বান্দরবান:- পরিবেশগত বিপর্যয়ের একটি আতঙ্কের নাম পাহাড় ধস। টানা ভারী বর্ষণের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে পাহাড়ের পাদদেশ। পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দেয় বান্দরবান জেলা জুড়ে। জেলায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাস করছেন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। শুষ্ক মৌসুমে বড় বড় পাহাড় টিলা কেটে বসত ঘর তৈরি এবং পাহাড় কাটা মহোৎসবের কারণে প্রত্যেক বছরই পাহাড় ধসের ঘটনায় মৃত্যু হয়। এসব দুর্ঘটনা থেকে উদ্ধার পেতে প্রশাসন পক্ষ থেকে পাহাড় না কাটার সতর্কতা ও মামলা করা হলেও থামেনি এসব কাজ।
তাছাড়া পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে জানার সত্ত্বেও পাহাড়ও ছাড়ছে না মানুষ। ফলে বান্দরবান জেলায় গত একদশকে বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১০৫ জনের অধিক।
বেসরকারি সংস্থার জরিপ অনুযায়ী, বান্দরবানের সাত উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ের পাদদেশে অপরিকল্পিতভাবে বসতি গড়ে তুলেছে কয়েক হাজারের বেশি পরিবার। প্রত্যেক বছর পাহাড়ের পাদদেশে নতুন নতুন বসতি গড় ওঠায় গত বছরের তুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ও পরিবারের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে।
প্রশাসনের তথ্য মতে, ২০০৬ সালে জেলা সদরে ৩ জন, ২০০৯ সালে লামা উপজেলায় শিশুসহ ১০জন, ২০১০ সালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় শিশুসহ ১০ জন, ২০১১ সালে রোয়াংছড়ি উপজেলায় ২ জন, ২০১২ সালে লামা ফাইতং ইউনিয়নে ২৮ জন ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ১০ জন, ২০১৩ সালে পৌর শহর কালাঘাটায় ২জন, ২০১৪ সালে সদরে ৪ জন, ২০১৫ সালে লামায় ৬ জন ও সদরের বনরূপা পাড়ায় ৩ জন, ২০১৭ সালের সদরের কালাঘাটায় ৭ জন ও রুমা সড়কে ৫ জন, ২০১৮ সালে নাইক্ষ্যংছড়িতে ৩ জন ও লামায় ৪ জন, ২০১৯ সালে লামায় ১ জন, ২০২০ সালে আলীকদমের মিরিঞ্জা এলাকায় ১ জন, ২০২১ সালে ছাইঙ্গ্যা ঝিরিতে এক পরিবারের ৩ জন, ২০২৩ সালে মা-মেয়ে ২জন ও সর্বশেষ চলতি বছরে নাইক্ষ্যংছড়িতে পাহাড় ধসে নিহত হন ১ জন কৃষক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছরই শুষ্ক মৌসুমে পাহাড় কেটে তার পাদদেশে নতুন নতুন বসতি নির্মাণ করা হচ্ছে। পাহাড়ি জমির মূল্যে সমতলের তুলনায় কম হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষজন পাহাড় কেটে সেখানে বসতি নির্মাণ করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করেন। আর বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকায় পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় নিহতদের বেশিরভাগই নিম্ন আয়ের মানুষ। এ অবস্থায় এবার দ্রুত সময়ের মধ্যে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের অন্যত্র সরিয়ে না নিলে পাহাড় ধসে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
সাত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দিলে এলাকা জুড়ে মাইকিং করা হয়। ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়ে থাকে। তাছাড়া জেলার সাতটি উপজেলায় সরকারি প্রথামিক বিদ্যালয়গুলোকে ঘোষণা করে ২১৪টি আশ্রয় কেন্দ্র ও শুকনো খাবার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী প্রস্তুত রাখা হয়।
জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা কিংবা শুরু হলেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌরসভাসহ সকলেই অবহিত করা হয়। আর ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় বসবাস করছে তাদেরকে সরিয়ে নিয়ে আসার জন্য মাইকিং করা হয় এবং আমরা চেষ্টা করি সকলকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে আসতে, যাতে কেউ কোন দুর্ঘটনা শিকার না হয়।