ডেস্ক রির্পোট:- আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সরকার। এর মধ্যে বড় ১০টি প্রকল্পে বরাদ্দ ধরা হয়েছে প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা। এসব প্রকল্পের মধ্যে চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। অন্যদিকে আগামী অর্থবছরে সমাপ্তি ঘটবে ২৮৯টি প্রকল্পের। এগুলোর মধ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (থার্ড টার্মিনাল), পূর্বাচলে খাল খনন ও আশ্রয়ণ প্রকল্প রয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভাসূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
চলতি অর্থবছরে এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। সে হিসেবে এবার এডিপির আকার বাড়ছে ২ হাজার কোটি টাকা। তবে চলতি অর্থবছরে সংশোধিত এডিপির আকার কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকায়। সে হিসাবে নতুন অর্থবছরের এডিপির আকার বাড়ছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন অর্থবছরে এডিপির আকার খুব বেশি না বাড়ানোটা সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। প্রস্তাবিত এডিপি যথাযথ বাস্তবায়ন হলেই প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব। তবে বিদেশী ঋণের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভার কার্যপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নতুন অর্থবছরের এডিপিতে সরকার অর্থায়ন করবে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। বাকি ১ লাখ কোটি টাকা আসবে বিদেশী বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠীর কাছ থেকে। প্রস্তাবিত এডিপিতে ১ হাজার ৩৩৭টি প্রকল্প রাখা হয়েছে। এর মধ্যে বড় ১০ প্রকল্পে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৫১ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা। সর্বোচ্চ বরাদ্দ ধরা হয়েছে চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি প্রকল্পে, ১১ হাজার ৫৫ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা রাখা হয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এরপর আছে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে, যেখানে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা। মেট্রোরেল লাইন-১ প্রকল্প পাচ্ছে ৩ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা। প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা করে বরাদ্দ পাচ্ছে পাওয়ার গ্রিডের নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণ প্রকল্প, পদ্মা রেল প্রকল্প ও বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল প্রকল্প।
প্রস্তাবিত এডিপির বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সচিব মামুন-আল-রশীদ বলেন, ‘বর্ধিত সভাতেই এডিপির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। আর এডিপির আকার নির্ধারণ হয় সরকারের সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে। রাজস্ব আয় না বাড়লে উন্নয়ন খাতে বেশি ব্যয় করা যায় না। তবে অতীতে দেখা গেছে, বিদেশী ঋণের সঠিক ব্যবহার করা যায়নি। দক্ষতার সঙ্গে পরিকল্পনা করে এসব ঋণের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বিদেশী ঋণ উপযুক্ত শর্তের আলোকে গ্রহণ করা হলে তা দেশের জন্য উপকারী।’
আগামী অর্থবছরে ২৮৯টি প্রকল্প সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্প রয়েছে। যেমন ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকার ব্যয়ে চলমান থার্ড টার্মিনাল প্রকল্প। ছয় মাসের মধ্যে থার্ড টার্মিনাল পুরোপুরি ব্যবহার করা যাবে বলে গতকাল জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান।
এদিকে কুড়িলের পূর্বাচল সড়কের দুই পাশে ১০ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে খাল খনন প্রকল্পটিও আগামী অর্থবছরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ৮ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পটিও শেষ হবে। শেষ হওয়ার তালিকায় রয়েছে ৮ হাজার ২৯৮ কোটি টাকার সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং প্রকল্প, ৬ হাজার কোটি টাকার পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প, কভিড ইমারজেন্সি রেসপন্স প্রকল্প ও মোংলা পোর্ট উন্নয়ন প্রকল্প।
এবার পরিবহন ও যোগাযোগ খাত সর্বোচ্চ ৭০ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে, যা মোট এডিপির প্রায় ২৭ শতাংশ। ৪০ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ, যা মোট এডিপির ১৫ শতাংশ। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩১ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে শিক্ষা খাত, যা মোট এডিপির প্রায় ১২ শতাংশ। মন্ত্রণালয় হিসেবে সর্বোচ্চ ৩৮ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
উন্নয়ন বাজেটের বিষয়ে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘চলতি বছরের তুলনায় আসন্ন বাজেটে এডিপির আকার তেমন বাড়ানো হয়নি। এটা সরকারের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। কারণ এডিপি বাস্তবায়ন হয় ঋণের টাকায়। আমরা সরকারের ঋণনির্ভরতা কমানোর কথা বলছিলাম। লাখ কোটি টাকা বিদেশী ঋণ গ্রহণের ফলে অভ্যন্তরীণ উৎসে চাপ কমবে। এটা ব্যক্তি খাতের জন্যও ভালো হবে। প্রস্তাবিত এডিপি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হলে এটা দিয়েই উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব।’ বণিক বার্তা