কাজী মোশাররফ হোসেন, কাপ্তাই:- কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ে চরম ঝুঁকি নিয়ে শতাধিক পরিবার বসবাস করছেন। উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাহাড়ের ঢালে এসব পরিবার বছরের পর ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন বলে জানা গেছে। স্বাভাবিক সময়ে এদের নিয়ে কারো চিন্তা ভাবনা না হলেও বর্ষা মউসুম শুরু হলেই ঝুঁকিতে বসবাসরত পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সবাই চিন্তিত হয়ে পড়েন। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে উপজলোর ঢাকাইয়া কলোনী, লগগেইট, চিৎমরম, শীলছড়ি, বরইছড়িসহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ের ঢালে অসংখ্য পরিবার বসতি গড়ে তুলেছেন। তবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি নিয়ে বিসবাস করছেন ঢাকাইয়া কলোনী এবং লগগেইট এলাকার
বিপুল সংখ্যক পরিবার। ঢাকাইয়া কলোনীতে পাহাড় কেটে এবং পাহাড়ের ঢালে ঝুপড়ি ঘর তুলে এমন অনেক পরিবার বসবাস করছেন যাদের দেখলেই ভয়ে আত্মা কেঁপে উঠে। মনে হবে এই বুঝি ঘর ভেঙ্গে গভীর খাদে পড়ে গেল। বসতিদের অনেকে সেমিপাকা ঘর তুলেছেন। কেউ টিনের ঘর এবং এই চরম ঝূঁকির মধ্যে থেকেও কেউ কেউ দোতলা ঘরও বানিয়েছেন। ঢাকাইয়া কলোনী এবং লগগেইটে কাপ্তাই সড়কের পাশে যারা বসতি গড়ে তুলেছেন তারা সবাই চরম ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন
কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ। তিনি বলেন, এরা সবাই অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সদস্য। এদের অনেকেই ক্ষুদ্র আয়ের মানুষ। তিনি বলেন, ঢাকাই কলোনীর একটি ঘরের সাথে আরেকটি ঘর জালেরমত জড়িয়ে আছে। একটি ঘর ভেঙ্গে পড়লে হুড়মুড় করে অনেক ঘরে একসঙ্গে ভেঙ্গে পড়বে বলেও তিনি আশঙ্কা করছেন। কাপ্তাইয়ে মৌজা না থাকায় চ্ছিন্নমূল মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া যাচ্ছেনা। তবে এদের নিয়ে প্রশাসন সবসময় চিন্তিত থাকে বলেও তিনি জানান। ভারী বৃষ্টি হল এবং ঝড় তুফান ও দমকা হাওয়া লাগলেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে কাপ্তাই উচ্চবিদ্যালয়ে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়। সম্প্রতি সৃষ্ট হওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘মেরাল’ আঘাত হানলে ঢাকাইয়া কলোনীর বাসিন্দারা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবেন সেই চিন্তায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কাপ্তাই উচ্চবিদ্যালয়ে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছিল বলে জানান কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মহিউদ্দিন। কাপ্তাই উপজেলার অনেক স্থানে বেশ কয়েকটি পরিবার চরম ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, ঘূর্ণিঝড় মেরালের সময় উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ১৭টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছিল। ভারী বৃষ্টিপাত হলে ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের নিয়ে প্রশাসন চিন্তিত থাকেন বলেও উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান। ঢাকাইয়া কলোনীতে বসবাসকারী কয়েকজন এই প্রতিনিধিকে বলেন, আসলে আমাদের যাবার আর কোন জায়গা নেই। যেভাবে বসবাস করছি তা জীবনের জন্য চরম ঝুঁকি জেনেও আমরা নিরুপায় হয়ে পাহাড়ের ঢালে মানবেতর জীবন যাপন করছি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জানান, কাপ্তাইকে মৌজা ঘোষণা করার জন্য আমরা বছরের পর বছর ধরে দাবি জানিয়ে আসছি। মৌজার দাবীতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক, স্থানীয় সংসদ সদস্য, স্থানীয় সরকার মন্ত্রীসহ সরকারের সকল পর্যায়ে আমরা লিখিত আবেদন করেছি। কিন্তু মৌজা ঘোষণার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।