আন্তর্জাতিক ডেস্ক:- দুই দিনের সফরে রাশিয়ায় পা রেখেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মস্কোর ঠিক বাইরে নভো-অগারিয়োভোতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তিনি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এরই মধ্যে মোদির এ সফরের সমালোচনা করেছেন।
গত সোমবার (৮ জুলাই) জেলেনস্কি মোদির মস্কো সফরকে ‘শান্তি প্রচেষ্টার জন্য বড় হতাশাজনক পরিস্থিতি ও বিধ্বংসী আঘাত হিসেবে’ অভিহিত করেন। এর অন্যতম কারণ- যে সময় মোদি-পুতিনের এ সাক্ষাৎ-বৈঠক হচ্ছে, সে সময় ইউক্রেনের বড় বড় শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবর বলছে, ইউক্রেনের শহরে রাশিয়ার চালানো হামলায় ৪১ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন ১৯০ জন।
খবরের কাগজের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সাধারণত দিনের ভাগে রাশিয়া কোনো হামলা চালায় না। ফলে ইউক্রেনের অধিবাসীদের জন্য রুশ হামলা ছিল অনেকটাই অপ্রত্যাশিত। রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর হামলায় কিয়েভে এক শিশু হাসপাতালের কিছু অংশ ধসে পড়েছে। সেখানে অনেকে আটকাও পড়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলছে, ইউক্রেনে আড়াই বছর আগে পুরোদমে যুদ্ধ শুরু করে রাশিয়া। ওই ঘটনার পর এবারই প্রথম রাশিয়া সফরে গেলেন মোদি। গত সোমবার প্রকাশিত ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, দুই নেতা একে অপরকে আলিঙ্গন করে অভিবাদন জানাচ্ছেন, চা পান করতে করতে আলাপ করছেন, বিদ্যুচ্চালিত গাড়িতে করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং ঘোড়ার আস্তাবল ঘুরে দেখছেন।
রাশিয়ার আক্রমণের দিকে ইঙ্গিত করে জেলেনস্কি সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘শান্তি প্রচেষ্টার জন্য এটি অত্যন্ত হতাশাজনক পরিস্থিতি এবং বিধ্বংসী আঘাত যে, বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের নেতা সবচেয়ে বড় অপরাধীকে মস্কোতে একই দিনে আলিঙ্গন করছেন।’
মঙ্গলবার (১০ জুলাই) মোদি রাশিয়ায় বসবাসরত ভারতীয় অভিবাসীদের প্রতি বক্তব্য রাখেন। এ সময় তিনি ইউক্রেনের ওই হামলা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে রাশিয়ায় আরও দুটি ভারতীয় কনস্যুলেট খোলা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। রুশ শহর ইয়েকাতেরিনবার্গ ও কাজানে ওই দুই কনস্যুলেট খোলা হবে।
মোদি এ সময় বলেন, ‘রাশিয়ার তাপমাত্রা মাইনাসে রয়েছে থাকুক, আর না-ই থাকুক – রাশিয়া ও ভারতের বন্ধুত্ব সব সময় প্লাসেই ছিল। এ সম্পর্ক পারস্পরিক ভরসা ও সম্মানের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা।’
ইউক্রেনে হামলার খবর নিশ্চিত করেছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। তারা গত সোমবার জানায়, তাদের সামরিক বাহিনী দীর্ঘ পরিসীমার ও নিখুঁত অস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনের শিল্প স্থাপনা ও ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীর বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। এ ছাড়া রাশিয়ার মন্ত্রণালয় থেকে দাবি করা হয়েছে, কিয়েভে শিশু হাসপাতালে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্রের কারণে হয়েছে।
মস্কোর সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে ভারতের। সামরিক যন্ত্রাংশ প্রশ্নে ক্রেমলিনের ওপরও ব্যাপক নির্ভরশীল তারা। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মূল্যছাড়ে অপরিশোধিত তেল বিক্রি করছে রাশিয়া। ভারত সে তেল কেনার পরিমাণ আগের তুলনায় বাড়িয়ে দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার এ সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আমি প্রধানমন্ত্রী মোদির বক্তব্যের দিকে নজর রাখব যে সে কী নিয়ে আলাপ করে, কিন্তু যা বললাম– আমরা ভারতের কাছে আমাদের উদ্বেগ আগেই স্পষ্ট করেছি।’
মিলার আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি, ভারত ও অন্য যে দেশই রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কে জড়াক না কেন, তারা যাতে এটুকু স্পষ্ট করে যে রাশিয়ার ইউএন চার্টার মানা উচিত, ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সমর্থন জানানো উচিত।’
ভারত ইউক্রেনে চলমান আগ্রাসন থামানোর ও শান্তি ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছে একাধিকবার। কিন্তু জাতিসংঘে সব সময় ইউক্রেন যুদ্ধবিষয়ক প্রস্তাবে ভোটদান থেকে বিরত থেকেছে। এ ছাড়া রাশিয়ার প্রতি নিন্দাও জানায়নি তারা। সূত্র: সিএনএন, রয়টার্স