ডেস্ক রিপোট:- কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালীন মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বের হওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হন যশোরের ঝিকরগাছার সন্তান সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির বিবিএ ক্লাসের ছাত্র ইমতিয়াজ হোসেন জাবির (২২)। গত ১৭ই জুলাই ঢাকার বনশ্রী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন। পরে গত শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সেখানে ময়নাতদন্ত শেষে রাতেই লাশ কড়া পুলিশ প্রহরায় গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। শুক্রবার ভোর রাতেই তাকে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার হাজিরবাগ ইউনিয়নের দেউলি গ্রামের বাড়িতে তাকে দাফন করা হয়েছে। তিনি দেউলি গ্রামের নওশের আলীর ছেলে। তিনি ঢাকা সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির বিবিএ প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। শনিবার সকালে নিহত জাবিরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের মধ্যে একটি কক্ষে ছেলে হারানোর শোকে কাতর হয়ে পড়ে আছেন মা শিরিনা বেগম। কাঁদতে কাঁদতে মাঝেমধ্যে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন তিনি। অপরদিকে জাবিরের বাবা নওশের আলী অসুস্থ হয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার।
জাবিরের মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কোন কথা বলতে রাজি হননি নিহতের স্বজনরা। গোটা এলাকায় শোক আর আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয় বাসিন্দা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. নুরুজ্জামান বলেন, জাবির অত্যন্ত ভালো ছেলে ছিল। ও বাড়িতে আসতো, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতো। কখনো বাজে সঙ্গ ওর ছিল না। গত শুক্রবার জানতে পারি যে, নামাজ পড়ে বের হওয়ার সময় তার পায়ে গুলি লাগে। ওই সময় বাইরে গোলাগুলি চলছিলো। জাবিরের মৃত্যুতে আমরা গোটা এলাকাবাসী শোকাহত।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা শওকত হোসেন বলেন, আমরা এলাকাবাসী শুধু এটুকুই জানি যে সে নামাজ পড়ে বের হচ্ছিল, তখন বাইরে গণ্ডগোলের মধ্যে পড়ে সে গুলিবিদ্ধ হয়। জাবিরের বাবা নওশের আলী পেশায় একজন কৃষক।
নওশের আলীর দুই ছেলে মেয়ে। জাবির বড় এবং একটা মেয়ে রয়েছে। জাবিরের বোন জেরিন একাদশ শ্রেণির ছাত্রী।এদিকে বিএনপি নেতা অনিন্দ্য ইসলাম অমিত দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে গতকাল সকালে নিহত ছাত্র জাবিরের বাড়িতে যান জানাজার নামাজ আদায়ের জন্য। কিন্তু গ্রামে পৌঁছে তিনি জানতে পারেন রাতেই পুলিশ প্রহরায় তড়িঘড়ি করে হাতে গোনা কয়েকজন গ্রামবাসীকে নিয়ে জানাজার নামাজ আদায়ের পরই তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করে দেন। সকালে এলাকাবাসী জাবিরের বাড়িতে জড়ো হন জানাজার নামাজের জন্য। কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জানাজা রাতেই হয়ে গেছে। এখন আবার কিসের জানাজা।
পরে গ্রামবাসীকে সঙ্গে করে বিএনপি নেতা অমিত নিহত ছাত্র জাবিরের কবর জিয়ারত করেন এবং শোকাহত পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা জানান। এদিকে আন্দোলনে নিহত ছাত্র জাবিরের পরিবার ও প্রতিবেশীদের মধ্যে এক অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে।