খাগড়াছড়ি:- বর্ষা অপরূপ ঋতু আর এই বর্ষা ঋতুতেই বারবার হৃদয় যেন প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে উৎসব মুখর হয়ে ওঠে প্রবল আনন্দে। আর এদেশের গ্রাম-বাংলার মানুষ ও সংস্কৃতিমনা মানুষেরা উৎসবের আয়োজনে মেতে ওঠে। মানুষ এবং প্রকৃতির মধ্যে যে সম্পর্ক আর এর মধ্যে ফুটে উঠে দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। বর্ষা মানবজীবনকে করে সরস এবং কাব্যময়। বর্ষা উৎসবকে পার্বত্য চট্টগ্রামে ঐতিহ্যবাহী উৎসব হিসেবে প্রতিবছর বাংলার আষাঢ় মাসে প্রথম সপ্তাহের আগে অথবা পরে পালন করে থাকে। বর্ষা মৌসুম অর্থনৈতিক জীবনের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক জীবনে ও ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে তাই সমগ্র বাংলার মানুষ মেতে উঠে বিভিন্ন আনন্দ ও উৎসবে। বর্ষা উৎসবকে ত্রিপুরা সম্প্রদায়েরা বলে “হালপুলুং”, মারমা সম্প্রদায়েরা “ই ফাইয়া লা” এবং চাকমা সম্প্রদায়েরা “আলপালনি” বলে থাকে।
শুক্রবার (২১ জুন) বিকাল ৫টায় খাগড়াছড়িতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের বর্ণিল আয়োজনে পার্বত্য চট্টগ্রামের ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী আলপালনি উৎসব ও বর্ষা উৎসব উদযাপিত হয়েছে।
জেলা সদরস্থ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের অডিটোরিয়ামে এ উপলক্ষে নানান অনুষ্ঠানমালা এবং ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমা (ত্রিমাচা) তাদের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এ অনুষ্ঠানে জেলা পরিষদের সদস্য ও সংস্কৃতি বিভাগের আহ্বায়ক নিলোৎপল খীসা’র সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান এবং অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক ও গবেষক প্রভাংশু ত্রিপুরা।
এ উপলক্ষে আলোচনা সভায় ভ্যালেন্টিনা ত্রিপুরা’র সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন অত্র ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক জীতেন চাকমা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, এই পাহাড়ে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী তাদের নিজস্ব বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতিতে ভরপুর। নিজস্ব সংস্কৃতিকে যদি আমরা ধরে রাখতে পারি। আমাদের সংস্কৃতি ধারণ করা ও সম্প্রসারণ করার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সারাবিশ্বে আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ছড়িয়ে দিতে হবে। এজন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
আলোচনা সভার পরপরেই চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের নৃত্যশিল্পীদের পরিবেশনায় মনোগ্ধ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের নির্বাহী সদস্য এ্যাডভোকেট অংসুইথুই মারমা, সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মো. শানে আলম প্রমুখ।
এ সময় খাগড়াছড়ি লেডিস ক্লাবের সভানেত্রী ও জেলা প্রশাসকের সহ-ধর্মিণী রাবেয়া চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. নজরুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক নাজমুন আরা সুলতানা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রুমানা আক্তারসহ জেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তা ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের নির্বাহী সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।