শিরোনাম
রাঙ্গামাটিতে ট্যাংকে পানি ভর্তি ট্রাক উল্টে নারী নিহত রাঙ্গামাটির সুবলং চ্যানেলে পর্যটকবাহী বোট ডুবি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তারেক রহমানকে ‘সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী’ বলে উল্লেখ জুরাছড়ি জোনের উদ্যোগে পাংখুয়াপাড়া গির্জায় বড়দিন উপলক্ষে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ কর্মসূচি রাঙ্গামাটিতে বড়দিন উপলক্ষে খ্রীষ্টধর্মাবলম্বীদের সমবেত প্রার্থনা ও কেক কাটা আজ শুভ বড়দিন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বকশ চৌধুরীর পদত্যাগ আজ ফিরছেন তারেক রহমান,নির্বাসন শেষ, ঢাকায় বরণের আয়োজন খাগড়াছড়িতে বিজিবির অভিযানে ১২টি ভারতীয় গরু জব্দ নাইজেরিয়ায় নামাজের সময় মসজিদে বিস্ফোরণ, নিহত ৭

প্রাথমিকে নৈতিক শিক্ষার নিয়ামক কী

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০২৪
  • ১৯১ দেখা হয়েছে

ফরিদ আহাম্মদ:- একটি শিশুর জন্মের পর তার বিকাশ শুরু হয় তার পরিবারে। প্রতিটি শিশুরই প্রথম শিক্ষক হলেন তার মা-বাবা। এর পরই শিশুর বিকাশের জন্য প্রথম ও প্রাতিষ্ঠানিক কেন্দ্র হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়, যেখান থেকে সে দেখে শিখে, শোনে শিখে, করে শিখে ও অনুকরণ করে শিখে। বর্তমানে একককেন্দ্রিক পরিবার ব্যবস্থা এবং কর্মব্যস্ততা বৃদ্ধির কারণে মা-বাবা পর্যাপ্ত সময় দিতে না পারায় শিশুর বিকাশে অধিকাংশ মা-বাবা কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা রাখতে পারছেন না। ফলে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভূমিকা আরও বেশি প্রণিধানযোগ্য হয়েছে। এ ছাড়া ক্রমপরিবর্তনশীল সমাজ ব্যবস্থায় শিশুর বিকাশে পরিবারের প্রভাব আগের চেয়ে কমতে থাকায় শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রভাবকের এবং মেন্টরিংয়ের দায়িত্ব পালনের প্রয়োজনীয়তা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগের দিনে দাদা-দাদি, নানা-নানির কাছ থেকে কিচ্ছা-কাহিনি, নীতিকথা শুনেও শিশুদের নিজেদের মধ্যে একটা আদর্শের মানদণ্ডের প্রাথমিক ভিত তৈরি হতো। কর্মজীবী মা-বাবা কারণে এবং গৃহপরিচারিকার তত্ত্বাবধানে অধিকাংশ সময় অতিক্রান্তের কারণে কিংবা ভিডিও গেমস বা কার্টুন ইত্যাদির আসক্তির কারণে এ সুযোগ কমে আসছে। বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থার ভিত্তি স্তরেই রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা। মানসিক, প্রায়োগিক, নৈতিক ও সামাজিক বিকাশের শুরুই হয় প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। চারিত্রিক গুণাবলির গঠনও শুরু হয় প্রাথমিক পর্যায় থেকেই। যে শিশু প্রাথমিক স্তরে নিজেকে পরবর্তী স্তরের জন্য প্রস্তুত করতে পারে না, সে অনেক ক্ষেত্রেই পরবর্তী স্তরে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না। উন্নত সমৃদ্ধ-স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে প্রয়োজন মেধাবী, আদর্শ চারিত্রিক গুণাবলি সম্পন্ন নাগরিক যারা হবে প্রত্যুৎপন্নমতি এবং হাল তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজেদের সমস্যা সমাধানে সক্ষম নাগরিক। আর আমরা যদি শিক্ষার উদ্দেশ্যের দিকে লক্ষ্য করি তাহলে দেখা যায় শিক্ষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যই হলো নৈতিকতা এবং অন্তর্নিহিত মহত্ত্বের বিকাশ ঘটানো এবং এ বিকাশ হবে অন্তর্নিহিত শক্তির স্বাভাবিক, সুষম ও প্রগতিশীল বিকাশ। আর এটি শিশুর মনে প্রোথিত হয় প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই—যে কারণে প্রাথমিক শিক্ষাকে বলা হয় ভিত্তি শিক্ষা। আর তাই সমাজ-সংস্কৃতির সঙ্গে মিল রেখে নৈতিকতাবোধ শিক্ষার অন্যতম কেন্দ্রস্থলই হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। জাপান-ফিনল্যান্ডের মতো প্রাথমিক শিক্ষায় অগ্রগামী দেশগুলোর দিকে দৃষ্টিপাত করলে প্রতিভাত হয় যে, গুরুজনকে সম্মান করা, মৌলিক শৃঙ্খলা শিক্ষা, সময়ানুবর্তিতা শিক্ষা, পরিচ্ছন্নতা শিক্ষা, নিজের কাজ নিজে করার মাধ্যমে আত্মপ্রত্যয়ী হওয়ার শিক্ষা শুরুই হয় শিশুদের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে, যেটি আমাদের জন্যও অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়।

০২. বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন একটি শিশুর প্রায় ৯০ শতাংশ মস্তিষ্ক বিকাশের কাজটি শেষ হয় ১১ বছর বয়সের মধ্যে। এ সময়ের মধ্যে শিশুর মানসিক বিকাশ, শারীরিক বিকাশ, সৃজনশীলতা, অনুসন্ধিৎসা, নৈতিকতা, মূল্যবোধের মতো অর্জনযোগ্য গুণাবলি ও সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটে। এগুলোই পরবর্তী সময়ে শ্রেষ্ঠত্বের নিয়ামক হয়। যে কোনো দেশে টেকসই উন্নয়ন ও বিকাশ ঘটাতে হলে নৈতিকতা এবং মূল্যবোধের ধারাবাহিক চর্চা অত্যাবশ্যক। শিশুর নৈতিকতা ও মূল্যবোধ শিক্ষার যে বীজ রোপিত হয় মা-বাবা ও পরিবারে তা অঙ্কুরিত হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। যে জায়গায় নার্সিং করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এ কারণেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষককে একজন আদর্শ শিক্ষক বলার চেয়ে একজন ভালো মেন্টর বা ভালো গাইড হিসেবেই বেশি আখ্যায়িত করা হয়। ধর্ম যেমন মূল্যবোধ চর্চায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তেমনি করে বহমান সাংস্কৃতিক আবহ, রাষ্ট্রীয় শিষ্টাচার এবং অনুকরণীয়-অনুসরণীয় শুদ্ধাচার চর্চার অনুশীলন শিশুর যথাযথ বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা শিশুমনে-কাদামাটিতে প্রোথিত করা সম্ভব। প্রাথমিক পর্যায় থেকেই শিশুদের মন ও মননে নৈতিকতা এবং মূল্যবোধের গুণাগুণ প্রবেশ করাতে পারলে একজন আদর্শ নাগরিক সৃষ্টি করা যেমন সম্ভব তেমনি শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন ও মূল লক্ষ্য অর্জন করাও সম্ভব।

তাই প্রাথমিক পর্যায়ে নৈতিকতাবোধ শিক্ষার অন্যতম নিয়ামক হওয়া উচিত সততা শিক্ষা, শৃঙ্খলা শিক্ষা, আত্মপ্রত্যয়ী হওয়ার শিক্ষা, ভালো-মন্দের বিচার করতে শিক্ষা, মানুষকে সম্মান করতে শিক্ষা, সেবা মনস্ক হওয়ার শিক্ষা। প্রাথমিক পর্যায়ে এসব গুণাবলি অর্জন করতে না পারলে একজন পরিণত ব্যক্তির মধ্যে পরবর্তী সময়ে এসব গুণাবলি চর্চার পরিবেশ থাকে না এবং স্বপ্রণোদিত হয়েও এসব চর্চায় আগ্রহী হন না। সমাজে নৈতিক অবক্ষয়েরও এটি একটি কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

০৩. একজন মানুষকে মানবিক হতে শেখানো হবে কীভাবে? শুধু শিক্ষা দিয়ে বা প্রশিক্ষণ দিয়ে সম্ভব নয়। অভিজ্ঞতায় দেখা যায় যে, এটি ধারাবাহিক চর্চার মাধ্যমে নিজের মধ্যে আত্মস্থ হয়। একজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে যেমন শুধু কয়েক মাস বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের জন্য একাডেমিতে রেখে তার নৈতিকতা, মানবিকতা, সাংস্কৃতিক চেতনার প্রকৃত উন্নতি ঘটানো যায় না। তেমনি একজন আদর্শ নাগরিক হওয়ার জন্যও শুধু সুনির্দিষ্ট শিক্ষা দিয়ে তা সম্ভব নয়। একজন মানুষ সর্বপ্রথমে এসব গুণাবলি শিখে তার পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতা থেকে। তার মা-বাবা ও পরিবার হচ্ছে সূতিকাগার। তবে অন্যতম ক্ষেত্র হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। মানবিক ও সাংস্কৃতিক চেতনার উন্মেষ ঘটে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মেলামেশা, এপিক-ক্লাসিক সাহিত্য পাঠ ও অনুধাবন, বিতর্ক, পত্র-পত্রিকা পাঠ, সংগীত, বিখ্যাত মানুষের বায়োগ্রাফি এবং খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চার মধ্য দিয়ে। পারিবারিক আবহ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলেও অন্যকে দেখে শেখার একটা চেষ্টা না থাকলে হবে না। তাই আমাদের প্রাথমিক ও মাধ্যমিকগুলোতে একাডেমিক কার্যক্রমের বাইরেও মানবিক গুণাবলি অর্জন, নেতৃত্বের বিকাশ, উদ্ভাবনী ও সৃজনশীল চর্চার সমান সুযোগ থাকা প্রয়োজন। নতুন কারিকুলামে এ বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সহপাঠ্যক্রম কার্যাবলিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রাথমিক পর্যায় থেকেই এগুলোকে গুরুত্ব সহকারে সন্নিবেশন করা হয়েছে। বছরব্যাপী প্রতিযোগিতার আওতায় এনে প্রাথমিক পর্যায়ে নিয়মিত চর্চা অব্যাহত রাখার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা পদক নীতিমালায়ও এগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

০৪. সুস্থ দেহে সুস্থ মন, আর সুস্থ মনে কাঙ্ক্ষিত বিকাশ। যেহেতু প্রাথমিক শিক্ষাই হচ্ছে শিক্ষার মূল ভিত, সে কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মৌলিক ও জ্ঞানমূলক শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, চিত্রাঙ্কন, বিতর্ক, আবৃত্তি ও সংগীত চর্চা, পাঠাভ্যাস তৈরি, কাব-স্কাউটিংসহ চারিত্রিক ও নেতৃত্বের বিকাশ, শুদ্ধাচার চর্চার অনুশীলন, বাগান তৈরি, ভাষা শিক্ষা অনুশীলন, সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী চর্চার অনুশীলন এগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোর মাধ্যমে শিশু-শিক্ষার্থীদের যেমন মানসিক চারিত্রিক ও শারীরিক বিকাশ নিশ্চিত হয় তেমনি একজন আদর্শ ও পূর্ণাঙ্গ সুনাগরিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠার সুযোগ পায়। নাচ, গান, আবৃত্তি, বিতর্ক ইত্যাদি চর্চার মাধ্যমে নিজস্ব সাংস্কৃতিতে শিক্ষার্থীরা যেমন হৃদ্ব হয় তেমনি দেশপ্রেমেও উদ্বুদ্ধ হয়। ক্রীড়া চর্চার মাধ্যমে শারীরিক বিকাশ যেমনি নিশ্চিত হয় তেমনি প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়া এবং জয়-পরাজয় মেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে চলার জন্য প্রত্যয়ী হয়। কাব-স্কাউটিং, স্টুডেন্ট কাউন্সিল ইত্যাদির মাধ্যমে নেতৃত্ব বিকাশ ও চারিত্রিক গঠনের সুযোগ সৃষ্টি হয়। সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বেশ কিছু সৃজনশীল, উদ্ভাবনী ও শুদ্ধ চর্চার বিকাশ ঘটেছে যেমন—খুদে ডাক্তার কর্মসূচি, সততা স্টোর, রিডিং ক্লাব, স্বপ্নের আয়না, মহানুভবতা-মানবিকতার দেয়াল, ভালো কাজের ডায়েরি সংরক্ষণ, প্রতিদিন একটি নতুন শব্দ শেখা, অভিভাবক ও প্রাক্তন কৃতী শিক্ষার্থী যোগাযোগ রেজিস্টার সংরক্ষণ এগুলোও সহপাঠ্যক্রমের অংশ হিসেবে শিশু শিক্ষার্থীদের চারিত্রিক ও মানবিক বিকাশ এবং নৈতিকতাবোধ শিক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।

০৫. একজন শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য সহপাঠ্যক্রম কার্যাবলির প্রতিটি কাজই শিশু শিক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর মানসিক বিকাশে যে শিক্ষার্থী যে বিষয়ে অধিক আগ্রহী হবে, সে বিষয়ে পারদর্শী করে তুলতে পারলে শিশুরা সহজে তার শারীরিক, মানসিক, পারিপার্শ্বিক ও আচরণগত পরিবর্তন ঘটিয়ে ইতিবাচক শিক্ষা লাভ করতে পারবে। তাই নতুনভাবে প্রবর্তিত কারিকুলামে শুধু মুখস্থভিত্তিক শিক্ষার পরিবর্তে অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিক্ষা এবং হাতে-কলমে করে শিক্ষাকে অধিকভাবে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

সারা বিশ্বে Elementary School বা প্রাথমিক শিক্ষায় দুটি Common Subject পড়ানো হয় যার একটি হলো Basic numeracy বা Elementary Math এবং অন্যটি Basic Literacy. তার কারণ হলো, মৌলিক গাণিতিক শিক্ষার মাধ্যমে শিশুরা Logic শিখবে যেমন—১ আর ১ যোগ করলে ২ হবে, ৩ হবে না। এরূপ মৌলিক লজিক শিখবে বিচার-বিশ্লেষণ করতে শিখবে আর মৌলিক সাহিত্যের মাধ্যমে তথা নিজস্ব মৌলিক ভাষা-সাহিত্যের মাধ্যমে লপ্ত লজিককে সে প্রকাশ করতে শিখবে। তার পরই এগুলোর পরিপূর্ণতার জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী অন্যান্য বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানের শিক্ষায় শিক্ষিত হবে। আর সব ক্ষেত্রে সামগ্রিক ও পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে সহপাঠ্যক্রম কর্মসূচি; যার গুরুত্ব যেমন অপরিসীম তেমনি অপরিহার্যতা অনস্বীকার্য। সুত্র কালবেলা

লেখক: সচিব প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions