শিরোনাম
বাণিজ্য সম্ভাবনায় ‘সেভেন সিস্টার্স’ দুবাইয়ে বিপু-কাজলের ২০০ কোটির দুই ভিলা পাচারের ১৭ লাখ কোটি ফেরাবে কে,প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দিকে তাকিয়ে সবাই শিক্ষার্থীদের পরিকল্পিতভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে ঢাকা-দিল্লি পররাষ্ট্রসচিব বৈঠক ডিসেম্বরে, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে আলোচনা হবে কি এবার মারা গেলেন পরীমণির প্রথম সিনেমার পরিচালক জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের পরামর্শ সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সুপারিশ, বদিউল বললেন, ‘বিবেচনায় রয়েছে’ বান্দরবানে নৌকা বাইচ দিয়ে ক্রীড়া মেলা শুরু রাঙ্গামাটিতে সাফজয়ী পাহাড়ের তিন কন্যাকে উষ্ণ সংবর্ধনা

ছেলের চিকিৎসার খরচ জোগাতে না পেরে মায়ের আত্মহত্যা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০২৪
  • ৭৯ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- তিন বছরের ছেলে আফরোজ। জন্মের পর থেকেই কিডনিজনিত সমস্যায় ভুগছে। তার চিকিৎসার জন্য রাত-দিন পরিশ্রম করছেন বাবা মো. রানা। গুলিস্তানের একটি কাপড়ের দোকানে সেলসম্যান এই পিতা সংসারের খরচ পোষাতে একটু কম ভাড়ায় বাসা নেন রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর ট্যানারি পুকুর পার্ক এলাকায়। মা আফরোজা আক্তারও অসুস্থ ছেলের চিকিৎসা খরচ যোগাতে টিউশনি শুরু করেন। একবেলা-আধাবেলা খেলেও ধার-দেনা করে ঠিকই চলছিল ছেলের চিকিৎসা। কিন্তু কোনোভাবেই ভাগ্যের উন্নতি বা ছেলের সুস্থতা কিছুই আসছিল না। ব্যয়বহুল কিডনি চিকিৎসা ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সংসারের খরচ জোগাড় করতে যেন হাঁপিয়ে উঠেছিল রানা-আফরোজা দম্পতি। কোনোভাবেই আর খরচ জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছিল না তাদের। অভাব-অনটনের সংসারে দীর্ঘদিন ধরে চলা ছেলের চিকিৎসা নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েন মা আফরোজা আক্তার।

চোখের সামনে তিলে তিলে ছোট্ট ছেলের করুণ দশা দেখতে হবে- ভেবে এমনটা ভেবে একপর্যায়ে ঘরে থাকা কীটনাশক পান করে আত্মহত্যার করেন এই ২৩ বছরের তরুণী।

নিহত আফরোজার চাচা মো. জাহাঙ্গীর ও ফুপু হেলেনা বেগম বলেন, ‘আফরোজার তিন বছরের ছেলে আফরোজ জন্ম থেকেই কিডনিজনিত সমস্যায় ভুগছিল। জন্মের পর থেকেই ছেলেকে সুস্থ করতে নিয়মিত চিকিৎসা করিয়ে আসছিল আফরোজা ও রানা। ছেলের চিকিৎসা খরচ পোষাতে গিয়ে অনেক ধার-দেনাও করেছে তারা। কিন্তু বর্তমানে অভাবের কারণে যথাযথ চিকিৎসা করাতে পারছিল না। তার চিকিৎসার খরচ অনেক ব্যয়বহুল, যা তাদের পক্ষে বহন করা খুবই কষ্টসাধ্য। আর ধারদেনা করাও সম্ভব ছিল না। এসব নিয়েই আফরোজা হতাশাগ্রস্ত হয়ে রোববার সকাল ১১টায় বিষপান করে অচেতন হয়ে পড়ে। এরপর আমরা তাকে উদ্ধার করে দুপুর ১২টা নাগাদ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাই। সেখান থেকে তার পাকস্থলী ওয়াশ করে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকাল ৩টায় আফরোজার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া।

নিহত আফরোজার স্বামী মো. রানা বলেন, আমার ছেলের অসুস্থতার কারণে চিকিৎসা করাতে অনেক টাকা দরকার। এই টাকা জোগাড় করতে না পারায় আর্থিক অভাব অনটনের কারণে আমার স্ত্রী মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। কোনো কিছুই বোঝার চেষ্টা করেনি। ছেলের অসুস্থতার খরচ ও ধারদেনা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই সে বিষণ্নতায় ভুগছিল। রোববার থাকা কীটনাশক পান করে অসুস্থ হয়ে পরে। আশপাশের লোকজন তার স্বজনদের খবর দিলে তারা আফরোজাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পুলিশ লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রেখে দিয়েছিল। কারোর অভিযোগ না থাকায় (সোমবার) সকালে লাশ আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। দুপুরে জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। স্ত্রীর মৃত্যুর কথা বলতে বলতে অশ্রুসিক্ত হয়ে মো. রানা বলেন, ওতো মারা গিয়ে বেঁচে গেল। এখন আমার আর আমার অসুস্থ সন্তানটার কী হবে? কে আমাদের আগলে রাখবে? কে আমার পাশে দাঁড়াবে? কার সঙ্গে আমি সুখ-দুঃখের আলাপ করবো? আমার সংসারটা ভেসে গেল, সব শেষ হয়ে গেল। আমি এখন কাকে নিয়ে বাঁচবো?

রানা-আফরোজা যেই বাসায় ভাড়া থাকতেন ওই বাসার মালিকের মেয়ে মলি আক্তার বলেন, নিহত আফরোজাদের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলার শিবচর থানার কুরুকচর গ্রামে। গত দুই বছর ধরে আমাদের বাড়ির নিচতলার একটি সিঙ্গেল রুমের ফ্লাটে মো. রানা তার স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে ভাড়া আছেন। এমনিতে তাদের তেমন কোনো ঝামেলা কখনো দেখিনি। তবে তাদের ছেলেটা অনেক অসুস্থ। ওই ছেলের খরচ জোগাড় করতে মা আফরোজা বাইরে গিয়ে চাকরি করতে না পারায় বাসায়ই বাচ্চাদের টিউশন পড়াতেন। ছেলেকে নিয়েই সব সময় থাকতেন তিনি। রোববার হঠাৎ শুনি তিনি বিষ খেয়েছেন, হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। পরে বিকালে শুনি মারা গেছেন। বর্তমানে ছেলেটা আমাদের পাশেই তার নানীর বাসায় রয়েছে। আফরোজার মায়ের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, মেয়ের মৃত্যুর শোকে যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন মা। বার বার কেঁদে কেঁদে বিলাপ করছেন।

এ বিষয়ে কামরাঙ্গীরচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম জানান, ঘটনার সংবাদ পেয়ে হাসপাতালে ও ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানা গেছে, গৃহবধূর স্বামী স্বল্পআয়ের সেল্সম্যানের চাকরি করেন। তাদের একমাত্র ছেলের কিডনির সমস্যা রয়েছে। শিশুটির চিকিৎসা করাতেই পরিবারটি হিমশিম খাচ্ছিল। এ কারণে হতাশা থেকে গৃহবধূ আফরোজা বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানা গেছে। তবে ঘটনাটি আরও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions