ডেস্ক রির্পোট;- চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেছেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষের সময় একটি ভবনে আটকে পড়া অর্ধশতাধিক তরুণ-যুবককে ছাদ থেকে ফেলে নির্মম নির্যাতনের ঘটনায় শিবির জড়িত বলে ধারণা করছি। বুধবার (১৭ জুলাই) সকালে নগরীর মুরাদপুরে নির্মমতার সাক্ষী হয়ে থাকা ওই ভবনসহ সংঘর্ষের বিভিন্ন ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে তিনি একথা বলেন।
তিনি জানিয়েছেন, হামলা ও সংঘাতের বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ দেখে তাদের সন্দেহ হচ্ছে, কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীর ব্যানারে ছাত্রশিবির পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
প্রতিদিনের কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র ব্যানারে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টায় নগরীর ষোলশহর রেলস্টেশনে জমায়েতের ডাক দিয়েছিল। বিপরীতে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের বিভিন্ন অংশ তাদের কর্মসূচি প্রতিহত করার প্রস্তুতি নিয়েছিল।
চট্টগ্রামে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষের সময় একটি ভবনে আটকে পড়া অর্ধশতাধিক তরুণ-যুবককে ছাদ থেকে ফেলে নির্মম নির্যাতনের ঘটনা সারা দেশে আলোচনা-সমালোচনা ছড়িয়েছে। এ ঘটনায় কাউকে ছাদ থেকে মাটিতে ফেলে ‘সাপের মতো’ বেধড়ক পেটানো হয়েছে, কারও হাত-পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়েছে, চোখ উপড়ে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এ সংক্রান্ত ভিডিওতে নির্যাতনকারীদের এ সময় রীতিমতো উল্লাস করতে দেখা গেছে।
সহিংসতার শিকার এসব তরুণ-যুবকদের অধিকাংশই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। কেউ কেউ সাধারণ পথচারীও আছেন, যারা সংঘর্ষের মধ্যে আত্মরক্ষার জন্য ওই ভবনের ছাদে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রাণভয়ে অনেকেই মুরাদপুরে বেলাল মসজিদের পাশে মিরদাদ ম্যানশন নামে একটি পাঁচ তলা ভবনের ছাদে গিয়ে আশ্রয় নেয়। নিচে কলাপসিবল গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের একাংশ গিয়ে গেট ভেঙে ছাদে উঠে তাদের মারধরের পাশাপাশি বেধড়ক কোপায়। প্রাণভয়ে ছাদ থেকে ওই ভবনের পেছনের অংশের কার্নিশ ও পানির পাইপ বেয়ে কয়েকজন নেমে আসার চেষ্টা করেন। এর মধ্যে কয়েকজন বিভিন্ন তলায় সান শেড ও জানালার মাঝের অংশে আশ্রয় নেন।
তখন নিচ থেকে আন্দোলকারীরা তাদের লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে থাকে। যারা নাগালের মধ্যে ছিল, তাদের লাঠি, হকিস্টিক ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে নিচে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করে। এর মধ্যেই ওপরের সান শেড থেকে কয়েকজন নিচে পড়ে যান। আন্দোলনকারীরা তাদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করে। আন্দোলনকারীদের হামলায় ভবনটির ছাদে আশ্রয় নেওয়া সরকারি হাজি মুহাম্মদ মহসীন কলেজ ছাত্রলীগের নেতা জালাল উদ্দিন জুবায়ের নিচে পাথরের স্তূপের ওপর পড়ে গুরুতর আহত হন। সে অবস্থায় তার হাত ও পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়েছে। তিনি এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি জানিয়েছেন, ওই ভবনে আশ্রয় নেওয়াদের প্রায় সবাই হামলায় আহত হয়েছেন। তাদের সংখ্যা অন্তত ৬০। এর মধ্যে ৩৩ জনকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, যাদের সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত। পরে ১০ জনকে বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এদের মধ্যে পাঁচজন আইসিইউতে আছেন, তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। চারজন ন্যাশনাল হাসপাতালের আইসিইউতে আছেন।