শিরোনাম

ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে মরছে নদী : নিচে নামছে ভ‚গর্ভস্থ পানির স্তর,মরুভুমিতে পরিণত হচ্ছে দেশ

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
  • ১৪৪ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- মরণ বাঁধ ফারাক্কাসহ বিভিন্ন নদীতে বাঁধ দিয়ে ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের ফলে সারাদেশের নদ-নদী আজ মৃত্যুর মুখে। শুষ্ক মৌসুমের আগেই দেশের সব নদ-নদী শুকিয়ে মরা খালে পরিণত হচ্ছে। সেই সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অনাবৃষ্টি জন্য দেশ দ্রæত মরুকরণের দিকে ধাবিত হচ্ছে। সারাদেশে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আশঙ্কাজনক হারে নিচে নেমে যাচ্ছে। মাটির নিচ থেকে মাত্রাতিরিক্ত পানি উত্তোলনের ফলে রাজধানী ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিবছর কমপক্ষে ৬ থেকে ৭ ফুট করে নিচে নেমে যাচ্ছে। বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কোথাও কোথাও ১১০ থেকে ১২০ ফুট নিচে নেমে গেছে। বরেন্দ্র অঞ্চলসহ দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের অনেক এলাকাতেই হস্তচালিত টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। ফলে এলাকার মানুষের মধ্যে পানির সংকট চরমে পৌঁছেছে। পরিবারের খাবার পানি সংগ্রহের জন্য দুই তিল কিলোমিটার দূরে কলসি নিয়ে ছুটে যেতে হচ্ছে। তারপরও প্রয়োজনীয় পানি মিলছে না। খাবার পানির জন্য কারবালার মত হাহাকার করছে ওইসব এলাকার মানুষ। পানির অভাবে পশু-পাখির জীবনও ওষ্ঠাগত। ফসলের মাঠ ফেটে চৌচির। প্রকৃতি বিরান মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে কৃষি কার্যক্রমও।

ফারাক্কা বাঁধের প্রভাবে পদ্মা নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। যার ফলে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প গঙ্গা-কপোতাক্ষ খালেও পানি নেই। কুষ্টিয়ায় ভ‚গর্ভস্থ পানির স্তর ৩৪ ফুট নিচে নেমে গেছে। টানা তীব্র তাপপ্রবাহে জেলার ৬ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের টিউবওয়েলে উঠছে না পানি। নদী ও খাল-বিল শুকিয়ে গেছে। ফলে মানুষের মধ্যে তীব্র পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। গত একমাস ধরে পানির সঙ্কটে কষ্ট করেছেন জেলার লাখো মানুষ। পানির স্তর নেমে যাওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষের পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য। দীর্ঘ অনাবৃষ্টি, ভ‚-গর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার, অপরিকল্পিতভাবে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি তোলা ও পুকুর, খাল-বিল ভরাটের কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিপাত না হলে পরিস্থিতি আরও অবনতি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তীব্র তাপপ্রবাহ, দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় পানির প্রাকৃতিক উৎসগুলোও ক্রমেই শূন্য হয়ে পড়ছে। এছাড়াও অপরিকল্পিত গভীর নলক‚প ও অসংখ্য সাবমারসিবল পাম্প স্থাপনের কারণে ভ‚-গর্ভস্থ পানির স্তরও নিচে নেমে গেছে। ফারাক্কা বাঁধের প্রভাবে পদ্মা নদী শুকিয়ে গেছে। যার ফলে সেচ প্রকল্প গঙ্গা-কপোতাক্ষ খালেও পানি নেই। এ ছাড়া গড়াই, কালী, ভৈরব, মাথাভাঙ্গা, মধুমতি নদীসহ পদ্মার অন্যান্য শাখা নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। এতে অগভীর টিউবওয়েলে পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এতে একদিকে পান করার জন্য বিশুদ্ধ পানির যেমন সঙ্কট দেখা দিয়েছে একইসঙ্গে কৃষি জমিতে সেচ দেয়ার জন্যও পাওয়া যাচ্ছে না পর্যাপ্ত পানি। ফেব্রæয়ারি মাস থেকেই পানির স্তর নিচে নামতে শুরু করেছে। বর্তমানে ভ‚গর্ভস্থ পানির স্তর ৩৪ ফুট নিচে নেমে গেছে। বিশুদ্ধ খাবার পানির পাশাপাশি কৃষি জমিতে সেচের পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন এলাকার মাঠের সেচে পানি উঠছে না। ফলে বোরো ধানের জমিতে সেচ নিয়ে ঝুঁকিতে পড়েছে কৃষকরা। উৎপাদনে ক্ষতির শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ি এলাকার সুমন আলী বলেন, আমাদের এলাকার ৯০ ভাগ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। পানি না উঠায় মানুষের কষ্ট হচ্ছে। বিশুদ্ধ খাবার পানির জন্য এক পাড়া থেকে আরেক পাড়ায় যেতে হচ্ছে। আশেপাশের এলাকার অবস্থাও একই। পানির অভাবে নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। গত একমাস ধরে টিউবওয়েলে পানি উঠে না। বর্তমানে তীব্র পানি সঙ্কটে দিশেহারা অবস্থা।
কুমারখালীর বাধবাজার এলাকার মতি মন্ডল বলেন, কয়েকদিন ধরে অধিকাংশ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। খালবিল ও নদী শুকিয়ে গেছে। পানির অভাবে আমরা খুব কষ্টে আছি। খাবার পানি, গৃহস্থালির কাজ ও কৃষি জমিতে সেচ দিতে ভোগান্তি হচ্ছে। দূরদূরান্ত থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে।
খোকসা, কুমারখালী ও ভেড়ামারা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, গত কয়েকদিন ধরে তীব্র পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। মাঠের সেচ পাম্পে পর্যাপ্ত পানি উঠছে না। বোরো ধানসহ বিভিন্ন চাষাবাদ নিয়ে কৃষকরা চিন্তিত। পানির অভাবে ফসলের ফলন কমে যাবে এবং খরচ বেড়ে যাবে। দিনদিন পানির সঙ্কট বেড়েই চলেছে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী ইব্রাহীম মো. তৈমুর জানান, কুষ্টিয়ায় ভ‚-গর্ভস্থ পানির স্তর ৩৪ ফুট নিচে নেমে গেছে। তীব্র তাপপ্রবাহ, দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়া, নদী খালবিল শুকিয়ে যাওয়া, অপরিকল্পিত গভীর নলক‚প ও অসংখ্য সাবমারসিবল পাম্প স্থাপনের কারণে ভ‚-গর্ভস্থ পানির স্তরও নিচে নেমে গেছে। ব্যক্তিগতভাবে বসানো বেশিরভাগ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। পানির স্তর ২০ ফুট নিচে নামলেই সাধারণ নলক‚প ও টিউবওয়েলে পানি উঠতে সমস্যা হয়। পানি সঙ্কট সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।

এদিকে মরনবাঁধ ফারাক্কা ও ভারতের বৈরী আচরণে-চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকার বিভিন্ন এলাকায় মহানন্দা নদী এখন মরা খালে পরিনত হয়েছে। নদী জুড়ে পানির বদলে এখন বালুর চর। চাঁপাইনবাবগঞ্জের পূণর্ভবা-মহানন্দা নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। খনন না করায় পলি জমে ভরাট হয়ে নৌ-চলাচল প্রায় সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে।
ব্যবসা-বাণিজ্য ভাটা পড়ে দিন দিন অর্থনীতি পঙ্গু, অন্যদিকে কৃষি উৎপাদনে দারুণ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়াতে আজ ৪টি উপজেলাবাসীর জন্য এক অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৪টি উপজেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি তাদের প্রধান সমস্যা পূণর্ভবা-মহানন্দা নদী সংস্কার; কিন্তু সংস্কারের কোন বাস্তব পরিকল্পনা নেয়া হয়নি। ফলে খাল-বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। নলক‚পে পানি না পেয়ে সেচের অভাবে উপজেলার হাজার হাজার একর জমির ফসল উঠাতে দ্বিগুন খরচ করে কৃষকরা সর্বস্বান্ত হয়। মহানন্দা নদী দিয়ে বর্ষাকালে পাহাড়ি ঢলে ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে পলি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে পানি উপচিয়ে নদীর উভয় তীরের আবাদী ফসল ভাসিয়ে নিয়ে যায়।

অপরদিকে, পলি ও বালি এসে ফসলি জমি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে বালি চাপা পড়ে জমির ফসল অনাবাদী হয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ী ঢলের সাথে বালু এসে প্রায় ৪০ কিঃ মিঃ উত্তর-দক্ষিণ দিকে গোমস্তাপুর, মল্লিকপুর, চৌডালা, মকরমপুর, আলিসাহাপুর, ভোলাহাট পর্যন্ত পলি জমে মহানন্দা নদীর বিলীন হতে চলেছে।
এলাকাবাসী জানান, চলতি শুকনো মৌসুমে রোকনপুর থেকে ১১ মাইল দীর্ঘ কাজিগ্রাম পর্যন্ত বর্ষাকালে লঞ্চ চলাচল করে। অন্য সময় উক্ত এলাকাবাসীর বিকল্প পথ হিসেবে বাসে যাতায়াত করে। মহানন্দা নদীতে পানির অভাবে ৪টি উপজেলার প্রায় হাজার হাজার বিঘা জমির ফসল প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মার খাচ্ছে। নদী দুটি শুকিয়ে যাবার কারণে পাওয়ার পাম্পগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে।

ফারাক্কা-তিস্তা আর মহানন্দা নদীর উজানে ভারতের বাঁধ সমগ্র উত্তরাঞ্চলকে মরুভ‚মিতে পরিণত করেছে। এছাড়াও ডাহুক, গোবরা,ভেরসা চাওযাই,করতোয়া, তিরনই, রনচন্ডি’র মত অনেক ছোট ছোট নদী এসেছে সরাসরি ভারত থেকে। সবগুলো নদীর মুখে বাঁধ দিয়ে আটকিয়ে দিয়েছে নদীর পানির ধারাকে। এর মধ্যে বড় নদী হল মহানন্দা আর করতোয়া। ছোট নদী গুলো একপ্রকার অস্তিস্থহীন হয়ে পড়েছে। আর বড় নদী মহানন্দা, তিস্তা আর করতোয়া পরিনত হয়েছে মরা খালে।
নদী তীরবর্তী প্রবীণরা বলেছেন এইতো ষাট সত্তর বছর আগের কথা যেখানে ছিল বিস্তৃত পানির ধারা। যার বিশাল স্রোতধারা আমাদের করতো সঞ্জিবিত সিক্ত। যা ছিল জীবন দায়িনী। কৃষি যোগাযোগ ,মৎস আর জীব বৈচিত্রতা ও আর্থিক উৎসের আধার।

ভারত তার পানি আগ্রাসী নীতিতে গঙ্গায় ফারাক্কা ব্যারেজ দিয়ে বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চলের পরিবেশের মহা বিপর্যয় ডেকে এনে ক্ষান্ত হয়নি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলেও মহানন্দা নদীর উপর ব্যরেজ নির্মাণ করে পঞ্চগড় জেলাকে মরুভ‚মিতে পরিনত করে দিয়েছে। ভারতের হিমালয় থেকে বয়ে আসা মহানন্দা নদী বাংলাদেশের সর্বোত্তরে বাংলাবান্ধা জিরো লাইন ঘেষে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এ নদীর উৎস মুখে ভারতের অসংখ্য ব্যারেজ আর ড্যাম নির্মাণ করে পানি আটকানো হচ্ছে।

এ ব্যাপারে পরিবেশবিদরা বলেছেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে ভারতের একগুয়েমী সিদ্ধান্ত। নদীর উপর ব্যরেজ নির্মাণ করে বাংলাদেশকে মরুভ‚মিতে পরিনত করা। ভারত আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করে অভিন্ন নদীর পানি সরানোর অধিকার রাখেনা। পানি বাংলাদেশের ন্যায্য অধিকার। আইনী লড়াই করে যেমন সমুদ্র অধিকার আদায় করেছি। তেমনি নদীর উৎস্য সংশ্লিষ্ঠ দেশগুলোর সাথে আলাপ করে নদীর পানির সমস্যার সমাধান করতে হবে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে অভিন্ন নদীগুলোর প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে। আর এমন দাবি এখন সর্বত্রই।ইনকিলাব

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions