শিরোনাম
ঢাকা-দিল্লি পররাষ্ট্রসচিব বৈঠক ডিসেম্বরে, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে আলোচনা হবে কি এবার মারা গেলেন পরীমণির প্রথম সিনেমার পরিচালক জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের পরামর্শ সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সুপারিশ, বদিউল বললেন, ‘বিবেচনায় রয়েছে’ বান্দরবানে নৌকা বাইচ দিয়ে ক্রীড়া মেলা শুরু রাঙ্গামাটিতে সাফজয়ী পাহাড়ের তিন কন্যাকে উষ্ণ সংবর্ধনা পলাতক পুলিশ সদস্যদের বেতন বন্ধ, মামলার প্রস্তুতি শেখ মুজিব দেশে ফ্যাসিবাদের জনক : মির্জা ফখরুল অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীর হাতে পিটুনি নেতাদের বাঁচার উপায় বাতলে দিলেন তারেক রহমান

যে কারণে সুইস ব্যাংক থেকে আমানত সরাচ্ছেন বাংলাদেশিরা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শনিবার, ২২ জুন, ২০২৪
  • ১৩২ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংক বা সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশি নাগরিকদের জমানো অর্থ বা আমানত অস্বাভাবিক হারে কমেছে। ২০২২ সাল শেষে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ৫৩ লাখ সুইস ফ্রাঁ। ২০২৩ সালে তা কমে হয়েছে ১ কোটি ৭৭ লাখ ফ্রাঁ। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ফ্রাঁ ১৩২ টাকা ধরে) যার পরিমাণ ২৩৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে দেশটির ব্যাংক থেকে বাংলাদেশিরা ৩ কোটি ৭৬ লাখ ফ্রাঁ সরিয়ে ফেলেছেন। এ হিসাবে কমেছে ৬৮ শতাংশ। আগের বছর এই হার ছিল ৯৪ শতাংশ। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) সর্বশেষ প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুই বছর ধরে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে।

২০২১ সালে সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমা করা অর্থ ছিল ৮৭ কোটি ১১ লাখ ফ্রাঁ। ২০২২ সালের শেষে তা কমে মাত্র সাড়ে ৫ কোটি ফ্রাঁতে দাঁড়ায়।

সেখান থেকে কমে ২০২৩ সালের শেষে পৌনে ২ কোটি ফ্রাঁতে এসে পৌঁছেছে। অর্থাৎ কমতে কমতে দুই বছরে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত কমেছে ১১ হাজার কোটি টাকা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে অর্থ জমার ক্ষেত্রে আগে যে গোপনীয়তা দেশটি রক্ষা করতো, এখন আর সেটি নেই। এজন্য ধনীরা এখন ঝুঁকছেন দুবাই, বৃটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, কেমান আইল্যান্ড অথবা বারমুডার মতো দেশগুলোর দিকে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ডলার সংকটসহ অর্থনৈতিক সংকটে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা অনেক কমে গেছে। এ কারণে দেশটির ব্যাংকে বাংলাদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জমা অর্থ যেমন উত্তোলিত হয়েছে, তেমনি নতুন করে জমা অর্থেও টান পড়েছে।

সুইস ব্যাংকে থাকা অর্থের একটি অংশ পাচার হয়ে থাকে বলে ধারণা করা হয়। তবে পাচার সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না; এমনকি গ্রাহক আমানত হিসাবে কার কতো অর্থ তাও জানা যায় না। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক গোপনীয়তার স্বার্থে সব ডাটা সমন্বিতভাবে প্রকাশ করে। আলাদাভাবে কোনো গ্রাহক বা ব্যাংকের তথ্য এ প্রতিবেদনে নেই।

উল্লেখ্য, গোপনে অর্থ গচ্ছিত রাখার জন্য বহুদিনের খ্যাতি সুইজারল্যান্ডের। কঠোরভাবে গ্রাহকদের নাম-পরিচয় গোপন রাখে সুইস ব্যাংকগুলো। যে কারণে প্রচলিত বিশ্বাস, অবৈধ আয় আর কর ফাঁকি দিয়ে জমানো টাকা জমা রাখা হয় সুইস ব্যাংকে। নির্দিষ্ট গ্রাহকের তথ্য না দিলেও এক দশক ধরে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক। তাতেই উঠে আসছে এসব তথ্য। তবে প্রায় এক দশক ধরে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশির আমানত বৃদ্ধির পর হুট করে তা কমছে কেন, এর ব্যাখ্যা নেই প্রতিবেদনে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে হয়তো অনেকেই জমা অর্থ তুলে নিয়েছে। এ কারণে গত বছর দেশটির ব্যাংকে জমা বাংলাদেশিদের অর্থ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। তবে দেশ থেকে অর্থ পাচার কমেনি বরং পাচার আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। তিনি বলেন, সুইজারল্যান্ড যেহেতু এখন পাচার হওয়া অর্থের তথ্য সরবরাহের আন্তর্জাতিক চুক্তির আওতায় এসেছে, তাই পাচারকারীরা তাদের গন্তব্য পরিবর্তন করেছে। কারণ, তারা পাচারের অর্থের গোপনীয়তা রক্ষা করে।

সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে শুধু যে বাংলাদেশিদের অর্থ কমেছে, তা নয়। ভারত, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর ও নেপালের নাগরিকদের অর্থও কমেছে। যেমন ২০২২ সালে সুইস ব্যাংকে ভারতীয়দের জমা অর্থের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৪০ কোটি সুইস ফ্রাঁ, যা গত বছর অর্ধেকের বেশি কমে হয়েছে ১০৩ কোটি ফ্রাঁ। একইভাবে ২০২২ সালে দেশটিতে পাকিস্তানিদের জমা অর্থের পরিমাণ ছিল ৩৯ কোটি ফ্রাঁ, যা গত বছর কমে ২৯ কোটি ফ্রাঁতে নেমে আসে। ২০২২ সালে সুইস ব্যাংকে সিঙ্গাপুরীদের জমা অর্থের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৭৮৭ কোটি ফ্রাঁ। গত বছর তা কমে হয়েছে ৪ হাজার ৫৪৭ ফ্রাঁ। নেপালিদের জমা অর্থের পরিমাণও এক বছরে ৩ কোটি ফ্রাঁ কমে হয়েছে ৪৫ কোটি ফ্রাঁ। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৯৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ২৮ বছরে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে বাংলাদেশিদের সবচেয়ে কম অর্থ ছিল গত বছর। আর সর্বোচ্চ ৮৭ কোটি ফ্রাঁ ছিল ২০২১ সালে।
ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সুইস ব্যাংকে জমা অর্থের পুরোটাই যে অবৈধ বা পাচারের অর্থ, তা নয়। কারণ, বৈধভাবেই প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিপর্যায়ের অনেকে দেশটিতে অর্থ জমা রাখেন।

বেসরকারি ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, টাকা পাচার হচ্ছে এটা সত্য ঘটনা। সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীও স্বীকার করেছেন। কিন্তু সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত কমছে। এর একটা কারণ হতে পারে বর্তমানে সুইজারল্যান্ড দেশভিত্তিক রিপোর্ট প্রকাশ করছে। এতে পরিচয় প্রকাশ হওয়ার ভয় কাজ করছে আমানতকারীদের। আরেকটি হতে পারে লাভ যেখানে টাকা যাবে সেখানে। সেই হিসাবে ডলারের দাম বাড়ায় বাংলাদেশি আমানতকারীরা সুইজারল্যান্ড থেকে অর্থ সরিয়ে অন্য দেশে নিচ্ছে বলে মনে করেন সাবেক এই ব্যাংকার।

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) অর্থ পাচার নিয়ে কাজ করে। সংস্থাটি বাণিজ্যের আড়ালে কোন দেশ থেকে কী পরিমাণ অর্থ পাচার হয়, তার প্রাক্কলন করে। জিএফআইর প্রাক্কলন অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি ও রপ্তানির মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে বছরে গড়ে ৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়। সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, অর্থ পাচার থেকেই ডলার সংকটের শুরু বলে অনেকে মনে করেন। বছরে ৭ থেকে ৮ বিলিয়ন (৭০০ থেকে ৮০০ কোটি) ডলার পাচার হয়। এ কারণে ডলার সংকট দেখা দেয়।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions