বিএনপির প্রতিক্রিয়া: কর-ঋণনির্ভর লুটেরাবান্ধব বাজেট

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় সোমবার, ১০ জুন, ২০২৪
  • ৯১ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- আগামী অর্থবছরের (২০২৪-২৫) প্রস্তাবিত বাজেট প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। দলটি বলেছে, এটি কর ও ঋণনির্ভর এবং লুটেরাবান্ধব বাজেট। এই বাজেট ফোকলা অর্থনীতির ওপর দাঁড়ানো কল্পনার এক ফানুস।

গতকাল রবিবার বিকেলে দলীয় চেয়ারপারসনের ঢাকার গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই মন্তব্য করেন।

লিখিত বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, অসহনীয় মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ জনগণের ত্রাহি অবস্থা। এর পরও বাজেটে করের বোঝা চাপানো হয়েছে। লুটেরা সরকারের এই বাজেট কেবল দেশের গুটিকয়েক লুটেরার জন্য, যারা শুধু চুরিই করছে না, তারা ব্যবসা করছে, তারাই নীতি প্রণয়ন করছে, আবার তারাই পুরো দেশ চালাচ্ছে।

বিএনপি আমলে অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান প্রতিটি বাজেটের আগে ভিক্ষার থলি নিয়ে ঘুরতেন—আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন বক্তব্যের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এবারের বাজেট দেখেই বোঝা যায় কারা ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে ঘুরছে।
পুরো বাজেটই ভিক্ষার, তার মধ্যে নিজস্ব কিছুই নেই। বাজেট পুরোপুরি ঋণনির্ভর। তার ওপর ঘাটতি বাজেট। সেই ঘাটতি মেটানো হচ্ছে ঋণ দিয়ে।
একদিকে বৈদেশিক ঋণ, অনদিকে অভ্যন্তরীণ ঋণ। যে মানুষগুলো খাদের গর্তে পড়ে গেছে, তাদের ওপর তথাকথিত হাতি চেপে বসেছে, তাদের কাছ থেকে আবার ঋণ নেওয়া হবে। পুরো বাজেটই করা হয়েছে মেগাপ্রকল্প, মেগাচুরির জন্য, দুর্নীতি করার জন্য।

দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ত্রিশঙ্কু দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, অপ্রয়োজনীয় মেগাপ্রকল্পগুলো বা অর্থহীন, অনুৎপাদক দৃশ্যমান অবকাঠামোগুলো বন্ধ রাখা উচিত। এই টাকায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ জনকল্যাণমুখী খাতে ব্যবহার এবং সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী আরো সম্প্রসারিত করা যেত।
কিন্তু সেগুলো বন্ধ করলে তো দুর্নীতির পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। তাই বোধগম্য কারণেই সেটা করা হয়নি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে সমালোচনা করেন তিনি। বিএনপি মহাসচিব মনে করেন, বাজেটে কর্মসংস্থান তৈরির কোনো দিকনির্দেশনা নেই।

ফখরুল বলেন, ডলার সংকটের কথা বলে আমদানি সংকুচিত করায় মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি প্রায় অবরুদ্ধ, যার ফলে শিল্প-কারখানা বন্ধের পথে। ব্যাংকগুলো শূন্য। সুদের হার অনেক বেশি। সরকার নিজেই ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণ নেওয়ায় বেসরকারি খাতে ঋণপ্রাপ্তির সুযোগ কমে গেছে। এফডিআই-ও (সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ) শূন্যের কোঠায়। নতুন কর্মসংস্থান না থাকায় শ্রমিকরা গ্রামে চলে যাচ্ছেন, কিন্তু সেখানেও তাঁদের কাজের সুযোগ নেই। নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির কোনো আশা বাজেটে নেই। নেই চাকরিহারা ও দুর্দশাগ্রস্ত শ্রমিকদের পুনর্বাসনের পথনকশা।

তিনি বলেন, এই বাজেট শুধু গণবিরোধী নয়, বাংলাদেশবিরোধীও। যে গণমানুষ নিয়ে বাংলাদেশ, সেই গণমানুষের অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়েছে।

মূল্যস্ফীতি কমানোর বিষয়ে বাজেটে কোনো পথনির্দেশনা নেই উল্লেখ করে বিএনপির মুখপাত্র বলেন, সরকারি আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তাদের আশীর্বাদপুষ্ট কিছু সিন্ডিকেটের কারণেই নিত্যপণ্যের দাম গত বছরের তুলনায় কয়েক গুণ বেড়েছে। এসব সিন্ডিকেট কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, বাজেটে তার কোনো আলোচনাই স্থান পায়নি।

মির্জা ফখরুল মনে করেন, বাজেটে আয়ের চেয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে বেশি। পুরো বোঝাটা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে সাধারণ মানুষের ওপর। ঋণ ও ঘাটতিভিত্তিক বাজেট অতীতেও বাস্তবায়িত হয়নি, আগামী দিনেও হবে না। বাজেটের এক-তৃতীয়াংশ ঘাটতি যা মেটানোর প্রস্তাব করা হয়েছে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণ নিয়ে। ঋণ দিয়ে ঋণ পরিশোধের ফন্দি। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি, অর্থপাচার, ধনী-দরিদ্র বৈষম্য রোধে সরকার ব্যর্থ।

মোবাইল ফোনে কথা বলার বিল ও ইন্টারনেট পরিষেবার বিল এবং ল্যাপটপের আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাবের সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, সরকারি কাজে ব্যয় সংকোচন, ব্যাংকিং খাতে নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা স্থাপন কিংবা আর্থিক খাতে মৌলিক সংস্কার নিয়ে এই বাজেটে কোনো উদ্যোগ নেই।

কালো টাকা সাদা করার প্রস্তাবের বিরোধিতা করে ফখরুল বলেন, এর ফলে সত্ ও বৈধ করদাতাদের নিরুত্সাহ এবং দুর্নীতিকে উত্সাহিত করা হয়েছে। দুর্নীতি করার এই লাইসেন্স দেওয়া অবৈধ, অনৈতিক ও অসাংবিধানিক। সরকারের আনুকূল্যে বেড়ে ওঠা আজিজ-বেনজীরদের মতো দুর্নীতিবাজদের কালো টাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ সৃষ্টির জন্যই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, জোট সরকারের পুরো সময় কালো টাকা সাদা করার সুযোগ ছিল না। কোনো একটি অর্থবছরে এই বিধান ছিল কি না তা তিনি নিশ্চিত নন। তিনি বলেন, বিএনপি আমলে সমষ্টিগত অর্থনীতি সবচেয়ে ভালো ছিল। এখনকার মতো ছিল না।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions