শিরোনাম
জুরাছড়ি জোনের উদ্যোগে পাংখুয়াপাড়া গির্জায় বড়দিন উপলক্ষে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ কর্মসূচি রাঙ্গামাটিতে বড়দিন উপলক্ষে খ্রীষ্টধর্মাবলম্বীদের সমবেত প্রার্থনা ও কেক কাটা আজ শুভ বড়দিন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বকশ চৌধুরীর পদত্যাগ আজ ফিরছেন তারেক রহমান,নির্বাসন শেষ, ঢাকায় বরণের আয়োজন খাগড়াছড়িতে বিজিবির অভিযানে ১২টি ভারতীয় গরু জব্দ নাইজেরিয়ায় নামাজের সময় মসজিদে বিস্ফোরণ, নিহত ৭ দীর্ঘ ৬ হাজার ৩শ ১৪ দিন পর বাংলাদেশের আকাশে! অবশেষে খনন হচ্ছে রাঙ্গামাটির ৩ নদী,একনেক সভায় প্রকল্প অনুমোদন,সহজতর হবে যাত্রী ও কৃষিপণ্য পরিবহন ভূমিকা রাখবে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে রাঙ্গামাটি আসনে মনোনয়ন জমা দিলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জুঁই চাকমা

দুর্গম পাহাড় পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে মারমা তরুণ

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই, ২০২৪
  • ২৫৩ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়নের পাকলাপাড়া দুর্গম এলাকার জুমিয়া দম্পতি লাব্রেঅং মারমা ও চিংম্রাউ মারমার সন্তান অংক্যজাই মারমা।

জুমচাষি বাবা-মায়ের সংসারে অভাবকে নিত্যদিনের সঙ্গী করেই বেড়ে উঠেছেন তিনি। তবে অভাব আর দুঃখকে উপেক্ষা করে পাহাড় ডিঙিয়ে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় পা রেখেছেন এই পাহাড়ি তরুণ। যদিও এর জন্য তাকে মাড়িয়ে আসতে হয়েছে বেশ কণ্টকাকীর্ণ পথ, ডিঙিয়ে আসতে হয়েছে বহু উঁচু-নিচু বাঁধার পাহাড়।

জানা যায়, অংক্যজাইদের বাড়ির আশেপাশে কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল না। ওর বয়স যখন ছয়, তখন বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দূরের পাকলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয় তাকে। ছোট ছোট পাহাড় মাড়িয়ে আর নদী-ছড়া ডিঙিয়ে রোজ পায়ে হেঁটে বিদ্যালয়ে যেতে হতো শিশু অংক্যজাইকে। তবে বর্ষায় নদী ও ছড়ার পানি বাড়লে স্কুলে যাওয়া হতো না তার। এভাবেই শেষ হয় তার প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ।

অংক্যজাইয়ের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক পরিবার নিয়ে থাকতেন রামগড় সদরে। প্রাথমিকের পাঠ চুকানোর পর ওই শিক্ষক তাকে রামগড়ে নিজের বাড়িতে নিয়ে গেলেন। রামগড় চৌধুরীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করালেন ষষ্ঠ শ্রেণীতে। যদিও প্রথমে তাকে রামগড় যেতে দিতে রাজী হননি দরিদ্র বাবা-মা। কারণ তারা জানতেন যে, চাল আনতে তেল ফুরানোর সংসারে ছেলেকে উপজেলা সদরে রেখে পড়াশোনা করাবার মতো সামর্থ্য নেই তাদের। তবুও শিক্ষকের অনুরোধে অবশেষে রাজী হলেন তারা।

এরপর থেকে ওই শিক্ষকের বাড়িতেই ঠাঁই হয় অংক্যজাইয়ের। তবে গৃহস্থালি যাবতীয় কাজ একা হাতে সামলিয়ে তারপর বিদ্যালয় আর ঘরের পড়াশুনা চালিয়ে নিতে হয়েছে অংক্যজাইকে। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হতো। থালা-বাসন, ঘর পরিষ্কার করে রান্নাবান্না সেরে তারপর যেতেন স্কুলে। স্কুল থেকে ফিরে আবার তৈরি করতে হতো রাতের খাবার। এই ফাঁকে যেটুকু সময় পেত সেটাই পড়াশুনার কাজে লাগাতেন। ষষ্ঠ শ্রেণি উত্তীর্ণ হওয়ার পর বিদ্যালয় পরিবর্তন করে তিনি ভর্তি হন রামগড় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। অষ্টম শ্রেণিতে তার পড়াশোনার চাপ বাড়ল। সকালে কোচিং, তারপর ক্লাস। বাসায় এসে আবার রান্নাবান্না। ওই কিশোর বয়সে আর কুলিয়ে উঠতে পারছিলেন না। বাধ্য হয়ে তাই ছাড়তে হল শিক্ষকের বাড়ি। ভাড়া বাসায় গিয়ে এবার কষ্ট বেড়ে দ্বিগুণ হলো। নিজের খাবার খরচ, বাসা ভাড়া, পড়ালেখার খরচ। তার ওপর ছোট তিন ভাই-বোনের পড়ালেখার খরচ সবমিলিয়ে নাজেহাল অবস্থা। জুমচাষি বাবা-মায়ের পক্ষেও সম্ভব হচ্ছিল না সব চালিয়ে নেওয়া। তবুও সব কষ্ট সয়ে খেয়ে না খেয়ে পড়াশোনা চালিয়ে গেলেন। ২০২১ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে জিপিএ ৪.৫০ পেল অংক্যজাই। এরপর ভর্তি হন রামগড় সরকারি কলেজে। শুরু হল নতুন আরেক অধ্যায়।

এর মাঝেই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেন মা চিংম্রাউ মারমা। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের এক চিকিৎসক জানালেন মায়ের মেরুদণ্ডের অবস্থা গুরুতর, অপারেশন করা জরুরি। তবে এর জন্য প্রয়োজন প্রায় দেড় লাখ টাকা। তখন কয়েকটি টিউশনি করিয়ে আট হাজার টাকার মতো পেতো অংক্যজাই। তাই দিয়ে কোনোরকমে নিজের থাকা-খাওয়া, পড়াশোনা এবং ছোট ভাই-বোনদের পড়াশোনা চালিয়ে নিচ্ছিলেন। মায়ের এই চিকিৎসা ব্যয় মেটানো জুমচাষি বাবার পক্ষেও কোনোভাবে সম্ভব ছিল না। ফলে আর অপারেশন করা হলো না মায়ের। নিজেও টিউশনির চাপে কলেজে ঠিকমতো ক্লাসও করতে পারেননি তিনি। এভাবেই দুঃখ-কষ্টের সংগ্রামী জীবনকে মানিয়ে নিয়ে শেষ হল তার কলেজ জীবন। ২০২৩ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৬৭ পেয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি।

এরপর ভেবেছিলেন আর হয়তো পড়াশোনা এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না। তবে এরই মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মংসাথোই মারমার সঙ্গে পরিচয় হলো অংক্যজাইয়ের। তার পরামর্শে রাজধানীর আজিমপুরে একটি মেসে উঠেন তিনি। হাতে তখন টিউশনি করে জমানো সামান্য কিছু টাকা ছিল। যা দিয়ে কেবল থাকা-খাওয়া হয়তো চলবে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোচিং করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র অং ক্য চিং তাকে মাস তিনেক পড়িয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রস্তুতি বলতে কেবল এটুকুই। আর্থিক দৈন্যতায় কোচিং করা হয়নি তার।

এরইমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হল। তবে আবেদন করার মতো ফিও ছিল না তার হাতে। কেবল ঢাকা, রাজশাহী ও গুচ্ছ অধিভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটে পরীক্ষা দিল সে। পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৩১৫তম এবং গুচ্ছ অধিভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৬৭১তম হয়ে ওয়েটিং লিস্টে স্থান পায়। যদিও ডাকা হয়নি তাকে।

পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ৭৯৩তম হয়ে ভর্তি ্ন ব্যাংকিং ইনস্যুরেন্স বিভাগে। ভর্তির টাকাও ধারদেনা করতে হয়েছে তাকে। আগামী ১৫ জুলাই থেকে শুরু হবে শ্রেণি কার্যক্রম। তবে আকাশ সমান দৈন্যতা নিয়ে অনাগত দিনগুলি কীভাবে মোকাবেলা করবে সে, মনে দারুণ সংশয় তার। বাঁধার পাহাড় ডিঙিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখা অংক্যজাই মারমার সামনে এখন হিমালয়সম দেওয়াল।

অংক্যজাই বলেন, ‘জীবনের সংগ্রামের আরও একটি নতুন অধ্যায় শুরু হতে চলেছে। চার ভাই-বোনের মধ্যে আমি সবার বড়। বাকি এক ভাই ও দুই বোনের সবাই পড়াশোনা করছে। আমার ছোট ভাই নবম শ্রেণিতে পড়ছে। তার ছোট দুই বোনের একজন অষ্টম শ্রেণিতে এবং আরেকজন তৃতীয় শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। তাদেরও পড়াশোনার খরচ আছে। বাবাও আগের মতো পরিশ্রম করতে পারেন না। তার ওপর বিছানাবন্দি অসুস্থ মা। সবমিলিয়ে আমার বর্তমান বেশ কঠিন, আর সামনে অনিশ্চয়তায় ভরা ভবিষ্যৎ।’

তবুও কঠিন এই বর্তমানকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শিক্ষা জীবন শেষ করে ভবিষ্যতে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হওয়ার ইচ্ছে তার। এরপর মাকে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করে তোলা আর ছোট ভাই-বোনদেরও সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে চায় অংক্যজাই মারমা।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions