খাগড়াছড়ি:- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, মোস্তাফিজুর রহমান, বিপিএএ খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার সিন্ধুকছড়ির প্রসিদ্ধ পর্যটন স্পট পঙ্খীমুড়া ভিউপয়েন্ট দেখে মুগ্ধতা প্রকাশ করে বলেন, প্রাকৃতিক অবয়ব আর বৈশিষ্ট্য অক্ষুন্ন রেখেই যে পাহাড়-টিলায় বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা যায় তা দেখার জন্য নেপাল, ভুটান বা মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রয়োজন নেই। এমন পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার অপার সম্ভাবনা রয়েছে দেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের পূণ্যভূমি খাগড়াছড়ি গুইমারার পঙ্খীমূড়ায় ।
সিনিয়র সচিব বলেন, স্থায়ী অবকাঠামো না করে প্রাকৃতিকভাবে সুন্দর গাছ-গাছালিতে ঘেরা দৃষ্টি নন্দিত এই ছোট্ট ছোট্ট পাহাড়গুলোকে কোটি টাকার সম্পদে পরিণত করা যায়। একেকটি পাহাড়, টিলা হতে পারে পর্যটন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। গোল ঘর, বাঁশ-কাঠের সহযোগে বেঞ্চ, ফটো বুথ, পার্কিং প্লেস তৈরি করে দিলে ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য ভালো হবে।
পরে তীব্র গরমের মধ্যেও ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠীর চমকপ্রদ নৃত্যশৈলী দেখে সিনিয়র সচিব ও তাঁর পরিবার উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন এবং পরবর্তীতে আবার গুইমারা উপজেলা ভ্রমণের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এসময় খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান, পুলিশ সুপার মুক্তা ধর, গুইমারা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেমং মারমা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীব চৌধুরী, সিন্দুকছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রেদাক মারসা সহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, সিন্দুকছড়ির আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর পাহাড়ি রাস্তা গুলোর একটা। এটি বাইকারদের জন্য একই সাথে আকর্ষণীয় এবং রোমাঞ্চকর একটি রাস্তা। পাশাপাশি পাহাড়ের উঁচুতে দৃষ্টি কেড়ে অবস্থান করছে একটি বৌদ্ধ বিহার। বিহারের সিড়ির উন্নয়ন কাজ করার পাশাপাশি পর্যটকদের কথা চিন্তা করে প্রসিদ্ধ পর্যটন স্পট পঙ্খীমুড়া ভিউপয়েন্টের উন্নয়নে কাজ করতে গুইমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীব চৌধুরীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে জেলা প্রশাসন থেকে সর্বোচ্চ সাপোর্ট দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
গুইমারা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেমং মারমা জানান, প্রাকৃতিক সম্পদ বা প্রাকৃতিক সম্পদের সাথে জড়িতদের ক্ষতি সাধন না করে পঙ্খীমুড়ায় পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা হলে, ওই এলাকার কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও উন্নয়ন সাধনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে।
সিন্দুকছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেদাক মারমা বলেন, পঙ্খীমুড়া পাহাড়টি নামকরা এবং ঐতিহ্যবাহী পাহাড়। এই পাহাড়ের চূড়ায় পূরনো একটি বৌদ্ধ বিহার রয়েছে। বৌদ্ধ বিহারটির উন্নয়ন করা গেলে, সড়কের পাশাপাশি বিহারটি পর্যটকদের আকর্ষণ করবে।তবে পর্যটন স্পট করতে হলে ওই এলাকার মানুষের জীবন মান পরিবর্তনে কিছু কাজ করতে হবে। ওখানে পানির সমস্যার পাশাপাশি বিদ্যুৎ নেই। বিদ্যালয় স্থাপন ও জরুরি হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ এলাকায় পর্যটন স্পট হলে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা হুমড়ি খেয়ে আসার সম্ভাবনার পাশাপাশি এ গুইমারা উপজেলা তথা খাগড়াছড়ি জেলাসহ জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখবে। কারণ ভারতের দার্জিলিং তখন হয়ে যাবে খাগড়াছড়ির গুইমারায়।
সুইনুচিং মারমা বলেন, নেপাল, ভুটানসহ বিশ্বের অনেক দেশে পাহাড়কে সুরক্ষা করে বিপুল অর্থ আয় করা হচ্ছে। একেকটি পাহাড় প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। এ অঞ্চলে ও পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। সিলেটের মতো এখানেও পাহাড়, টিলাকে ঘিরে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা গেলে দেশি-বিদেশি পর্যটকের ঢল হবে। পাহাড়গুলোকে সুরক্ষা করে পর্যটনসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করার মতো কার্যকর উদ্যোগ নিলেই এর সুফল বয়ে আসবে। কারণ পাহাড়, টিলা আর কোলাহলমুক্ত এই এলাকায় পর্যটনকেন্দ্র গড়ে উঠলে পর্যটকদের জন্য ভালো হবে।
গুইমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীব চৌধুরী বলেন, স্থায়ী অবকাঠামো না করে, গোল ঘর, বাঁশ-কাঠের সহযোগে বেঞ্চ, ফটো বুথ, পার্কিং প্লেস তৈরি করে এ এলাকায় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠলে আর পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট, দোকান ও যানবাহন ব্যবস্থাপনায় শত শত মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এতে করে এই এলাকার অনগ্রসর মানুষের জীবন যাপনের মান পরিবর্তন হবে বলে তিনি আশা করেন।