নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান):- বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু সীমান্তে খাদ্যসংকটে পড়েছে চার হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। পানি ও শৌচাগারের সংকট সেখানে তীব্র হচ্ছে। পাঁচ দিন আগে শূন্যরেখায় রোহিঙ্গাভিত্তিক দুটি সশস্ত্র সংগঠনের মধ্যে সংঘর্ষে আশ্রয়শিবির হারিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা খোলা জায়গায় অবস্থান করছে। তমব্রু গ্রামে আশ্রয় নেওয়া একাধিক রোহিঙ্গা।
তমব্রু গ্রামে আশ্রয় নেওয়া বৃদ্ধা হাজেরা খাতুন বলেন, ‘আমার বয়স ১০৮ বছর। হাঁটতে পারি না। আশ্রয়শিবির হারানোর পর খোলা আকাশের নিচে আছি। গত পাঁচ দিনের মধ্যে শনিবার কক্সবাজারের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি কিছু শুকনো খাবার দিয়েছে। আজ দুই বেলা কিছুই খেতে পাইনি। পানি ও শৌচাগারের অসুবিধায় আছি।’
ওই গ্রামে আশ্রয় নেওয়া ফকির মোহাম্মদের স্ত্রী-সন্তান মিলিয়ে পরিবারের সদস্য ছয়জন। এর মধ্যে তিন ছেলেমেয়ে অসুস্থ। একজন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। পাঁচ দিন ধরে খাবারের সংকটে তাঁর পরিবার। এখন পানি, ওষুধ, শৌচাগারেরও তেমন ব্যবস্থা নেই।
একইভাবে সখিনা বিবি, আহমদু, ছৈয়দ নুর, নুর বাহার, মোহাম্মদ ইউনুস, আমানুল্লাহ ও হাবিব উল্লাহসহ অনেকের দাবি, খাদ্য, ওষুধ, পানি ও শৌচাগারের সমস্যা দ্রুত নিরসন করার। তাঁদের ধারণা, বর্তমানে দুই হাজার শিশু ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে তমব্রুতে আশ্রয় নেওয়া অনেক রোহিঙ্গাই জীবন-মরণ সংকটে পড়বে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির আজিজ বলেন, ‘এখানে মূলত খাদ্য, ঔষধ, পানি, স্বাস্থ্য ও শৌচাগারের সমস্যায় আছে রোহিঙ্গারা। তাঁরা পাঁচ দিন ধরে কী খাচ্ছে বা কী করছে, তা নিয়ে ভেবে কূল পাচ্ছি না। আমি যত দূর জানি, গত শনিবার (২০ জানুয়ারি) আন্তর্জাতিক সংস্থা রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির পক্ষ থেকে সামান্য শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। এরপর আর কেউ তাদের কোনো খাদ্য বিতরণ করেছে কি না জানি না।’
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা বলেন, ‘আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের খাদ্যসহ নানা সংকটের ব্যাপারে তাঁর কাছে কোনো তথ্য নেই। এর আগে বুধবার রোহিঙ্গাভিত্তিক দুটি সশস্ত্র সংগঠনের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে শিবির হারায় প্রায় সোয়া চার হাজার রোহিঙ্গা। এর মধ্যে অন্তত দেড় হাজার শিশু ও সহস্রাধিক বয়স্ক মানুষ রয়েছে।’
উল্লেখ্য, গত ১৪ নভেম্বর ২০২২ তারিখে কোনারপাড়ার শূন্যরেখায় অবস্থিত রোহিঙ্গা শিবিরে র্যাবের মাদকবিরোধী অভিযানে কক্সবাজার ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তা নিহত হওয়ার পর এই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এত দিন থমথম পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। গত ১৮ জানুয়ারি রোহিঙ্গাভিত্তিক দুটি পক্ষের মধ্যে গোলাগুলিসহ সংঘর্ষ বাধে। এতে ৬২১টি বাড়িঘরসহ বাস্তুহারা হয় সোয়া ৪ হাজার রোহিঙ্গা। এর মধ্যে শিশু রয়েছে অন্তত দেড় হাজার। বয়স্ক লোকের সংখ্যা হাজারেরও বেশি। আজকের পত্রিকা