খাগড়াছড়ি:- এবার ঈদে টানা ছুটিতে খাগড়াছড়িতে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ঈদে বাড়তি আনন্দ উপভোগ করতে পর্যটকরা বেড়াতে ছুটে এসেছেন বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে।
খাগড়াছড়ি জেলায় অনেকগুলো পর্যটন কেন্দ্র থাকলেও সবকিছুকে ছাপিয়ে পর্যটকদের অপার আকর্ষণে বদলে যাওয়া আলুটিলার পর্যটন কেন্দ্র। এ পর্যটনে এ্যাম্ফি থিয়েটার, কুঞ্জ-ছায়া, নন্দন কানন, ব্যতিক্রমী ব্রিজ। এছাড়াও রহস্যময় গুহা ও রিছাং ঝর্ণা পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণী স্থান হিসেবে পরিচিত পেয়েছে।
শহরের অদূরে পার্বত্য জেলা পরিষদ পরিচালিত জেলা পরিষদ হর্টিকালচার পার্ক, ঝুলন্ত সেতু, নয়ানাভিরাম লেক পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। এছাড়া খাগড়াছড়িতে দেখার মতো রয়েছে মায়াবিনী লেক, মায়ুং কপাল (হাতিমাথা পাহাড়), মাতাই পুখিরি, তৈদু ছড়া ঝর্ণা, পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র ও পানছড়ির অরণ্য কুটির।
পর্যটরকরা জানান, তারা পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসেন খাগড়াছড়িতে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঈদের প্রথম দিনে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে বাহিরের পর্যটকের চেয়ে স্থানীয় পর্যটকের সংখ্যা একটু বেশি। হোটেল, মোটেল ও পর্যটন কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধিরা বলছেন, অন্যান্য ঈদের মতো এবারের ঈদের ছুটির দিনগুলোতে জেলার বাইরের পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ছে।
খাগড়াছড়ি হোটেল গাইরিং এর ম্যানেজার প্রান্ত ত্রিপুরা জানান, ঈদের পর দিন থেকে পর্যটকেরা আসতে শুরু করেছে। আশা করি এই কয়েকদিন পর্যটক বাড়বে। আমাদের হোটেলে অনেকে অগ্রিম রুম বুকিং করে রেখেছে। এবার পর্যটকদের আগমন সন্তোষজনক।
খাগড়াছড়ি হোটেল ব্যবসায়ী সমিতি’র সভাপতি কল্যাণ মিত্র বড়ুয়া জানান, অন্যান্য ঈদের চেয়ে এবারের ঈদে বাইরের পর্যটকের সংখ্যা কম। বাইরের পর্যটকদের চেয়ে স্থানীয় পর্যটকদের সংখ্যা বেশি। আমরা এবার বাইরের পর্যটকদের জন্য বিশেষ ছাড়েরও ব্যবস্থা করেছি।
খুলনা থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যম বিশেষ করে ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খাগড়াছড়ির সৌন্দর্য দেখি। এবারই প্রথম পরিবারকে নিয়ে এসেছি। অসাধারণ একটা জায়গা। সত্যি এ সমস্ত দৃশ্য দেখলে প্রাণ জুড়ে যায়।
কুমিল্লা থেকে কয়েকজন পর্যটক বলেন, বর্তমানে খাগড়াছড়ি এখন একটি পর্যটন নগরী শহর, ভবিষ্যতে খাগড়াছড়িতে যেন আরো বহু পর্যটকের আগমন ঘটে এর সৌন্দর্য বর্ধনের প্রশাসন আরো কাজ করবে এমনটাই প্রত্যাশা করেন তারা।
আলুটিলায় পর্যটন কেন্দ্রে কথা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া একঝাঁক শিক্ষার্থীর সাথে। তাঁরা বলেন, অনেকদিন আগে আমরা বন্ধুরা মিলে পরিকল্পনা করি খাগড়াছড়ি পাহাড়ের সৌন্দর্য্য আর সাজেক পাহাড়ের মেঘ দেখবো। পরিকল্পনা অনুযায়ী এবার ঈদের রাতে আমরা ২০ জন বন্ধু মিলে দুইদিনের সফরে খাগড়াছড়ি ও সাজেক ঘুরতে এসেছি। সাজেক থেকে ফিরে এখন খাগড়াছড়ির দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখতেছি। অসাধারণ ভিউ, অন্যরকম অনুভূতি। ভালই লাগছে। সুযোগ পেলেই এই পাহাড়ের সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য বারবার ছুটে আসবো।
আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের টিকেট কাউন্টার ম্যানেজার কোকোনাথ ত্রিপুরা বলেন, ঈদের প্রথম দিনের চেয়ে আজকে পর্যটক বাড়ছে। ঈদের প্রথম দিনে স্থানীয় লোকজন ছাড়া বাইরের পর্যটক তেমন ছিলো না। তবে সকাল থেকে পর্যটকের আনা-গোনা অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি মনে হচ্ছে। আজ সকাল থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি টিকেট বিক্রি হয়েছে। এই কয়েকদিন পর্যটকদের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশা করছেন তিনি।
পর্যটকদের আগমনে সন্তোষ প্রকাশ করেছে খাগড়াছড়ির রেস্তোরাঁ মালিকেরা। হেরিটেজ ডাইনের মালিক চিং ওয়েং চৌধুরী জানান, তাঁদের রেস্টুরেন্টে আজ থেকে আগামী শুক্র ও শনিবার পর্যন্ত খাবারের অর্ডার করা আছে। অন্যান্য দিনের চেয়ে এবার পর্যটকদের আনাগোনা মোটামুটি মনে হচ্ছে।
খাগড়াছড়ি হর্টিকালচার পার্ক, আলুটিলা পর্যটনে টেক্সাটাইল ও হ্যান্ডি ক্রাফটের কর্মরত বিক্রয়কর্মী গীতা চাকমা ও সুমিতা ত্রিপুরা বলেন, পর্যটকেরা আসায় বিক্রি বেড়েছে। দৈনিক গড়ে ১৫হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে খাগড়াছড়ি শহরস্থ মাধুরী টেক্সটাইলের বিক্রয়কর্মী জরিতা ত্রিপুরা বলেন, এই ঈদে পর্যটকেরা বেশির ভাগই পর্যটনমুখী হওয়ায়, শহরের আমাদের স্টলগুলোতে তেমন বেঁচা-বিক্রি নেই। আমাদের এখানে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত পর্যটকেরা কমই আসছে।
খাগড়াছড়ি টুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হাসান ইকবাল চৌধুরী জানান, আজ থেকে ২২ জুন পর্যন্ত এ জেলায় পর্যটকদের বেশি আগমন ঘটবে। জেলার প্রত্যেকটি পর্যটন স্পটে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য আমাদের টিম নিরলসভাবে কাজ করছে। বাইরের পর্যটক ও স্থানীয় পর্যটকরা যেন নিরাপদে ঘুরতে পারেন, সেইসাথে তারা যেন নিরাপদে ফিরে যেতে পারেন এ বিষয়ে ট্যুরিস্ট পলিশ