ডেস্ক রির্পোট:- ডলার সংকটের কারণে ব্যয়সংকোচন নীতির অংশ হিসেবে সরকার অর্থ ব্যয়ে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। জরুরি না হলে রাষ্ট্রের অর্থায়নে বিদেশসফর বন্ধ রাখা হয়েছে। তবু নানা অজুহাতে বিদেশ-ভ্রমণ শুরু করেছেন সরকারি কর্মকর্তারা। এমনই সফরে ৯ জন কর্মকর্তার ইউরোপ ভ্রমণের তোড়জোড় চলছে। তাঁরা যাবেন লিফটের মান যাচাই করতে। তবে সরকারি টাকায় নয়, তাঁদের সফরের ব্যয় মেটাবেন দুই প্রকল্পের ঠিকাদার।
প্রকল্প দুটি জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের। বিদেশসফরের তালিকার ৯ জনের মধ্যে ৭ জন জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের (জাগৃক) বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা। বাকি দুজন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দুজন কর্মকর্তা। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, দুই প্রকল্পের একটিতে ৩৭টি আর অন্যটিতে ৬টি লিফট কেনা ও স্থাপনের কথা রয়েছে।
ঢাকার মিরপুরে (স্বপ্ননগর-২) ১৪ তলা আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের ঠিকাদার প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড। তারা ২৩টি লিফট সরবরাহের কথা উল্লেখ করে জাগৃকের নির্বাহী প্রকৌশলীকে (ই/এম ডিভিশন) দেওয়া এক চিঠিতে বলেছে, জাগৃক মনোনীত ব্যক্তিদের স্পেনে ভ্রমণের সব ব্যয় তাদের কোম্পানি বহন করবে। আর লিফটের প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সফরকারীদের দেশটিতে থাকা-খাওয়ার সব ব্যয় বহন করবে।
এই চিঠির ভিত্তিতে ২ মার্চ জাগৃকের সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান তাঁদের ঢাকা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল, পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, নির্বাহী প্রকৌশলী (ঢাকা ডিভিশন-১) জোয়ারদার তাবেদুন নবী, নির্বাহী প্রকৌশলী (ই/এম ডিভিশন) মো. মিরাজ হোসেন, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (ঢাকা ডিভিশন-১) শেখ সোহেল রানা এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তাকে (নাম নেই) স্পেন ভ্রমণের আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন।
আর ঢাকায় সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ৮৮টি আবাসিক ফ্ল্যাট ও কর্মচারীদের জন্য ৫৪টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের ঠিকাদার ক্রিয়েটিভ ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। তারা জাগৃক চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি। এতে ‘তাদের নিজ খরচে’ লিফটের মান যাচাইয়ের জন্য জাগৃকের তিন প্রতিনিধিকে সুইজারল্যান্ড সফরের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। লিফট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান শিন্ডলার এলিভেটর লিমিটেডের কারখানায় নিয়ে যাওয়া হবে তাঁদের।
এই চিঠির ভিত্তিতে জাগৃক সচিব সুইজারল্যান্ড ভ্রমণের জন্য সংস্থার সদস্য (পরিকল্পনা, নকশা ও বিশেষ প্রকল্প) বিজয় কুমার মণ্ডল, নির্বাহী প্রকৌশলী (ঢাকা ডিভিশন-২) মো. মিজানুর রহমান এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি মনোনয়নের জন্য ‘নির্দেশক্রমে’ সুপারিশ করে ২ মার্চ মন্ত্রণালয়ে আরেকটি চিঠি দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লিফটের কারিগরি দিক সম্পর্কে অভিজ্ঞতা নেই, এমন প্রকৌশলী ও কর্মকর্তারাও যাচ্ছেন এ ভ্রমণে। মোট ৯ জনের মধ্যে নির্বাহী প্রকৌশলী মিরাজ হোসেন ছাড়া বাকি ৮ জনের কেউ লিফট স্থাপন, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত নন। প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের দুজন প্রতিনিধি ও জাগৃকের পরিচালক আসাদুজ্জামান প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। তাঁরা এ লিফটের কাজের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নন। তাঁদের এ ধরনের ভ্রমণ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে শুরু হয়েছে নানা সমালোচনা।
এ বিষয়ে জানতে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. মুনিম হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি বিস্তারিত শুনে বলেন, ‘সরি, এ বিষয়ে কিছু বলতে চাইছি না।’
নির্বাহী প্রকৌশলী (ই/এম ডিভিশন) মো. মিরাজ হোসেনের কাছে এই ভ্রমণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনিও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জাগৃকের সচিব মুহাম্মদ আসাদুজ্জামানের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে তাঁর ব্যক্তিগত মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। পরে এসএমএস পাঠানো হলেও কোনো উত্তর মেলেনি। আজকের পত্রিকা