আসামি ‘ছিনিয়ে’ নিতে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ, আনোয়ারা রণক্ষেত্র,ওসিসহ আহত ২০

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় সোমবার, ১০ জুন, ২০২৪
  • ৬৮ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- গ্রেপ্তারের পর হ্যান্ডকাপ পরানো যুবলীগের এক নেতাকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশের সাথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় আনোয়ারা আবার রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। শনিবার রাত ১১ টার দিকে চাতরী চৌমুহনী বাজারের টানেল চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। এতে কর্ণফুলী থানার ওসিসহ অন্তত ৬ পুলিশ ও স্থানীয় আরো ১৫ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় নব নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হককে প্রধান আসামি করে আনোয়ারা থানায় ৪৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল কর্ণফুলী থানার বন্দর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মিজানুর রহমান মামলাটি দায়ের করেন। যাকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল সেই মো. মোজাম্মেল হককেও আসামি করা হয়েছে। আনোয়ারা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সোহানুর রহমান সোহাগ সাংবাদিকদের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মোজাম্মেল হককে প্রধান আসামি করা হয়েছে। মামলায় ৪৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ১৫০ থেকে ২০০ জনকে।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, ‘শনিবার রাতে কর্ণফুলী থানার একটি মামলার প্রধান আসামি মো. মোজাম্মেলকে টানেল রোডের মুখে একটি রেস্টুরেন্টের সামনে থেকে আটক করা হয়। এ সময় তিনি পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তি শুরু করেন। তখন তাকে গ্রেপ্তার না করতে সদ্য নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মোজাম্মেল হক ও তার অনুসারীরা কর্ণফুলী থানার ওসিকে বাধা দেন। পরবর্তীতে পুলিশের ওপর হামলা করে আসামিরা মোজাম্মেলকে হ্যান্ডকাপসহ ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।’

মামলার বাদী বন্দর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মিজানুর রহমান জানান, পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনতাই এরপর কর্ণফুলী থানার ওসি সহ পুলিশ সদস্যের ওপর হামলার ঘটনায় আনোয়ারা থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

জানা গেছে, শনিবার রাত ১১ টার দিকে গ্রেপ্তারের পর হ্যান্ডকাপ পরানো যুবলীগের এক নেতাকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশের সাথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে কর্ণফুলী থানার ওসিসহ অন্তত ৬ পুলিশ ও স্থানীয় আরো ১৫ জন আহত হয়েছেন। উপজেলার চাতরী চৌমুহনী বাজারের টানেল চত্বরে এই ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১৮ রাউন্ড গুলি ছুড়ে। পুলিশের একটি গাড়িও ভাঙচুর হয় বলে জানিয়েছেন পুলিশের আনোয়ারা সার্কেলের এএসপি সোহানুর রহমান সোহাগ। পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ব্যক্তির নাম মোজাম্মেল হক। তিনি যুবলীগ নেতা এবং নব নির্বাচিত আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যানের অনুসারী।

পুলিশের গুলিতে স্থানীয় ১২জন নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ আহত হন বলে জানান আনোয়ারা উপজেলার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান কাজী মোজাম্মেল হক। আহতরা সবাই অর্থপ্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানের অনুসারী। ঘটনার পর থেকে গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, শনিবার রাত ১১টার দিকে পুলিশের একটি দল টানেল চত্বরে অবস্থানরত যুবলীগ নেতা মোজাম্মেল হককে আগের দিন কাফকো সেন্টারে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলার আসামি বলে আটক করে গাড়িতে তুলে নেয়ার চেষ্টা করে। এসময় পুলিশের সাথে বাকবিতন্ডা ও ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানের অনুসারীরা মোজাম্মেল হককে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনার জেরে পুলিশ ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। মুহূর্তে চাতরী চৌমুহনী বাজারে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এতে কর্ণফুলী থানার ওসি জহির হোসেনসহ ৬ পুলিশ সদস্য ও বেশ কয়েকজন স্থানীয় ও আওয়ামী লীগ কর্মী আহত হন।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার বিকেলে উপজেলার রায়পুর এলাকায় অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানের সঙ্গে স্থানীয় লোকজনের একটি মতবিনিময় সভা ছিল। ওই অনুষ্ঠান শেষ করে আনোয়ারা উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান কাজী মোজাম্মেল হক ও তাঁর কর্মী মোজাম্মেল হক চাতরী চৌমুহনী বাজারের টানেল চত্বরে একটি রেস্তোরাঁয় নাশতা করছিলেন। ওই সময় পুলিশ মোজাম্মেল হককে মামলার আসামি উল্লেখ করে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার সময় ঘটনার সূত্রপাত হয়।

আনোয়ারা সার্কেলের এএসপি সোহানুর রহমান সোহাগ ঘটনার বিবরণ দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘শুক্রবারের ঘটনায় কর্ণফুলী থানায় মামলা হলে কর্ণফুলী থানা ও আনোয়ারা থানা পুলিশ যৌথভাবে চাতরী চৌমুহনী বাজারে অভিযান চালায়। ওই সময় এজাহারনামীয় প্রধান আসামি মোজাম্মেল হককে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাবার সময় তাদের অনুসারীরা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে অভিযুক্ত আসামিকে হ্যান্ডকাপসহ ছিনিয়ে নেয়।’ ঘটনায় আহতরা হলেন কর্ণফুলী থানার ওসি মো. জহির হোসেন, এসআই মো. মিজানুর রহমান, এএসআই কামাল উদ্দিন ও আবুল বাশার গাজী, কনস্টেবল অর্ক বিশ্বাস ও নিপন দেব। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ ১৮ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে।

এ ব্যাপারে আনোয়ারা উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান কাজী মোজাম্মেল হক বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি রেস্তোরাঁর ওয়াশরুমে ছিলাম। সেখান থেকে এসে দেখি মোজাম্মেলকে ধরে গাড়িতে তুলে ফেলেছে পুলিশ। আমি বের হয়ে আটকের বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ারা থানার ওসি লাঠি হাতে আমার দিকে তেড়ে এসে বলেন, মোজাম্মেল মামলার আসামি, তাই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তখন উপস্থিত বিক্ষুব্ধ জনতা মোজাম্মেলকে কেড়ে নেয়।’ তিনি বলেন, মোজাম্মেল হক একজন রাজনৈতিক নেতা ছাড়াও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী সে তো পলাতক আসামি না। তাকে কেন এভাবে গ্রেপ্তার করতে হবে। তার আগে গত শুক্রবার বিকেল সোয়া চারটার দিকে উপজেলার বন্দর সেন্টার এলাকায় বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান এবং সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর অনুসারীদের ডাকা পৃথক সমাবেশে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক এম এ মান্নান চৌধুরীসহ উভয় পক্ষের ২০জন আহত হন। এ ঘটনায় অধ্যাপক এম এ মান্নান চৌধুরী বাদী হয়ে কর্ণফুলী থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ এ মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনা করে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions