খাগড়াছড়ি:- খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলায় ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদাবাজী ও এক ব্যক্তির স্ত্রীকে জিম্মি করে বিভিন্ন কু-প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগে স্থানীয় কথিত সাংবাদিক হাসান আল মামুনের সাথে এলাকাবাসীর হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এতে স্থানীয় কয়েকজন ও কথিত সাংবাদিক হাসান আল-মামুন আহত হয়। এই নিয়ে উভয়পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে আদালতে ও থানা অভিযোগ দায়ের করেন।
শনিবার (২০ এপ্রিল ২০২৪) সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, দৈনিক সরেজমিন বার্তার কথিত সম্পাদক পরিচয়ধারী সাংবাদিক মো. হাসান আল মামুন বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদক পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে আসছে। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাদেরকে বিভিন্ন মামলা মোকদ্দমা ও হয়রানি করার হুমকি দিয়ে থাকে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজী, অর্থ আত্মসাৎ, নারী কেলেঙ্কারীসহ নানান অভিযোগ রয়েছে বলে দাবি করেন স্থানীয় যুবসমাজ।
স্থানীয় যুবসমাজ অভিযোগ করে বলেন, কথিত সাংবাদিক পরিচয়ধারী হাসান আল-মামুনের পেশা ও নেশাই হচ্ছে মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে চাঁদাবাজীর মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করা। এলাকার সাধারণ মানুষ আম, কাঁঠাল ও আনারসের বাগান করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কোনো মতে ব্যবসা বাণিজ্য করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। সেখানেও হাসান আল মামুন নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষদের ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আত্মসাত করে আসছে। বর্তমানে এই কথিত সাংবাদিকের অন্যতম টার্গেট এলাকার যুবসমাজ। তার বিভিন্ন অপকর্মের প্রতিবাদ করায় যুবসমাজকে কিশোর গ্যাং উল্লেখ্য করে দৈনিক সরেজমিন পত্রিকায় প্রভাব খাটিয়ে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ করেছে। এছাড়াও এলাকার বিভিন্ন মুদি দোকান, ফার্মেসি, ইটভাটা, হার্ডওয়ারের দোকান, বিকাশের দোকানে বাকী করে লাখ-লাখ টাকা বকেয়া রেখে উক্ত বকেয়া টাকা না দিয়ে এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। টাকা চাইলেই বিভিন্ন হুমকি ধামকি ও নয়ছয় করে আজ দিবে-কাল দিবে বলে ঘুরায়। তার এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই থানাসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ রয়েছে।
মাটিরাঙ্গার রসুলপুর এলাকার বেশকয়েকজন প্রবীণ এলাকাবাসী অভিযোগ করেন বলেন, কথিত সাংবাদিকের কারণে সাধারণ মানুষ ঘরবাড়ি করার জন্য নিজের জায়গা থেকে ১-২টি গাছ কাটতে পারে না। ঘর নির্মাণের জন্য গাছ কাটতে গেলে চাঁদা দাবি করে, চাঁদা না দিয়ে বিভিন্ন হুমকি ধামকি প্রদান করে। এই নামধারী সাংবাদিক হাসান আল মামুন এর অত্যাচারে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। তার এসব কর্মকাণ্ডে কারণে সাংবাদিকতার মতো একটি মহৎ পেশা কলঙ্কিত হচ্ছে।
সম্প্রতি, হাসান আল মামুন এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এর নিকট লিখিত অভিযোগ করেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
প্রসঙ্গত, গতকাল ২০ এপ্রিল সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৫টায় খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা উপজেলার বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম জনি নামক এক ব্যক্তিকে মিথ্যা মামলা দিয়ে তার স্ত্রীকে ১০ মাস যাবৎ জিম্মি করে বাসায় বিভিন্ন কাজ করিয়ে টাকা না দিয়ে সুবিধা ভোগ করে যাচ্ছে। বর্তমানে জহিরুল ইসলাম জনির স্ত্রী সুমী আক্তারকে বিভিন্ন অনৈতিক কু-প্রস্তুব দিচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী নিজে। জিম্মিকৃত সুমী আক্তারকে উদ্ধারের জন্য তার স্বামীর বড় বোন লাবনী আক্তার গেলে তাকেও ঘরে আটকে বাহিরে থেকে তালা মেরে দেয়। পরে স্থানীয় এলাকাবাসী চিৎকার চেচামেচি শুনে ঘটনাস্থলে এসে কথিত সাংবাদিক পরিচয়ধারী হাসান আল মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে এলাকাবাসীর সাথে বাকবিতেণ্ডে জড়িয়ে পড়লে একপর্যায়ে হাতাহাতি পর্যায়ে চলে যায়। এতে দুই পক্ষ আহত হয়।
ভুক্তভোগী জহিরুল ইসলাম জনির স্ত্রী সুমী আক্তারের সাথে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার স্বামীর সাথে মনোমালিন্ন নিয়ে ঝগড়া হলে তার কাছে বিচারের জন্য গেলে সে আমাকে বিভিন্ন ভুলভ্রান্তি বুজিয়ে আমাকে দিয়ে একটি অভিযোগ লিখে এবং পরক্ষণে আমাকে বলে এটি শুধু মাত্র তোমার স্বামীকে ঠিক করার জন্য। এই বলে সে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে আমাকে বাদী করে মামলা করায় এবং দীর্ঘদিন যাবৎ আমাকে দিয়ে তার বাসার সকল কাজ কর্ম করিয়ে নেয় বিণিময়ে কোনো অর্থ প্রদান করে না। হাসান আল মামুন আমাকে বিভিন্ন ভাবে কু-প্রস্তুাব দিচ্ছে। এছাড়াও তার বাসায় কাজ করার সময় কাজে কোথাও ভুল হলে তার পরিবারের সবাই আমাকে মারধর করতো। এমনকি আমার তিন বছর বয়সী শিশুকে বিভিন্ন সময় মারধর করে এবং মেয়ে কান্নাকাটি করলে তাকে ফ্রিজের ভিতর আটকে রেখে নির্যাতন করেন। গতকাল আমার স্বামীর বড়বোন আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আসলে, সে আমার স্বামীর বড়বোনকেও আটক করে ৫ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে শারীরিক সর্ম্পকের জন্য কু-প্রস্তাব দেয়। পরে এলাবাসী এসে আমাদের দুইজনকে জিম্মি অবস্থা থেকে মুক্ত করে।
এ বিষয়ে হাসান আল মামুন বলেন, আমার বাসার কাজের লোকের স্বামী একজন ওয়ারেন্ট ভুক্ত আসামী। গত ১৯ এপ্রিল তাকে এলাকায় দেখতে পেয়ে আমি পুলিশে খবর দিয়ে ধরিয়ে দেওয়ার কারণে একদল চক্র আমার উপর হামলা করে। এতে স্থানীয় এক গাছ ব্যবসায়ী ইন্ধনদাতা হিসেবে কাজ করেছে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে মাটিরাঙ্গা থানার অফিসার ইনর্চাজের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, হাসান আল মামুন ও এলাকাবাসীর সাথে হাতাহাতির বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি মামলার প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় আছে। পার্বত্যনিউজ