ডেস্ক রির্পোট:- সারা দেশে আজ সোমবার ছাত্র–জনতার বিক্ষোভ কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। রোববার (২৮ জুলাই) রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সমন্বয়ক আব্দুল কাদেরের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) হেফাজতে থেকে ভিডিও বার্তায় লিখিত বক্তব্যে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক। রোববার (২৮ জুলাই) রাতে ডিবি কার্যালয় থেকে সাংবাদিকদের কাছে এ ভিডিও পাঠানো হয়। তবে আন্দোলনের বাকি সমন্বয়কেরা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেন এবং জিম্মি করে এ ভিডিও বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
৬ সমন্বয়কের ভিডিও বার্তা, ‘জিম্মি করে’ আদায়ের অভিযোগ অন্য সমন্বয়কদের
ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) হেফাজতে থেকে ভিডিও বার্তায় কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক। আজ রোববার রাতে ডিবি কার্যালয় থেকে সাংবাদিকদের কাছে এ ভিডিও পাঠানো হয়। তবে আন্দোলনের বাকি সমন্বয়কেরা বলছেন, জিম্মি করে এ ভিডিও বার্তা দেওয়া হয়েছে।
ডিবি কার্যালয়ে সমন্বয়কদের জিম্মি করে ব্ল্যাকমেল করে এই লিখিত বক্তব্য পাঠ করানো হয়েছে দাবি করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ এসএমএসে বলেন, ‘ডিবি কার্যালয়ে সমন্বয়কদের জিম্মি করে ব্ল্যাকমেল করে এই লিখিত বক্তব্য পাঠ করানো হয়েছে। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বিবৃতি আদায় ছাত্রসমাজ মেনে নেবে না।’
কোটা সংস্কার আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বিবৃতিতে বলেন, ‘সমন্বয়কদের জিম্মি করে নির্যাতনের মুখে যে স্টেটমেন্ট দেওয়ানো হইছে, সেটা কখনোই জাতির নিকট গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আটককৃত সমন্বয়কেরা ভয়ভীতির মুখে গোয়েন্দা সংস্থার লিখে দেওয়া যে বক্তব্য কেবল রিডিং পড়ে গেছে, আমরা সেই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি এবং একইসঙ্গে জোরপূর্বক বক্তব্য আদায় করার মতো সরকারের এমন জঘন্য কাজের তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, ৯ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে। দেশবাসীর প্রতি আহ্বান, আপনারা কোনোপ্রকার বিভ্রান্ত হবেন না। যে কোটার জন্য সরকার এতগুলা মানুষকে হত্যা করেছিল, সেই হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’
এদিকে রোববার (২৮ জুলাই) সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে গ্রাফিতি অঙ্কন ও দেয়াল লেখন কর্মসূচি পালন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এই কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
এর কিছুক্ষণ পরেই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কর্মসূচির ঘোষণা এল।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ও ছাত্রলীগের আক্রমণে নিহত শত শত শহীদের আত্মত্যাগ তিরস্কার করে ডিবি কার্যালয়ে বন্দুকের নলের মুখে জিম্মি করে সমন্বয়কদের মাধ্যমে জোরপূর্বক স্ক্রিপ্টেড বিবৃতি আদায়ের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমাদের দাবি আদায়ে আমরা অবিচল ছিলাম, রয়েছি এবং থাকব।
দেশবাসী ও ছাত্রসমাজের উদ্দেশে বিবৃতিতে বলা হয়, বিগত কয়েক দিন যাবৎ গণহত্যা, গণগ্রেপ্তারের পর সরকার এখন এক নতুন নাটকের সৃষ্টি করেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের তুলে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে জিম্মি করে অস্ত্রের মুখে স্ক্রিপ্টেড বিবৃতি দিয়ে, ছাত্রসমাজের দাবিগুলোর প্রতি সরকার চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছে। শুধু তাই নয়, সারা দেশে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত শহীদদের পরিবারকে হুমকি–ধামকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে, আর্মড ফোর্সকে ব্যবহার করে ঢাকায় এনে সরকার তাদের থেকে মিথ্যা জবানবন্দি নেওয়া ও সমস্ত দায় আন্দোলনকারীদের ওপর চাপিয়ে শহীদের রক্তের সঙ্গে তামাশা করেছে। আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, জীবনের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত ছাত্রসমাজ শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করতে পারে না।
দাবিগুলো আদায় না হওয়ার আগে পর্যন্ত ছাত্রসমাজের আন্দোলন চলবে উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সরকার সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের স্ট্রিম রোলার চালিয়ে যাচ্ছে। ব্যাপক হত্যাযজ্ঞের পর সরকার সারা দেশে রেইড করে গণগ্রেপ্তার করেছে। হাজার হাজার মামলা ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। জানালার পাশে পড়ার সময় কোমলমতি শিশু সামরিক হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর স্মরণকালের সবচেয়ে বড় বর্বরোচিত হামলা চালানো হয়েছে। এমনকি স্কুল ও কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলা চালিয়ে অসংখ্য শিক্ষার্থীকে আহত ও শহীদ করা হয়েছে।