ডেস্ক রির্পোট:-: শীতের মৌসুম শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকাতে শুরু করেছে। হ্রদের পানি কমে গেলে ভেসে ওঠে জমি।
এই জমিকে বলা হয় জলে ভাসা জমি। যথা সময়ে কাপ্তাই হ্রদের জলে ভাসা জমিতে বোরো ধানের আবাদ শুরু হয়েছে।
বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদে জেগে ওঠা জমিতে কৃষক-কৃষাণি চাষাবাদ শুরু করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কৃষকরা তাদের মাথার ঘাম পায়ে ঝরিয়ে এ জমিতে উৎপাদন করেন ফসল। এই জলে ভাসা জমিতে উৎপাদিত ফসলই কৃষকদের পুরো বছরের খাদ্যের যোগান দিয়ে থাকে।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, রাঙ্গামাটি জেলাতে আট হাজার ৫৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে চার হাজার ৩২৫ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড এবং তিন হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে উচ্চফলনশীল জাতের ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
চাষের জমির একটি অংশ জলে ভাসা জমি। এ পর্যন্ত ১৮০০ হেক্টর জলে ভাসা জমিতে ধান রোপণ করা হয়েছে। এ বছর সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জলে ভাসা জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।
স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, যথা সময়ে হ্রদের পানি শুকানো শুরু হয়েছে। আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদের জলে ভাসা জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণ করা হবে।
জেলা শহরের রাঙাপানি এলাকার স্থানীয় কৃষক মো. শাহাবুদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, আমি এবং আমার বড় বোন মিলে তিন একর জলে ভাসা জমিতে ৫০ কেজি উচ্চফলনশীল জাত-২৮ এবং বঙ্গবন্ধু বোরো ধান রোপণ করেছি। আশা করছি ৮০ মণের ওপরে ধান পাবো।
তিনি আরও বলেন, ধানের মণ বর্তমানে এক হাজার চারশ টাকা থেকে শুরু করে এক হাজার পাঁচশ টাকা পর্যন্ত বিক্রি চলছে। মৌসুমের আগে হ্রদের পানি না বাড়লে আমরা যেমন ফসল যথা সময়ে ঘরে তুলতে পারবো তেমনি লাভের অংকটা বেশি হবে।
একই এলাকার কৃষাণি শান্তি দেবী চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, আমি দুই একর জলে ভাসা জমিতে ধান রোপণ করেছি। ফসল যদি সঠিক সময়ে ঘরে তুলতে পারি তাহলে পুরো বছর আমার সংসার চলে যাবে।
ধান লাগানোর কাজে জড়িত শ্রমিক মায়ারাণী চাকমা এবং সুমন চাকমা বলেন, সারা বছর কৃষিকাজ করে জীবন পার করি। প্রতিদিন ৬০০ টাকা বেতনে কাজ করি। এ কাজ করতে অনেক ভাল লাগে।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তপন কুমার পাল বলেন, বোরোর মৌসুম শুরু হয়েছে। এ বছর হ্রদে উল্লেখযোগ্য পানি ছিল না। শীতের শেষে হ্রদে পানি কমতে থাকায় চাষিরা ধান রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছে।
এ কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, গতবার চার হাজার জলে ভাসা জমিতে আবাদ করতে পারলেও এইবারও আমরা আশা রাখছি সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি জমিতে তরমুজ, শসা, সবজিসহ নানারকম ফলমূলের চাষাবাদ করা হবে।
কৃষি কর্মকর্তা তপন কুমার পাল বলেন, সরকার কৃষির উন্নয়নে সব সময় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে রেখেছেন। সরকার কৃষির উন্নয়নে বছরে কোটি কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছে। আমরা সরকারের নির্দেশনা মেনে কৃষকদের সার, বীজ, কীটনাশক দিয়ে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের মাঠ কর্মীরা যেখানে চাষবাদ সেখানে অবস্থান নিয়ে কৃষকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
জলে ভাসা জমিতে বোরো ধানের পাশাপাশি নানা রকম ফল, শাক সবজির চাষাবাদ করা হয়। এ জমিতে উৎপাদিত ফসল একদিকে যেমন কৃষকদের অর্থনৈতিক চাকা সচল করে তেমনি জেলার মানুষের খাদ্য জোগান দিয়ে থাকে।বাংলানিউজ