ডেস্ক রির্পোট:- ২০ দিনের মাথায় দ্বিতীয় দফা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে সিলেট। গত ২৭ মে সিলেটে আগাম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে জেলার সব উপজেলার সাড়ে ৭ লাখ আক্রান্ত হন। সেই বন্যার পানি পুরোপুরি নামার আগেই শনিবার (১৫ জুন) ফের কবলিত সিলেট। সিলেটে এবারের ঈদ আনন্দ ভাসছে বানের জলে।
রবিবার (১৬ জুন) রাতে সিলেট জেলা প্রশাসন জানিয়েছে- জেলার ১৩টির মধ্যে ১০টি উপজেলার প্রায় দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দী। তবে সোমবার ভোররাত থেকে সিলেটে ঝরছে ভারী বৃষ্টি। সঙ্গে নামছে উজানের ঢল। ফলে সোমবার সকালের মধ্যেই প্রায় সকল উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা গিয়েছে। এছাড়া সিলেট মহানগরের অধিকাংশ এলাকায় দেখা দিয়েছে বন্যা। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান সড়ক তলিয়েছে পানিতে।
এ অবস্থায় বেশিরভাগ ঈদগাহে ঈদুল আজহার জামাত বাতিল করে স্থানীয় মসজিদগুলোতে নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা। সিলেটে প্রধান ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় শাহী ঈদগাহে। প্রতি বছর দেড় থেকে দুই লাখ মুসল্লির সমাগম ঘটলেও এবার বৃষ্টির কারণে মুসল্লি ছিলেন মাত্র কয়েক হাজার।
এদিকে, বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পনি ঢুকে পড়ায় সিলেট মহানগরের কোরবানিদাতারা পড়েছেন বেশ বিপাকে। অনেকে কোরবানির পশু দুতলায় উঠিয়ে রেখেছেন। পানি না নামলে কোরবানি দিতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন অনেকে। অনেকে বলছেন- দু-একদিন পরে কোরবানি দিতে হতে পারে।
সকালে সিলেট মহানগর ঘুরে দেখা গেছে- নিম্ন সব এলাকা পানিতে নিমজ্জিত। বিশেষ করে শাহজালাল উপশহর পুরোটাই পানির নিচে। অনেকের বাসার নিচতলায় গলা পর্যন্ত পানি। এছাড়া শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, তালতলা, কাজিরবাজার, মাদিনা মার্কেট, আখালিয়াসহ নগরের অধিকাংশ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।
এছাড়া মহানগরের মধ্যে অনেক প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কে উঠেছে পানি। এয়ারপোর্ট সড়ক, সিলেট-তামাবিল সড়ক, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোডসহ বিভিন্ন সড়কের বেশ কয়েকটি স্থান তলিয়ে গেছে। কোনো কোনো স্থানে কোমর পর্যন্ত পানি। এ অবস্থায় নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন মানুষজন।
সিলেট আবহাওয়া অফিস সূত্র জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় (রবিবার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত) সিলেটে ১৭৩.৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর আজ সকাল ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত হয়েছে ৮৬ মি.মি বৃষ্টি। এ রিপোর্ট লেখা (বেলা ১১টা) পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে।
সিলেট জেলা প্রশাসন রবিবার রাতে জানায়, সিলেটের সদর, দক্ষিণ সুরমা, ওসমানীনগর, বিশ্বনাথ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, গোলাপগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলার ১ লাখ ৪২ হাজার ১৮৫ জন লোক বন্যায় আক্রান্ত। এসব উপজেলার ৫১২টি গ্রাম রবিবার পর্যন্ত প্লাবিত হয়েছে। সিলেটের সব উপজেলায় ৫৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। শনিবার থেকে এসব কেন্দ্রে মানুষজন আসতে শুরু করেন।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, ঈদের সকাল ৯টা পর্যন্ত সিলেটে ৩টি নদীর পানি ৩টি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমার পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারার পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ও সারি নদীর পানি সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া সিলেটের সকল নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।