ডেস্ক রির্পোট:- মারা গেছেন টানা ৩২ বছর কারাগারে থাকা আলোচিত সেই জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গতকাল ভোরে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। জল্লাদ শাহজাহানের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার বোন ফিরোজা বেগম। সাভারের হেমায়েতপুরের কাশেম আলীর একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন শাহজাহান। গতকাল ভোরে তার বুকে ব্যথা ওঠে। সে সময় তাকে হেমায়েতপুর থেকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার বাড়ির মালিক। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, শাহজাহানের লাশ গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলার পলাশের ইছাখালীতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে তার জানাজা শেষে দাফন করা হবে।
ডিএমপি’র শেরেবাংলা নগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সজীব দে বলেন, গতকাল ভোরে বুকে ব্যথা নিয়ে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় শাহজাহানকে।
সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
সূত্র জানায়, শাহজাহান ভূঁইয়া নরসিংদীর পলাশ উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবার নাম হাছেন আলী ভূঁইয়া। নানা অপরাধে গ্রেপ্তারের পর শাহজাহানকে ১৯৯১ সালের ১৭ই ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে নেয়া হয়। ২০২৩ সালের ১৮ই জুন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। দীর্ঘ কারাবাসের সময় ২০০১ সালে সহযোগী জল্লাদ হিসেবে গফরগাঁওয়ের নূরুল ইসলামকে ফাঁসি দিয়ে শাহজাহান ‘জল্লাদ’ জীবনের সূচনা করেন। এরপর কারাগারে কারও মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময় হলেই ডাক পড়তো তার। টানা ৮ বছর এই কাজ করার পর কারা কর্তৃপক্ষ তাকে প্রধান জল্লাদের স্বীকৃতি দেন। মোট ২৬ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন এই শাহজাহান। তবে তার দাবি ছিল ৬০ জন। এই তালিকায় রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ ঘাতক- লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মেজর বজলুল হুদা, লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি) ও লে. কর্নেল এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার) ও ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মাজেদ, কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদার, জঙ্গি নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানী, শারমীন রীমা হত্যার আসামি খুকু-মনি, ডেইজি হত্যা মামলার আসামি হাসান। এ ছাড়া ৪ যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসিও দিয়েছেন জল্লাদ শাজাহান। মানবতাবিরোধী অপরাধী আবদুল কাদের মোল্লা, সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও মীর কাসেম আলীরও তিনি ফাঁসি দিয়েছেন বলে জানা গেছে। ৭৪ বছর বয়সী শাহজাহান কারাভোগ শেষে মুক্তি পাওয়ার পর এক তরুণীকে বিয়ে করেন। কিন্তু তার এই সংসার বেশি দিন টিকেনি। গত ১লা এপ্রিল জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জল্লাদ শাহাজাহান বলেছিলেন, জীবন এত কঠিন হবে জানলে কারাগারেই থেকে যেতাম। জেল থেকে বের হয়ে নানাভাবে প্রতারিত হয়েছি।