আনার হত্যা রহস্যজনক তদন্ত,দুদকের তদন্তে উন্মোচিত হতে পারে প্রকৃত মোটিভ

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় রবিবার, ৯ জুন, ২০২৪
  • ৮২ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- ভারতের কোলকাতায় বাংলাদেশের ঝিনাইদহ-৪ আসনের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের হত্যাকাণ্ডের রহস্যের কিনারা হয়নি। লাশ না পাওয়ায় খুন নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। আবার হত্যাকাণ্ড তদন্ত নিয়েও রহস্যের সৃষ্ট করছে। স্বর্ণ চোরাচালানি, সীমান্তে মাদক পাচারকারী, মাফিয়া ডন হিসেবে চিহ্নিত আনার হত্যাকাণ্ডের তদন্ত পুলিশ করবে সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কোলকাতা ও নেপালে দৌড়ঝাঁপ করলেও অপরাধ জগতের চিহ্নিত গড়ফাদার, আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রক, মাদক কারবারী এবং সোনা চোরাচালানি হিসেবে আনারের আস্তানাগুলোর দিকে কোনো নজর নেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর। দেশি-বিদেশি কিছু গণমাধ্যমে অনুসন্ধানি সংবাদ বের হয়েছে চোরাচালানির টাকা ভাগবাটেয়ারা নিয়ে খুব হতে পারেন আনার। কিছু গণমাধ্যম লিখেছে আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণের বিরোধে আনার খুন হতে পারে। আবার ঝিনাইদহের স্থানীয় মানুষ আনারের অসংখ্য লোমহর্ষক অপকর্মের চিত্র প্রকাশ করেছেন। কিন্তু তদন্তকারীদের সেদিকে নজর দৃশ্যমান নয়। আনারের বসুন্ধরা ও গুলশানের ফ্লাট এবং ঝিনাইদহের যে রিসোর্টে (আস্তানা) আনার আমোদ-ফূর্তি করতেন; সেগুলোতে কারা যাতায়াত করতেন, রাতের ঝলোমলো পার্টিকে কি হতো, কারা থাকতেন সেখানে; আনারের ব্যবসায়ী পার্টনার কারা সেগুলো নিয়ে দৃশ্যমান তদন্ত দেখা যাচ্ছে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, সাধারণ একজন এমপি হিসেবে নয় বরং ‘আনার অপরাধ জগতের অধিকর্তা’ ছিলেন সেটা মাথায় রেখে তদন্ত আগ্রসর হওয়া উচিত।

ফৌজদারি আইনে অভিজ্ঞ সিনিয়র অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমানের মতে, একটি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করতে হলে এর সম্ভাব্যসবগুলো দিক খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। আনারের অপরাধ-সাম্রাজ্য সম্পর্কে সরকার ওয়াকিবহাল ছিলেন। জেনে-শুনেই একজন অপরাধীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। অবৈধ সম্পদ অর্জনে উন্মত্ত একজন অপরাধী তার কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে নিজ করুণ পরিণতিকে অনিবার্য করে তোলে। অর্থ উপার্জনই ছিলো আনারের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য। তাকে দিয়ে যেকোনো ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করানো ছিলো খুবই সম্ভব। সে এমপি হওয়ার আগে এবং পরে যেসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন- সেগুলো পর্যালোচনা করলেই তার ‘খুন’ হওয়া কিংবা অন্তর্ধানের রহস্য উদঘাটিত হতে পারে।

দুর্নীতি ও আইন বিশ্লেষকরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন এই বলে যে, আনারের অপরাধলব্ধ অবৈধ-অর্থ সম্পদ আত্মসাৎ করার লক্ষ্যে তাকে ‘খুন’ করার একটি মোটিভ হতে পারে। তাদের মতে, এমপি আনার যদি ভারতে নৃশংসভাবে খুনও হয়ে থাকেন সেটির একাধিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। কারণ, আনারের অধিকাংশ অর্থ-সম্পদই বেনামে। আত্মীয়-স্বজন এবং ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের নামে তিনি বহু স্থাবর সম্পত্তি কিনেছেন। তাই যাদের নামে তিনি সম্পদ কিনেছেন তাদের বিষয়ে সম্পদের অনুসন্ধান চালালে হয়তো বহু অজানা অধ্যায় উন্মোচিত হতে পারে। ‘খুন’ কিংবা ‘অন্তর্ধান’র বিষয়ে বাংলাদেশ এবং ভারতের পুলিশ যে তদন্ত চালাচ্ছে, সেটি অক্ষুণ্ন রেখেই দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বিএফআইইউ কর্তৃক আনারের অবৈধ অর্থ-সম্পদের অনুসন্ধান চালানো উচিৎ বলে মনে করছেন তারা। যদিও আনারকে নিয়ে বহু রঙ চড়ানো গাল-গল্প প্রচার করা হচ্ছে, কিন্তু তার অপরাধলব্ধ অর্জিত অর্থ-সম্পদের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)সহ কোনো সংস্থাই প্রশ্ন তুলছে না। একটি ঘটনার রেশ না কাটতেই ঘটছে নতুন ঘটনা। তাজা ইস্যুর ভিড়ে হারিয়ে যায় পুরনো ইস্যু। আনারের বিষয়টি হয়তো সেই পরিণতির দিকেই এগোচ্ছে। ফিকে হতে চলেছে জ্বলজ্যান্ত একজন এমপি’র ‘নাই’ হয়ে যাওয়ার ঘটনা।

এ যাবত প্রচারিত আনার সংক্রান্ত তথ্যাদি বিশ্লেষণে দেখা যায়, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ পরপর ৩ বার আনোয়ারুল আজীম আনারকে এমপি পদে ঝিনাইদহ-৪ আসনে মনোনয়ন দিয়েছে। সকল অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডকে আমলে না দিয়ে তাকে বাছাইয়ের মানদণ্ড ছিলো ‘জনপ্রিয়তা’। এ কথা দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সোজাসুজি স্বীকারও করেছেন। ছাত্র জীবন থেকে সীমান্তে স্বর্ণ চোরাচালান, মাদক ব্যবসা, হুন্ডি করার মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন তিনি। অর্থ-সম্পদের প্রধান উৎসই ছিলো এসব। তদুপরি তিনি নিষিদ্ধঘোষিত পূর্ব বাংলা কমিউন্টিস পার্টি (সর্বহারা)র ছিলেন গডফাদার। হত্যাসহ বিভিন্ন কারণে তার বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছিলো অন্তত ২১টি মামলা। এসব মামলা থেকে দায়মুক্তি প্রদানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ স্থানীয় নেতৃত্বে নিয়ে আসে আনারকে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, নেতৃত্বের যোগ্যতা নয়, বরং অবৈধভাবে অর্জিত অর্থই ছিলো দলটিতে পদ-পদবি প্রাপ্তি এবং জাতীয সংসদ নির্বাচনে তিন বার নৌকা প্রতীক লাভের প্রধান বিবেচ্য। আনারের মূল শক্তি হচ্ছে অবৈধ অর্থ। এই অর্থের ভাগ-ভাটোয়ারা নিয়ে তিনি ‘খুন’ হতে পারেন-এমন কথা তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বার বার দাবি করে আসছেন। অথচ দুদক বিষয়টি আমলেই নিচ্ছে না।

সংস্থাটির একাধিক সিনিয়র কর্মকর্তা আলাপচারিতায় জানিয়েছেন, আনারের অবৈধ অর্থ-সম্পদ অনুসন্ধান-তদন্তের কোনো পরিকল্পনা দুদকের নেই। কোনো অপরাধীর যদি মৃত্যু ঘটে তাহলে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকে না। মৃত মানুষের অপরাধের কোনো দায় থাকে না। এ কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো অনুসন্ধান, তদন্ত ও বিচার চলে না। এ যুক্তি থেকে আনারের অপরাধলব্ধ অর্থ-সম্পদের অনুসন্ধানের কোনে পরিকল্পনাই দুদকের নেই।

তবে সংস্থাটির সাবেক মহাপরিচালক (লিগ্যাল) মঈদুল ইসলাম এর সঙ্গে ভিন্ন মত পোষণ করেন। তিনি বলেন, অপরাধলব্ধ অর্থ-সম্পদের মালিকানা অর্জনকারী ব্যক্তি যদি হত্যার শিকার হন, তাহলে সন্দেহভাজন হত্যাকারীদের সম্পদ অনুসন্ধান করার দায়িত্ব দুর্নীতি দমন কমিশনের। তাদের সম্পদের অনুসন্ধানের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে আসতে পারে হত্যার নতুন কোনো মোটিভ। এই অনুসন্ধান হত্যা মামলার মূল তদন্তের পাশাপাশি চলতে পারে। তিনি বলেন, ২০১৯ সালের দুদক বিধিমালার বিধি-১৮-তে বিষয়টি অ্যাড্রেস করা হয়েছে। দুর্নীতি মামলার কোনো আসামি যদি খুন হন কিংবা স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে তাহলে তদন্ত কিংবা মামলার পরিসমাপ্তি ঘটবে বটে, কিন্তু তদন্তাধীন ওই সম্পত্তি যদি ক্রোক হয়ে থাকে সেই সম্পত্তি ভোগ-দখলের লক্ষ্যে আদালত থেকে অবমুক্ত করতে হবে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে অবমুক্ত হবে না। উত্তরাধিকারগণও অপরাধলব্ধ সম্পত্তি ভোগ-দখল করতে পারবে না। অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা জজ মইদুল ইসলামের মতে, অবৈধ সম্পদ অর্জনকারী মারা গেলেও তার উত্তরাধিকারদের সেই সম্পত্তি ভোগ-দখলের কোনো ব্ল্যাঙ্ক চেক দেয়া হযনি। আনার যদি খুন হয়ে থাকে, এ ঘটনায় যাদের সন্দেহ করে গ্রেফতার কিংবা জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, তাদের অবৈধ সম্পদের উৎস খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দুদকের। আনার বেনামে যেসব সম্পত্তি করেছেন সেই সম্পত্তি আত্মসাৎ করাও তাকে হত্যার উদ্দেশ্য হতে পারে। দুদকের উচিৎ আনারের অপরাধলব্ধ অর্থের খোঁজ-খবর নিয়ে আইনি দায়িত্ব পালন করা। কেননা,এটিই দুদকের মূল কাজ।

আনারের যতো অবৈধ সম্পদ : আনোয়ারুল আজীম আনার চলাফেরা ছিলো সাদাসিধে। সাধারণ পাঞ্জাবি পরে ঘুরে বেড়াতেন মোটরসাইকেলে। এটি তার প্রথমবার এমপি হওয়ার সময়কার অবস্থা। কিন্তু গত এক দশকে আনার হয়ে যান বিপুল বিত্ত- বৈভবের মালিক। যদিও তার সম্পদগুলো খুব একটা দৃশ্যমান নয়। প্রায় সব সম্পদই তার নিকটজন, ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও রাজনৈতিক অনুসারীদের নামে। কালীগঞ্জ পৌরসভার মধুগঞ্জ বাজারে তিন তলা একটি ভবন। এটিতে সপরিবারে বসবাস করতেন আনার। শহরের মুরগিহাটা মোড়ে রয়েছে একটি মার্কেট। মেইন বাসস্ট্যান্ডের মুক্তিযোদ্ধা ভবনের পেছনে আছে ৫ শতক জমি। বাসস্ট্যান্ডের শ্রীলক্ষ্মী হলের পাশে ভাগ্নের নামে নির্মিত হচ্ছে ১০ তলা ভবন। এটিতে হাসপাতাল করার কথা। পরিবহন ব্যবসা আছে তার। দুই মেয়ে অরিন-ডরিনের নামে যথাক্রমেÑ ২টি বাস ও ৫টি ট্রাক আছে। বাসস্ট্যান্ডের কোটচাঁদপুর রোডে আছে ভবন। এটিতে ‘রায় সুইট’ নামের একটি রেস্টুরেন্ট ভাড়ায় চলছে। জীবননগর সীমান্ত এলাকায় আনার আত্মীয়-স্বজনের নামে কিনেছিলেন প্রায় ২শ’ বিঘা জমি। এখানে একটি নতুন স্থলবন্দর চালু হতে পারে। এটি জেনে আগেভাগেই বিভিন্ন নামে কিনে রাখেন জমি। ২০ বছর আগে তার নামে এই এলাকায় ১০-১৫ বিঘা জমি কেনা ছিল। গত ৫-৭ বছরে আরও জমি কেনা হয়েছে। কালীগঞ্জে নিজ মালিকানাধীন শ্রীলক্ষ্মী সিনেমা হলটির জমিসহ কেনেন ১২ কোটি টাকায়। আয়েশা তেল পাম্পের পাশে ২ কোটি টাকায় কিনেছেন ১০ শতক জমি। মুরগিহাটার পাশে কেনেন ৭ কোটি টাকায়। এসব সম্পদ নিজ ভাগ্নে, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন জনপ্রতিনিধির নামে কেনা। এমনকি ভারতের কলকাতায় গোপাল বিশ্বাসের যে বাড়ি থেকে তিনি নিখোঁজ হন, তিনতলা ওই ভবনটির মালিকও আনোয়ারুল আজীম বলে জানা যায়। গোপাল বিশ্বাসের সঙ্গে তার রয়েছে স্বর্ণ চোরাচালানের কারবার। শুধু স্বর্ণ চোরাচালানই নয়।

ছাত্রজীবন থেকেই খেলাধুলার আড়ালে আনার ছিলেন অন্ধকার জগতের বাসিন্দা। ওই সময় ২৩টি মোটরসাইকেল দিয়ে শুরু করেন সীমান্তে কালোবাজারি। তার বাহিনীর সদস্যদের কাছে থাকতো পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া বিশেষ টোকেন। টোকেন দেখালেই তার মাদক আর চোরাই পণ্যের চালান ছেড়ে দিত পুলিশ। চরমপন্থি লাল দলের প্রধান হিসেবে পরিচিত রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র ডা: টুটুলকে ২০০৯ সালে র‌্যাব তুলে নিয়ে যায়। পরদিন তার লাশ পাওয়া যায় নওগাঁওয়ের গোদাগাড়ি এলাকায়। ওই সময় তার পরিবার সন্দেহ করেছিল, আনার লাল দলের প্রধান ডা: টুটুলকে র‌্যাবের হাতে তুলে দিতে সহযোগিতা করেছিলেন। নিহত টুটুল এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের কথিত পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীনের চাচাতো ভাই। ‘হত্যাকাণ্ড’ বাস্তবায়নকারী শিমুল ভূঁইয়ার ভগ্নিপতি। এ কারণে শাহীন ও শিমুল আগে থেকেই এমপি আনারের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন বলে ডিবির ভাষ্য। শিমুলকে র‌্যাবের মাধ্যমে ‘ক্রসফায়ার’ দিতে চেয়েছিলেন আনার। শিমুল কৌশলে পালিয়ে বাঁচে। শাহীন ও শিমুলের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ছিল এমপি আনারের ওপর। এরপর ৫০০ কোটি টাকার ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব বাধে মাফিয়া চক্র ও শাহীনের সঙ্গে। কয়েক জন বড় ব্যবসায়ী ও সরকারদলীয় দুই সাবেক এমপি মাফিয়া চক্রের সদস্য। তবে চক্রের একক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় এমপি আনার। মাফিয়ারা শাহীনকে দিয়ে তার ফুফাতো ভাই শিমুল ভুঁইয়াকে কাজে লাগিয়ে এমপি আনার ‘খুন’ করা হয়েছেÑ মর্মে ভাষ্য গোয়েন্দা পুলিশের। অন্ধকার অপরাধ জগতের ডন ছিলেন আনার। একটি হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যেতে চাইলে পুলিশের গাড়িতে হামলা চালিয়ে আনারকে ছিনিয়ে নেয় তার বাহিনীর সদস্যরা। আনার অন্তর্ধানের পর এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। যদিও সামনে অনেক ক্লুু আসতে শুরু করেছে। এখনো কলকাতায় আনারের কথিত ঘনিষ্ঠ বন্ধু গোপাল বিশ্বাসকে গ্রেফতার করা হয়নি। আনার ৮ বছর ভারতে আত্মগোপনে ছিলেন। এ সময় অনেক সোনা চোরাকারবারির সঙ্গে তার সখ্যতা হয়। গড়ে ওঠে অবৈধ ব্যবসায়িক সম্পর্ক। তাদের কাউকেই ন্যূনতম সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়নি। ফ্ল্যাটে ছিলেন শিলাস্তি রহমান নামের নারী। বলা হচ্ছে, কলকাতার আগে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি ফ্ল্যাটে আনার হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। ওই ফ্ল্যাটের মালিক কে, কিভাবে বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের মালিক হলেন তিনি-এ প্রশ্নটি তোলার দায়িত্ব দুদকের।

ঢাকার ফ্লাটে কারা যেতেন : আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ এবং সিন্ডিকেটের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করতে আণ্ডারওয়ার্ল্ডের মাফিয়া ডন আকতারুজ্জামান শাহিন নিরাপদ স্থান হিসেবে ব্যবহার করতেন নিজের ফ্ল্যাট ও বাগানবাড়ি। ঢাকার গুলশান-২-এর ৬৫ নম্বর সড়কের ১৭ বাড়ির ২/বি/১, ঠিকানায় অভিজাত ফ্ল্যাটটিও শাহীনের।
এছাড়া ভাটারা থানার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এল ব্লকের ৩২ নম্বর রোডের ১৯/২৯ নম্বর বাড়িতেও রয়েছে শাহীনের আরেকটি ফ্ল্যাট। জানা গেছে, গুলশান ও বসুন্ধরার ফ্ল্যাট দুটি স্বর্ণ ও চোরাচালানের আস্তানা। পাশাপাশি মদ পান ও বিনোদনের জন্য ব্যবহার করা হতো। এছাড়া কোটচাঁদপুরের এলেঙ্গা গ্রামে ২৫ বিঘা জমির ওপর শাহিনের বিলাসবহুল বাগান বাড়িটি স্বর্ণ ও মাদক চোরাচালানের ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

আনার নিখোঁজের আগে পরে ওই সব ফ্ল্যাট ও বাগানবাড়িতে যারা যারা অবস্থান করতেন এখনো তাদের তালিকা প্রকাশ করেনি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। যদিও বলা হচ্ছে, ঢাকার দু’টি ফ্ল্যাটসহ বাগানবাড়িতে অনেক ভিআইপি, সিআইপি ও প্রভাবশালীদের অবাধ যাতায়াত ছিল। এছাড়াও কয়েকজন ব্যবসায়ী, চোরাকারবারি, চরমপন্থি নেতা, প্রশাসনের সাবেক ও একাধিক বর্তমান কর্মকর্তার যাতায়াত ছিল। শাহিনের বাগানবাড়ি ও ফ্ল্যাটগুলোতে রয়েছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি)। সেগুলোর ফুটেজ এবং ফ্ল্যাটের রেজিস্টার খাতায় এসব আগমনকারীদের বিষয়ে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এরই মধ্যে দুটি ফ্ল্যাট ও এলেঙ্গির বাগানবাড়ি সিলগালা করা হয়েছে। কিন্তু ফ্ল্যাটে আগমনকারীদের তথ্য প্রকাশ না করায় অনেকে যেমন পালিয়ে যাবার সুযোগ পাচ্ছে আবার অনেককে কৌশলে আড়াল করারও সন্দেহ থাকছে।

এদিকে একটি সূত্র জানায়, আনারের ঘটনার পরিকল্পনায় রয়েছেন যশোর-৬ আসনের সাবেক এমপি শাহীন চাকলাদার, সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট শফিকুল আযম খান চঞ্চল (কোট চাঁদপুর), যশোরের এক প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও বড় ব্যবসায়ী। এছাড়াও এক ডায়মন্ড ব্যবসায়ী কর্ণধারের নাম ঘুরে ফিরে আসছে।
এর আগে এলেঙ্গায় শাহিনের বাগানবাড়ি থেকে উদ্ধার করা সিসি ফুটেজে শাহিনের সঙ্গে আনারকেও দেখা গেছে। এই বাগানবাড়ি থেকে জীবননগর, দর্শনা, মহেশপুর জিন্নানগর, সামান্তা, মাটিলা, যাদবপুর, সামুন্দা বাগাডাঙ্গা, শ্যামকুড়াসহ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে স্বর্ণ চোরাচালান করা হতো।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions