ডেস্ক রির্পোট:- উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী দ্রুত সময়ের মধ্যে পদোন্নতি না দিলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পদোন্নতি বঞ্চিত চিকিৎসকরা। এসব কর্মসূচিতে থাকবে লাগাতর অবস্থান কর্মসূচি, স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধন।
মঙ্গলবার বিএসএমএমইউ’র ভিসির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে এমন হুঁশিয়ারি দেন পদোন্নতি বঞ্চিত ৪৫ জন চিকিৎসক।
তাদের অভিযোগ, ২০০৩-২০০৪ সালে তারা ২০০ জন চিকিৎসক বিএসএমএমইউতে নিয়োগ পান। বিএনপি সরকারের আমলে নিয়োগের অজুহাতে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ গত দুই দশকেও তাদের কোন পদোন্নতি দেননি। যদিও তারা চিকিৎসা বিষয়ে দেশ-বিদেশ থেকে চিকিৎসা বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। পদোন্নতির দাবিতে ভুক্তভোগী চিকিৎসকরা উচ্চআদালতে রিট করেন। রিটের প্রেক্ষিতে ৪৫ জনকে চিকিৎসককে পদায়নে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরপর এক মাস পার হলেও তা কার্যকরে গড়িমসি করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
অবস্থান কর্মসূচিতে ডা. কাজী কামরুল ইসলাম বলেন, বিএসএমএমইউর পদোন্নতি বঞ্চিত ৪৫ জন চিকিৎসককে পদায়ন করতে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ নির্দেশ দিলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা কার্যকর করতে গড়িমসি করছে। এরই মধ্যে রায়ের এক মাস পার হয়ে গেছে। কিন্তু আদেশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন।
রিটকারী চিকিৎসকরা আরও বলেন, তারা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এমডি, এমএস, এফসিপিএস, এমআরসিএস, এমআরসিপি, এমফিলসহ উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এই তালিকায় বিএসএমএমইউর মেডিসিন, কার্ডিওলজি, রিউমাটোলজি, হেমাটোলজি, ফিজিক্যাল মেডিসিন, নেফ্রোলজি, জেনারেল সার্জারি, কোলোরেক্টাল সার্জারি, নিউরোসার্জারি, অর্থোপেডিক সার্জারি, কার্ডিয়াক সার্জারি, শিশু সার্জারি, ইএনটি, গাইনি অ্যান্ড অবস, অ্যানেস্থেসিয়া, ল্যাবরেটরি মেডিসিন, প্রোস্থোডন্টিক্সসহ ৫৪টি বিভাগের প্রায় দুই শতাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন।
যারা যোগদানের পর থেকে একই পদে (মেডিকেল অফিসার হিসাবে) কর্মরত রয়েছেন। অল্প কিছু সংখ্যক কনসাল্টেন্ট হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। কিন্তু যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদায়ন অথবা পদোন্নতি কোনোটাই দেয়া হচ্ছে না।
পদোন্নতির দাবিতে ২০১৯ সালের ১লা ডিসেম্বর আন্দোলনে নামেন এই চিকিৎসকরা। তারা তৎকালীন ভিসিকে স্মারকলিপিও দেন। সবশেষ ২০২১ সালে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেয়া ও মৌন মিছিল কর্মসূচি পালন করেন। এরপরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের দাবির প্রতি সুবিচার করেনি, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম ভঙ করে যোগ্য বিভাগীয় প্রার্থী থাকার পরও বাইরে থেকে ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে সহকারী অধ্যাপক নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী চিকিৎসকদের।
তারা জানান, এমন পরিস্থিতিতে বঞ্চিত ৪৫ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পদোন্নতির দাবিতে উচ্চ আদালতে রিট করেন। হাইকোর্ট ২০২৩ সালের ১৩ই ডিসেম্বর আবেদনকারী চিকিৎসকদের সহকারী অধ্যাপক পদে পদায়ন করে ১৯৯৯ সালের বিধি মেনে সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়মিত নিয়োগ দিতে নির্দেশ দেন। ১৪ই ফেব্রুয়ারি আদেশের সার্টিফায়েড কপি প্রকাশ করা হয়। ১৭ই ফেব্রুয়ারি পদোন্নতি বঞ্চিতরা বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষের কাছে সেই রায়ের কপিসহ পদায়নের জন্য আবেদনপত্র জমা দেন। এরপর ৩ মাসের বেশি সময় পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেন।
গত ৩রা জুন ২০২৪ প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ফুল বেঞ্চ রিটকারী চিকিৎসকদের সহকারী অধ্যাপক পদে অবিলম্বে পদায়ন করার হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখে নির্দেশনাসহ রিট নিষ্পত্তি করে।