ডেস্ক রির্পোট:- উন্নতমানের জাত না থাকা, জনবল সংকটসহ আনুষঙ্গিক সুযোগ সুবিধার অভাবে ধুঁকছে দেশের ‘সাদা স্বর্ণ’ হিসেবে খ্যাত রাবার শিল্প। এতে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে সম্ভাবনাময় খাতটির।
রাবার চাষে ও প্রক্রিয়াজাতকরণে সরকারের সুনজর থাকলে এ খাত আরও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফআইডিসি) তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে সরকারিভাবে রাবার বাগানের সংখ্যা ১৭টি।
এরমধ্যে চট্টগ্রামে রয়েছে ৯টি রাবার বাগান। এসব বাগানের মধ্যে কক্সবাজার ও রাঙ্গুনিয়ায় ২টি, রাউজানে ৩টি এবং ফটিকছড়িতে রয়েছে ৪টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ফটিকছড়ির দাঁতমারা রাবার বাগান, যেটি একসময় এশিয়ার বিখ্যাত ছিল। ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বাগানটির মোট আয়তন ৪ হাজার ৬৯১ একর।
দাঁতমারা রাবার বাগানের তথ্যানুযায়ী, এ বাগানে উৎপাদনশীল গাছ রয়েছে ৬১ হাজার ৪৬২টি। সর্বশেষ ২০২৩ অর্থবছরে বাগানে নতুন গাছ সৃজন করা হয় ৬ হাজার ৫৪১টি। গত ২৪ বছরে দাঁতমারা রাবার বাগানে আরও ১ হাজার ৬৪৯ একর জায়গায় নতুন গাছ রোপণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট ২ লাখ ২০ হাজার ৫৮১টি গাছ থেকে কষ পাওয়া যায় এ বাগানে। রাবার দিয়ে গাড়ির টায়ার, টিউব, জুতার সোল, ফোম, রেক্সিন, হোসপাইপ, গাম, খেলনাসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি হয়।
বছর বছর নতুন বাগান সৃজন করা হলেও সে হারে বাড়েনি রাবার বিক্রি থেকে আয়। প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে মাত্র একবার ছাড়া কোনোবারই অর্জন করতে পারেনি রাবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৯৯ শতাংশ অর্জিত হলেও ২০২৩-২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয় ৮২ শতাংশ। এছাড়া ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরেও বাগানটির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয় যথাক্রমে ৬৮ ও ৬৫ শতাংশ।
শুধু উৎপাদনে নয় বিক্রিতেও বড় অংকের লোকসান দিচ্ছে বাগান কর্তৃপক্ষ। গত ৫ বছরে বড় অংকের লোকসান হয়েছে। তবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাবার বিক্রিতে লাভের মুখ দেখে প্রতিষ্ঠানটি। বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ কোটি ২৮ লাখ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩ কোটি ২০ লাখ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা লোকসান দেয় প্রতিষ্ঠানটি। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে (ফেব্রুয়ারি-২৪) ২৫ লাখ টাকা মুনাফা করেছে। বিদেশ থেকে রাবার আমদানি বেড়ে যাওয়ায় দেশে উৎপাদিত রাবারের দাম কমে গেছে।
১৯৭৮ সালে দাঁতমারা রাবার বাগান প্রতিষ্ঠা হলেও দিন দিনই কমেছে বাগান সংশ্লিষ্ট জনবল। এ প্রতিষ্ঠানে ১১ জন কর্মকর্তার পদ অনুমোদিত থাকলেও বর্তমানে আছেন মাত্র ২ জন কর্মকর্তা। এছাড়া ৬৯ জন কর্মচারীর বিপরীতে ৫২টি পদই খালি। শুধু তাই নয় মজুরি ও কমিশনভুক্ত শ্রমিকদের ৪৮৫ পদের বিপরীতে ২৬৮টি পদও খালি রয়েছে। ফলে বাগানের রাবার সংগ্রহ থেকে প্রক্রিয়াজাতকরণ- সবখানেই লোকবল সংকটে ধুঁকছে প্রতিষ্ঠানটি।
বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের চেয়ারম্যান সৈয়দা সারওয়ার জাহান বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রাকৃতিক রাবারের চাহিদা বিশ্বব্যাপি বাড়ছে। বিষয়টি মাথায় রেখে বাংলাদেশ সরকার রাবার চাষের উন্নয়নে কাজ করছে। যেহেতু বাংলাদেশের আবহাওয়া রাবার চাষে উপযোগী, সেহেতু সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও রাবার চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এ জন্য সরকার রাবার বোর্ড গঠন করেছে।
তিনি বলেন, আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তা কাটিয়ে উঠতে পারলে রাবার শিল্প আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। আমাদের জনবল সংকট রয়েছে, উন্নতমানের জাতের সংকট রয়েছে। যে জাত থেকে রাবার সংগ্রহ করা হয়, তা অনেক পুরোনো জাত। রাবারের উৎপাদন বাড়াতে আমরা বিদেশ থেকে নতুন জাত আনার ব্যাপারে পরিকল্পনা করছি।
রাবার খাতের উন্নয়নে সরকারে সুদৃষ্টি চান বেসরকারি রাবার বাগান মালিকরা। বাংলাদেশ রাবার বাগান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম বলেন, সরকারের সুনজরের অভাবে এ খাতে উন্নয়ন হচ্ছে না। উন্নত জাতের পাশাপাশি রাবার প্রক্রিয়াজাতকরণে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে রাবার উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। এ খাতের সঙ্গে জড়িতদের জন্য আর্থিক প্রণোদনা দরকার। বাংলানিউজ