসান ফেরদৌস নামে একজন জানতে চান- রাষ্ট্রদূত মোজেনা আপনাকে টিভি শোতে স্বাগতম। বাংলাদেশে যে সার্ভিস দিয়েছেন তার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনি চেষ্টা করেছেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে ভারতের সঙ্গে সমঝোতার (নিগোশিয়েট) চেষ্টা করছেন। তাই কি? আপনি কি মনে করেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারত ভূমিকা রাখতে পারে? কি সেই ভূমিকা?
জবাবে মোজেনা বলেন, এটা কোনো গোপন কথা নয়। সবাই জানেন ২০১৪ সালের নির্বাচনকে সামনে নিয়ে নয়াদিল্লি কি চায়। আমি সবাইকে বলেছি, ভারতও সবাইকে বলেছে- একটি স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চায় ভারত। আমিও এটা বিশ্বাস করি।
এ পর্যায়ে ওই প্রশ্নকর্তা আবার জানতে চান- ভারত একটি বিদেশি রাষ্ট্র। একটি প্রতিবেশী রাষ্ট্র। কীভাবে একটি সার্বভৌম বাংলাদেশে ভূমিকা রাখতে পারে তারা? ২০১৪ সালে ভারত কী ভূমিকা রাখতে পারতো বলে মনে করেন?
ড্যান মোজেনা বলেন, আমি ইতিহাসের পেছনে যেতে চাই না। আপনি যেটা বলছেন আমার ধারণা তার থেকে ভিন্ন ছিল। ভারত সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে নাকি করবে না- সেটা নিয়ে নয়। তারা একটি দলকে সমর্থন করবে কিনা বিষয়টি তা নয়। আমার মতে, বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিকভাবে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আছে। তারা তাদের নেতা নির্বাচনের জন্য বদ্ধপরিকর।
প্রশ্নকর্তা জানতে চান, তার মানে আপনি মনে করেন ২০১৪ সালে এমনকি সর্বশেষ নির্বাচনে বাংলাদেশে ভূমিকা পালন করেছে ভারত? আপনার দৃষ্টিতে ভারত এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে।
ড্যান মোজেনা বলেন, এক্ষেত্রে তাদের ‘ফেভারিট হর্স’ আছে।
প্রশ্নকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কী? আমরা দেখেছি বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্রমবর্ধমান হারে যুক্তরাষ্ট্র জড়িত হয়েছে। সিরিয়াস অবস্থার মধ্যদিয়ে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস্ বিদায় নিয়েছেন। তিনি একটি বিবৃতি দিয়েছেন। তাতে বলেছেন- এভাবে ঢাকা থেকে বিদায় নিতে হবে এটা আমি আশা করিনি। তিনি কি বুঝাতে চেয়েছেন আমি জানি না। তাকে কি চলে যেতে বলা হয়েছে? তিনি কি লিগ্যাসি রেখে গেছেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে?
ড্যান মোজেনা বলেন, আমি তো বাইরে থেকে কথা বলছি। আমি আপনাদের সবাইকে জানাচ্ছি, আমি একজন প্রাইভেট সিটিজেন। আমার বিষয় ছাড়া অন্য কারও বিষয়ে আমি কথা বলতে পারি না। যুক্তরাষ্ট্র সরকার কী করছে, কী ভাবছে ভেতরে ভেতরে সেটা আমি জানি না। পিটার হাস্কে নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। এটা তার নিজের ব্যাপার। এ বিষয়ে আপনি সরকারের কাছে জানতে চাইতে পারেন।
প্রশ্নকর্তা আবার জানতে চান- চলমান সংকটে কী পদক্ষেপ নিয়ে সহায়তা করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র?
মোজেনা বলেন, আমি এই প্রশ্নটা পছন্দ করি ভীষণভাবে। আমি যখন রাষ্ট্রদূত ছিলাম, তখন দুর্ভাগ্যজনকভাবে বেশির ভাগ মানুষ এভাবে প্রশ্নটা করেননি। এক্ষেত্রে কোনো জাদু নেই। বাংলাদেশের সমস্যাগুলোর সমাধান তাদেরকেই করতে হবে। তাদের তো এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন নেই। ভারতের প্রয়োজন নেই। রাশিয়া বা চীন বা অন্য কারও সহায়তা প্রয়োজন নেই। আমি এটাকে সফিসটিকেটেড দেশ মনে করি। আপনার প্রশ্নের জবাবে বলি- যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করতে পারে এই প্রক্রিয়ায়। বাংলাদেশে অনেক ‘এলিমেন্ট’ আছে। আপনি জানেন, আমি জানি সেখানে পুনরেকত্রীকরণে আমরা সহায়তা করতে পারি। আমরা সেখানে গঠনমূলক সহায়তা করতে পারি। তা হতে পারে প্রশিক্ষণ, সমর্থন। সম্ভবত নিষেধাজ্ঞাও সহায়ক হতে পারে। ২০২১ সালে র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। আমি তো মনে করি তাতে কতোগুলো জীবন রক্ষা করা গেছে। আমার দৃষ্টিতে এতে কিছু নিরপরাধ মানুষের জীবন রক্ষা হয়েছে। আমার শেষ কথা হলো যুক্তরাষ্ট্র বা আন্তর্জাতিক কোনো দেশ এই সমস্যার সমাধান করতে পারে না। বাংলাদেশের কাছেই আছে এর উত্তর। আমি আশা করি- বাংলাদেশি জনগণ যেভাবে সমস্যার সমাধান চায় তাতে সহায়তা করার চেষ্টা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
আমেরিকা দ্বিমুখী নীতি নিয়েছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে ড্যান মোজেনা বলেন, প্রতিটি দেশেরই কূটনৈতিক মিশন আছে, দূতাবাস আছে। এখন যেখান থেকে এই সাক্ষাৎকার দিচ্ছি এখান থেকে বাংলাদেশ দূতাবাস দূরে নয়। তারা একই কাজ করে। দুটি নয়, তিনটি নয়। তারা একটি কাজ করে। বাংলাদেশের স্বার্থ দেখে। যুক্তরাষ্ট্রও তাই করে। প্রতিটি দেশের সম্পর্ক আছে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি। এ লক্ষ্যে রাষ্ট্রদূত কাজ করেন। সব দেশই এটা করে। এক্ষেত্রে মানবাধিকার এবং অর্থনৈতিক বিষয়টিও দেখা হয়। গণতন্ত্র দেখা হয়। নিরাপত্তা সহযোগিতার বিষয় দেখা হয়। আমি দীর্ঘ ক্যারিয়ারে শিখেছি এটাই আমার কাজ। এর ফল সুখকর নয়। ফল হ-য-ব-র-ল। বাইরে থেকে এটাকে অন্যভাবে দেখা হয়। এর মধ্যদিয়েই আমাদেরকে কাজ করতে হয় ভারসাম্য রক্ষা করে।
তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, যুক্তরাষ্ট্রে সিনেট সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা চাক শুমার, অনেক কংগ্রেস সদস্য, সিনেটর ও অন্যরা বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অন্য অনেক দেশও। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বাংলাদেশি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস দ্য হিন্দুকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নতুন নির্বাচন দাবি করেছেন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দাবি করেছেন। জবাবে ড্যান মোজেনা বলেন, সামনে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশি জনগণ যা সমর্থন করে, কথা বলতে চায়- তাতে আমি সমর্থন করি। আমি মনে করি গত প্রায় সাড়ে তিন সপ্তাহের মধ্যে সংঘটিত ঘটনায় যারা জড়িত তাদেরকে নিয়ে সব পক্ষের মধ্যে অর্থপূর্ণ সংলাপ হওয়া উচিত। বাংলাদেশে স্বচ্ছ বিষয় হতে পারে তারা একে অন্যের সঙ্গে কথা বলতে পারেন গঠনমূলক উপায়ে। তারা সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ বের করতে পারেন। বিকল্প পথ বের করতে হবে। আমার আইডিয়া আছে। কিন্তু অনেক আইডিয়া আছে এক্ষেত্রে। আপনি বলেছেন ইউনূস বলেছেন নতুন নির্বাচন। এটা ভালো আইডিয়া হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। এ বিষয়ে আমার আইডিয়া নেই। আমি এটা নিয়ে রায় দিচ্ছি না। আমি এটা জনগণের কাছে ছেড়ে দিতে চাই, যারা আলোচনার মধ্যদিয়ে এটা ঠিক করতে পারেন। তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এটা সহায়ক কিনা।
এ অঞ্চলে ভারত-চীনের ভূমিকা কী, বাংলাদেশের কূটনীতি চীন ও ভারতের সঙ্গে, এ নিয়ে কথার লড়াই আছে। এ বিষয়ে বলুন। এ বিষয়ে ড্যান মোজেনা বলেন, স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা, সমৃদ্ধি, জনগণের কল্যাণ এসবই তাদের উত্তম স্বার্থের বিষয়। কখনো কখনো এই ইন্টারেস্ট নিয়ে প্রতিযোগিতা হয়। এ সময়ে আপনাকে ভারসাম্য রক্ষা করতে হয়। আমি মনে করি যুক্তরাষ্ট্র, চায়না, ভারত, রাশিয়া আমরা সবাই বাংলাদেশকে একটি পুরোপুরি অর্থপূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে দেখতে চাই। এটা যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন, রাশিয়া সবার জন্যই মঙ্গলজনক।
তার কাছে নতুন প্রশ্ন করা হয়- আপনি বাংলাদেশে থাকার সময়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন অনেকবার।
হাস্যোজ্জ্বল মোজেনা বলেন- হ্যাঁ, আমি সবার সঙ্গেই সাক্ষাৎ করেছি।
প্রশ্ন: আপনার বেস্টফ্রেন্ড কে?
ড্যান মোজেনা বলেন, আমার সময়ের ছবিগুলো দেখুন। আমার মুখে সব সময় হাসি দেখবেন। আমি বাংলাদেশের কৃষকের ধানক্ষেতে গিয়েছি। তারা আমার বেস্টফ্রেন্ড। পাবনার কৃষক। এসব মানুষই আমার বেস্টফ্রেন্ডস।
তার কাছে জানতে চাওয়া হয়- হাসিনা-খালেদার সঙ্গে আপনার সাক্ষাৎ হয়েছে। কার সঙ্গে কাজ করতে চান।
মোজেনা বলেন, আমি সবার সঙ্গেই কাজ করতে চাই।
আপনার ভালো অথবা মন্দ অভিজ্ঞতা কী?
মোজেনা বলেন, আমি অনেকবার প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিয়েছি। তিনি আমাকে ৬৪টি জেলা ঘোরার অনুমতি দিয়েছেন। সেটা না করে তিনি আমাকে থামিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু আমি এসব সফর করতে চেয়েছি। তিনি আমাকে সহায়তা করেছেন। নিরাপত্তা দিয়েছেন। প্রতিটি জেলায় তিনি আমাকে সরকারের গেস্টহাউস ব্যবহার করতে দিয়েছেন। সব সরকারি অফিসে আমাকে যেতে দিয়েছেন। খালেদা জিয়ার সঙ্গেও আমার খুব ভালো সম্পর্ক। তারা সবাই আমার প্রতি আন্তরিক ছিলেন।