কাস্টমসের এক ওডি গাড়ি নিয়ে নাটকীয় ১১ বছর!

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪
  • ১০৩ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আমদানির পর ওডি ব্র্যান্ডের একটি গাড়ি নিয়ে ১১ বছর ধরে চলছে নানা নাটক। সাধারণত যে কোনো পণ্য আমদানিতে মিথ্যা ঘোষণা ধরা পড়লে কাস্টমস কর্মকর্তারা জরিমানাসহ শুল্ক আদায় করেন। কিন্তু এই গাড়ির ক্ষেত্রে মিথ্যা ঘোষণার বিষয়টি ধরাই পড়েছে বন্দর থেকে খালাস হওয়ার চার বছর পর। পরে রাস্তায় অভিযান চালিয়ে গাড়িটি আটক করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এরপর এনবিআরের কাজে যাওয়ার সময় জব্দ হওয়া সেই গাড়িতে আগুন লেগে যায়। এতে একদিকে গাড়ি পুড়েছে, অন্যদিকে সরকারের পাওনা রাজস্ব আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে চমকপ্রদ এই ঘটনা জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ৩ মে বনানীর ভার্সেটাইল অটোমোবাইল থেকে ২০১২ মডেলের ওডি আর-৮ গাড়িটি আটক করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। গাড়িটি ভার্সেটাইলের কাছে থাকলেও আমদানি হয়েছে রাজধানীর তুরাগের আরেকটি প্রতিষ্ঠান।

আমদানি তথ্য যাচাই করে দেখা গেছে, ওডি গাড়িটি ২০১৩ সালে মোংলা বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে। ওই বন্দরটি দিয়ে যেসব গাড়ি এসেছে সেগুলোর বেশিরভাগই জাপানি রিকন্ডিশন। তবে কিছু কিছু ইউরোপিয়ান গাড়িও আমদানি হয়েছে—যার মধ্যে বিলাসবহুল ওডি গাড়িও ছিল। জাপানি গাড়িতে চেসিস থেকে শুরু করে সিসি সংক্রান্ত সব তথ্য দেওয়া থাকে। কিন্তু ইউরোপিয়ান গাড়িতে সিসি উল্লেখ থাকে না। সাধারণত চেসিস ও সিসিসহ মূল্য যাচাই-বাছাই করে গাড়ি খালাস করা হয়। কিন্তু ওডি গাড়ি খালাসের ক্ষেত্রে সিসির তথ্য আমলে নেওয়া হয়নি।

এই গাড়ি পরীক্ষণ করেন মোংলা কাস্টম হাউসের তৎকালীন সহকারী কমিশনার সাইদুল আলম। বর্তমানে উপকমিশনার পদে কর্মরত ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ওডি গাড়ির পরীক্ষণ করার বিষয়টি ছিল আমার চাকরিতে যোগদানের শুরুর দিকের ঘটনা। আমি যখন গাড়ির চেসিস ও সিসি নম্বর পাইনি, তখন বিষয়টি ফাইলে লিখেছি। আর এই গাড়ি খালাসে ঊর্ধ্বতন বা টেকনিক্যাল টিমের সহায়তা নেওয়ার কথা বলেছি। ২০১৭ সালে এই গাড়ি সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানিতেও আমি বিষয়টি বলেছি।’

সূত্র জানায়, পরীক্ষণ কর্মকর্তার এমন সিদ্ধান্তের পরও আমদানিকারকের তথ্যানুযায়ী ২৫০০ সিসি ধরে গাড়িটির শুল্কায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। শুল্ক আদায় করা হয় ২ কোটি ৫ লাখ ২২ হাজার ২২৪ টাকা, যা ওডি গাড়ির প্রকৃত শুল্কের চেয়ে অনেক কম।

শুল্ক ফাঁকি বিষয়টি প্রথম সামনে আসে ২০১৬ সালের মে মাসে। শুল্ক গোয়েন্দা গাড়িটি জব্দ করার পর গাড়ির মালিক সঠিক কাগজপত্র দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে শুল্ক গোয়েন্দার তদন্তে বেরিয়ে আসে, যে মডেলের গাড়ি হিসেবে শুল্কায়ন করা হয়েছে, সেটি ওই মডেলে ছিল না। মূলত গাড়িটি ২০১২ মডেলের আর-৮। এই গাড়ির প্রকৃত শুল্ক হওয়ার কথা ১৭ কোটি ২৬ লাখ ৯৮ হাজার ৬২১ টাকা। অথচ খালাসের সময় আদায় করা হয়েছে ২ কোটি ৫ লাখ ২২ হাজার ২২৪ টাকা। ফলে গাড়িটির শুল্ক বাবদ সরকারের আরও ১৫ কোটি ৪৮ লাখ ৩০ হাজার ৪১০ টাকা পাওয়ার কথা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কমিশনার পর্যায়ে ফাইল অনুমোদনের পর বন্দর থেকে গাড়িটি খালাস করা হয়েছিল।

এই গাড়ি নিয়ে জটিলতা শুধু শুল্কায়ন ইস্যুতেই শেষ হয়নি। শুল্ক গোয়েন্দা জব্দ করার পর গাড়িটি নিয়ে প্রচারণামূলক একটি তথ্যচিত্রের শুটিংয়ে গিয়েছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক কর্মকর্তা। পথে চলন্ত অবস্থায় গাড়িতে আগুন লেগে যায়। এতে সিট থেকে শুরু করে পেছনের অংশ প্রায় পুরোটাই পুড়ে যায়। এ কারণে ক্ষতিপূরণের জন্য মামলা করেন গাড়িটির আমদানিকারক। ছয় মাস পর আবার সেই মামলা প্রত্যাহারও করেন। একই সময়ে শুল্ক গোয়েন্দার পক্ষ থেকে অর্থ পাচারের অভিযোগে একটি মামলা করা হয়। ধানমন্ডি থানায় করা এই মামলার বাদী সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা বিজয় কুমার রায়।

গাড়ি পোড়ার ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এনবিআরের একটি কাজে যাওয়ার সময় হোটেল র্যাডিসনের সামনে চলন্ত অবস্থায় গাড়িটিতে আগুন ধরে যায়।’

সূত্র জানায়, গাড়িটি নিয়ে তদন্ত করে অর্থ পাচারের বিষয়ে তেমন কোনো তথ্য পায়নি বলে জানিয়েছেন শুল্ক গোয়েন্দার কর্মকর্তারা। এ কারণে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে আমদানিকারককে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এমনকি বিষয়টি তদন্ত করে আমদানিকারক নির্দোষ বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক)।

এতসব কাণ্ডের মধ্যে এগারো বছর পেরিয়ে গেলেও বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়নি। বর্তমানে গাড়িটি ঢাকা কাস্টম হাউসে বাজেয়াপ্ত হিসেবে পড়ে আছে।

২০২১ সালে দেওয়া এক চিঠিতে ওডি গাড়ি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে ঢাকা কাস্টম হাউসকে ভূমিকা রাখতে পারে বলে মতামত দিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions