শিরোনাম
বাণিজ্য সম্ভাবনায় ‘সেভেন সিস্টার্স’ দুবাইয়ে বিপু-কাজলের ২০০ কোটির দুই ভিলা পাচারের ১৭ লাখ কোটি ফেরাবে কে,প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দিকে তাকিয়ে সবাই শিক্ষার্থীদের পরিকল্পিতভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে ঢাকা-দিল্লি পররাষ্ট্রসচিব বৈঠক ডিসেম্বরে, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে আলোচনা হবে কি এবার মারা গেলেন পরীমণির প্রথম সিনেমার পরিচালক জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের পরামর্শ সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সুপারিশ, বদিউল বললেন, ‘বিবেচনায় রয়েছে’ বান্দরবানে নৌকা বাইচ দিয়ে ক্রীড়া মেলা শুরু রাঙ্গামাটিতে সাফজয়ী পাহাড়ের তিন কন্যাকে উষ্ণ সংবর্ধনা

দুর্নীতির ‘বরপুত্র’ সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি শামসুদ্দোহা!

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই, ২০২৪
  • ৯০ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ড. শামসুদ্দোহা খন্দকার নিজ বাহিনীতে দুর্নীতির ‘বরপুত্র’ হিসাবে পরিচিত ছিলেন। অবৈধ অর্থ উপার্জনে তার জুড়ি মেলা ভার। বিশেষ করে প্রেষণে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান পদে যোগ দিয়ে হয়ে উঠেছিলেন বেপরোয়া। বিভিন্ন নদনদী খননকাজের টেন্ডারের কমিশন হিসাবে নিয়েছেন শত শত কোটি টাকা। এছাড়া নদী দখল করে গড়ে তোলা বিভিন্ন শিল্পকারখানা মালিকদের কাছ থেকেও বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। অবৈধ পথে উপার্জিত আয় দিয়ে তিনি বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন। এর মধ্যে শত বিঘার ওপর খামারবাড়ি গড়ে তুলেছেন ঢাকার উপকণ্ঠ নবাবগঞ্জে। এই খামারে বিনিয়োগ করা হয়েছে কয়েক শ কোটি টাকা। খামারের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হিসাবে ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে মিষ্টির চেইন শপ। শামসুদ্দোহা ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দায়ের করা দুর্নীতির মামলার তদন্ত শেষে তাদের বিরুদ্ধে ৬২ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাদের অবৈধ সম্পদের পরিমাণ আরও বেশি। গভীরে গিয়ে তদন্ত করলে তাদের অবৈধ সম্পদের পরিমাণ আরও বেশি হতো। এমনকি রহস্যজনক কারণে অনুসন্ধানের আওতায় তার সন্তানদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শামসুদ্দোহা খন্দকার মঙ্গলবার একটি গণমাধ্যমকে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ সত্য না। দুদকের মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। মামলায় আমরা জামিনে আছি। বিষয়টি আইনিভাবেই মোকাবিলা করব। আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’

জানা যায়, বিআইডব্লিউটিএ-এর চেয়ারম্যান থাকাকালে অবৈধ পথে উপার্জিত বিপুল অর্থ ‘সাদা’ করতে নবাবগঞ্জে কয়েক শ বিঘা জায়গা কেনেন শাসসুদ্দোহা খন্দকার। সেখানে প্রায় শত বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলেন ডেইরি ও ফিশারিজ খামার। ডেইরি খামারে অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান প্রজাতির অন্তত দেড় শ গাভি তোলা হয়। ডেইরি ও ফিশারিজ খামার দেখভালের জন্যও নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল বিআইডব্লিউটিএ-এর কর্মচারীদের। বিষয়টি ফাঁস হলে ওই সময়ে হইচই পড়েছিল।

পারিবারিক ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়, ফিশারিজ ও ডেইরি খামার দেখিয়ে ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগও আছে। বাস্তবে খামার করে কয়েক কোটি টাকা লোকসান হলেও প্রতিবছর আয়কর ফাইলে বিপুল অঙ্কের অর্থ খামারের নামে আয় দেখানো হয়েছে। মূলত ফিশারিজ ও ডেইরি খামারকে তিনি টাকা সাদা করার ‘মেশিন’ হিসাবে ব্যবহার করেছেন। কিন্তু চাকরিজীবনে এত বেশি অবৈধ সম্পদ আয় করেছেন, যা তার বৈধ আয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। শামসুদ্দোহা ও স্ত্রীর দুর্নীতির মামলার তদন্তে এর প্রমাণও পেয়েছে দুদক।

জানা যায়, দুদকের একটি টিম ২০১৮ সালে শামসুদ্দোহা ও স্ত্রীর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধান শেষে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। ফলে ২০১৯ সালে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে সংস্থাটি। টানা প্রায় ৫ বছর তদন্ত শেষে মঙ্গলবার আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। চার্জশিটে বলা হয়, তদন্তকালে শামসুদ্দোহা খন্দকার ও তার স্ত্রী ফেরদৌসী সুলতানা খন্দকারের ‘অপরাধলব্ধ’ আয় পাওয়া গেছে ৬২ কোটি টাকা। শামসুদ্দোহার চেয়ে তার স্ত্রীর অপরাধলব্ধ আয় বেশি। যার পরিমাণ ৪১ কোটি টাকা। শামসুদ্দোহার অপরাধলব্ধ আয় ২১ কোটি টাকা। চার্জশিটে আরও বলা হয়েছে, তাদের দুজনের ব্যাংক হিসাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা হয়েছে। স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবেই জমা হয়েছে ৪১ কোটি টাকার বেশি।

চার্জশিটে আরও বলা হয়েছে, শামসুদ্দোহা সরকারি কর্মকর্তা থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির আশ্রয় নেন। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ আয়কে বৈধ করার পূর্বপরিকল্পনা করেন তিনি। তার নিজের বেতনভাতা বাবদ আয়ের চেয়ে বেশি অর্থ জমা হয় স্ত্রী ফেরদৌসী সুলতানার নামে খোলা বিভিন্ন ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে। স্ত্রী একজন গৃহিণী। তার বেতনভাতার চেয়ে স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে জমা হওয়া অর্থের পরিমাণ ৪১ কোটি ২৯ লাখ টাকা বেশি। আর শামসুদ্দোহার ব্যাংক হিসাবে জমা হয় ২১ কোটি ৫ লাখ টাকা। তদন্তে পাওয়া তাদের অবৈধ অনেক সম্পদ জব্ধও করা হয়েছে।

দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, ২০১২-১৩ থেকে ২০১৯-২০ করবর্ষ পর্যন্ত আয়কর নথিতে ফেরদৌসী সুলতানা যে হিসাব উল্লেখ করেছেন, তা গ্রহণযোগ্য নয়। শামসুদ্দোহা ও ফেরদৌসীর চার সন্তান। সন্তানদের তারা ইংরেজিমাধ্যম স্কুলে পড়িয়েছেন। তিনজনকে পড়িয়েছেন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায়। সন্তানদের পড়াশোনা এবং সংসারের ব্যয় মিটিয়ে শামসুদ্দোহা ও স্ত্রী যে সম্পদ অর্জন করেছেন, তা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত। ফেরদৌসী দুদকে দাখিল করা সম্পদবিবরণীতে সম্পদের উৎস হিসাবে স্বামীর দেশে-বিদেশে চাকরি, যুক্তরাজ্যে নিজের তিন বছরের চাকরি, কৃষি খামার ও ব্যবসার আয় এবং মায়ের দান, জমি ও ফ্ল্যাট বিক্রির কথা উল্লেখ করেন। তবে দুদক আদালতে জানিয়েছে, এই উৎসগুলোর সপক্ষে ফেরদৌসী প্রমাণপত্র জমা দেননি। শামসুদ্দোহার কাছ থেকেও প্রমাণপত্র পাওয়া যায়নি। প্রমাণপত্র জমা দেওয়ার জন্য শামসুদ্দোহা ও ফেরদৌসীকে কয়েদ দফা নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। তারা কোনো বক্তব্য দেননি, নথিপত্রও জমা দেননি। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ফেরদৌসীর ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেন স্বামী শামসুদ্দোহার অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ বলে পরিলক্ষিত হয়।

তদন্তে পাওয়া বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে, শামসুদ্দোহার তিনটি ব্যাংক হিসাবে প্রায় ২৯ কোটি টাকা জমা হওয়ার তথ্য পেয়েছে দুদক। এর মধ্যে অবসরে যাওয়ার দুই মাস আগে (২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর) ঢাকার একটি বেসরকারি ব্যাংকে হিসাব খোলেন তিনি। ২০২২ সালের ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত ওই হিসাবে জমা হয় প্রায় ১৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা। আর শামসুদ্দোহার স্ত্রী ফেরদৌসী সুলতানার আয়ের কোনো উৎস নেই। অথচ তার ছয়টি ব্যাংক হিসাবে ৪১ কোটি ২৯ লাখ টাকা জমা হওয়ার তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। তার নামে ২০১২ সালের ২৯ নভেম্বর একটি বেসরকারি ব্যাংকে হিসাব খোলা হয়। ২০২২ সালের ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত শুধু ওই হিসাবে জমা হয় ৩৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

দুদকের তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যে, একটি ব্যাংকের ঢাকার নবাবগঞ্জ শাখা থেকে শামসুদ্দোহা ও স্ত্রীর যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান অর্গানিক অ্যাগ্রো ফার্মসের নামে ৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা ঋণ নেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির অবকাঠামো তৈরির কাজে ব্যয় করা হয় ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। বাকি অর্থ স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। তবে অর্গানিক অ্যাগ্রো ফার্মস নামের কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব না পাওয়ার তথ্য আদালতকে জানিয়েছে দুদক। তারা বলেছে, ২০১২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত শামসুদ্দোহার ব্যাংক হিসাবে ঋণের অর্থ বাদ দিয়ে লেনদেনের পরিমাণ ২১ কোটি টাকার কিছু বেশি। এছাড়া শামসুদ্দোহা ঢাকার গুলশানের ১৩৫ নম্বর সড়কে একটি সরকারি বাড়ি দীর্ঘদিন ধরে দখল করে রেখেছেন। সাতদিনের মধ্যে বাড়িটি ছাড়ার জন্য তাকে ১৫ মে নোটিশ দেয় সরকারি আবাসন পরিদপ্তর। এরপরও তিনি বাড়িটি ছাড়েননি বলে জানা গেছে। এর আগে বাড়িটির দখল নিতে গেলে গুলি করার হুমকিও দিয়েছিলেন শামসুদ্দোহা।

জানা যায়, ১৯৮৬ সালে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসাবে পুলিশবাহিনীতে যোগ দেন শামসুদ্দোহা। ২০১১ সালে অতিরিক্ত আইজিপি থাকাবস্থায় তাকে প্রেষণে বিআইডব্লিউটিএ-এর চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয় সরকার। দায়িত্ব পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে সীমাহীন অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ ওঠে। এরপর ২০১৫ সালে তাকে বিআইডব্লিউটিএ-এর চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ২০১৬ সালের ৩ মার্চ চাকরি থেকে অবসরে যান। দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মীর আহমেদ আলী সালাম বলেন, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি পদমর্যাদার একজন সরকারি চাকরিজীবী ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে বিপুল অর্থের লেনদেনের ঘটনা অস্বাভাবিক। দুদক অভিযোগ প্রমাণের জন্য তথ্যপ্রমাণ আদালতে জমা দিয়েছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions