সামাজিক নিরাপত্তা বলয় বাড়ছে,নতুন যোগ হচ্ছে ২০ লাখ দরিদ্র

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪
  • ১৪৮ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- মূল্যস্ফীতির কশাঘাত মোকাবিলায় ২০ লাখ ২৬ হাজার দরিদ্র মানুষকে নতুন করে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনা হচ্ছে। এর মধ্যে বিভিন্ন ভাতার আওতায় আসবেন ১০ লাখ ২৬ হাজার জন। এরা সবাই অতিদরিদ্র। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মুখে ওএমএসসহ খাদ্য সহায়তা কর্মসূচিতে যুক্ত করা হবে বাকি ১০ লাখ। পাশাপাশি দেশের সব প্রতিবন্ধীকে ভাতার আওতায় আনা হবে। নতুনভাবে যুক্ত দরিদ্র জনগোষ্ঠী বর্তমানে অন্য কোনো ধরনের ভাতা ও খাদ্য সহায়তা পাচ্ছে না। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যা আগামী (২০২৪-২৫) বাজেটে কার্যকর করা হবে।

ওই বৈঠকে উপকারভোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি ভাতার অঙ্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাঁচ হাজার টাকা এবং যারা ৯০ বছরে পা রেখেছেন তাদের বয়স্ক ভাতার অঙ্ক ৫শ থেকে বাড়িয়ে এক হাজার টাকা নির্ধারণ হবে। আর দরিদ্র মা ও শিশু সহায়তা ভাতার অঙ্কও বাড়বে আগামী বাজেটে।

বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, সবার দাবি পূরণে তিনি সচেষ্ট থাকবেন। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া তিনি সিনিয়র নাগরিকদের ভাতা বাড়ানোর প্রসঙ্গে মত দিয়েছেন।

সূত্রে জানা গেছে, এ বৈঠকে অংশ নেওয়া সবার মতামত সংযুক্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সারসংক্ষেপ পাঠাবেন অর্থমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় যে মত দেবে, তাই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।

জানতে চাইলে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান জানান, মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের কষ্ট হচ্ছে। এজন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানো হচ্ছে। এক কোটি মানুষকে টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি দিয়ে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি পর্যায়ক্রমে কমে আসবে।

সূত্রমতে, আগামী বাজেটে নতুন করে বয়স্কভাতা ভোগীর সংখ্যা দুলাখ বাড়ানো হচ্ছে। একইভাবে বিধবা ভাতাভোগীর সংখ্যাও দুলাখ বাড়বে। আর প্রতিবন্ধীর সংখ্যা তিন লাখ ৩৪ হাজার, মা ও শিশু সহায়তা উপকারভোগীর সংখ্যা দুলাখ ৬০ হাজার জন বাড়বে। পাশাপাশি নতুন করে হিজড়া সম্প্রদায় উপকারভোগীর সংখ্যা ১২ হাজার ২২৯ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এছাড়া জটিল রোগে আক্রান্ত এমন ২০ হাজার জনকে নতুন করে চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হবে।

করোনার ধাক্কার পর অর্থনীতি পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া চলার সময় মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিমাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি রয়েছে। গত ডিসেম্বরে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ শতাংশে নামিয়ে আনার। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। গেল রমজানকে কেন্দ্র করে বাজারে জিনিসপত্রের দাম আরেক দফা বেড়েছে। ফলে মার্চে মূল্যস্ফীতি শূন্য দশমিক ১৪ শতাংশ বেড়ে ৯ দশমিক ৮১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্য দিয়েই মানুষের জীবনযাত্রা অতিক্রম করছে। এর প্রভাব দরিদ্র মানুষের ওপর পড়েছে। নতুন করে মানুষ গরিব হচ্ছে। বিশেষ করে অতিদরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থায় আছে। মূল্যস্ফীতির এই কশাঘাত থেকে রক্ষায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বলয় বাড়ানোর কথা দীর্ঘদিন থেকে বলে আসছেন দেশের অর্থনীতিবিদরা।

এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অ-অর্থনৈতিক খাতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ঋণের সুদহার বাড়ানো হয়েছে। যাতে মানুষ ভোগে অর্থ ব্যয় না করে সঞ্চয়মুখী হয়। মূল্যস্ফীতির অভিঘাত মোকাবিলায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আকার বাড়ানো হচ্ছে।

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মাসিক সম্মানি ৩০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। সেখানে মন্ত্রী বলেন, যারা দেশের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধ করেছেন এবং দেশকে স্বাধীন করেছেন, তারা যেন একটু ভালো থাকেন, সে কারণে সম্মানি ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করতে চান। এর আগে ২০২১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি বাড়ানো হলে এরপর আর বাড়েনি। বর্তমানে দুলাখ মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার এ ভাতা পাচ্ছেন।

এছাড়া বয়স্কভাতা ভোগীর সংখ্যা ৫৮ লাখ এক হাজার থেকে বাড়িয়ে ৬৫ লাখ করার প্রস্তাব করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। অর্থাৎ নতুন করে ৬ লাখ ৯৯ হাজার বয়স্ক ব্যক্তিকে এ সুবিধার আওতায় আনার কথা বলা হয়। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় ৫০৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। বৈঠকে পর্যালোচনা করেন নতুন দুলাখ উপকারভোগী বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে মোট উপকারভোগীর সংখ্যা ৬০ লাখে উন্নীত করা হয়। সাধারণ বয়স্কভাতা ৬০০ টাকা অপরিবর্তিত থাকছে। তবে ইতোমধ্যে যেসব ভাতাভোগী ৯০ বছরে পা দিয়েছেন তারা মাসে ৬০০ টাকার পরিবর্তে এক হাজার টাকা পাবেন।

এছাড়া বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত মহিলা ভাতাভোগীর সংখ্যা দুলাখ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে। ফলে দেশে এ কর্মসূচিতে মোট উপকারভোগীর সংখ্যা দাঁড়াবে ২৭ লাখ ৭৫ হাজারে। এক্ষেত্রে ভাতার অঙ্ক বিদ্যমান ৫৫০ টাকা বহাল থাকবে। যদিও বৈঠকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৭ লাখ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, এটি বাস্তবায়ন হলে সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় বাড়বে ৪৬৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা।

এছাড়া মা ও শিশুসহায়তা কর্মসূচির আওতা ২০ শতাংশ এবং ভাতার অঙ্ক একশ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বর্তমানে ১৩ লাখ ৪ জন এ সুবিধা পাচ্ছেন। আগামী অর্থবছরে এ কর্মসূচিতে নতুন মুখ যুক্ত হবে দুলাখ ৬০ হাজার । ফলে মা ও শিশুসহায়তার উপকারভোগী দাঁড়াবে ১৫ লাখ ৬৪ হাজারে। পাশাপাশি এ কর্মসূচির ভাতার পরিমাণ ৫শ থেকে বেড়ে এক হাজার টাকা হচ্ছে। কোনো প্রতিবন্ধী ভাতার বাইরে থাকবে না। প্রতিবন্ধীদের শতভাগ ভাতার আওতায় আনতে আগামীতে তিন লাখ ৩৪ হাজার জনকে নতুন যুক্ত করা হবে। বর্তমানে এ সুবিধা পাচ্ছেন ২৯ লাখ জন। উপকারভোগীর আওতা বাড়ায় আগামীতে মোট সুবিধা পাবেন ৩২ লাখ ৩৪ হাজার জন। অতিরিক্ত মুখ যুক্ত হওয়ায় সরকারের বছরে ব্যয় হবে ৩৩২১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ সরকারের ব্যয় বাড়বে ৩৪৩ কোটি ৬ লাখ টাকা। সূত্র আরও জানায়, হিজড়া, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ভাতা কর্মসূচির আওতায় আরও ১২ হাজার ২২৯ জনকে আনা হচ্ছে। এতে এ খাতে সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৬৫ হাজার থেকে বেড়ে ৭৭ হাজার ২২৯ জনে উন্নীত হবে।

এছাড়া ক্যানসার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত ও জন্মগত হৃদরোগীদের জন্য আর্থিক সহায়তা কার্যক্রমও চলমান থাকবে। এ খাতে আরও ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। আর্থিক সুবিধা বাড়িয়ে আরও ২০ হাজার রোগীকে সহায়তা দেওয়া হবে।

সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোট বরাদ্দ ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার মধ্যে রাখা হবে। চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২৪) এ খাতে মোট এক লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এক লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। দেশে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতের আওতায় ১২৩টি কর্মসূচি বা বিষয় রয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করছে ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এগুলোর মধ্যে ৮টি কর্মসূচি হচ্ছে নগদ ভাতা, আর ১১টি খাদ্যসহায়তা।

জানা গেছে, প্রতিবছর বাজেটের আগে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি বৈঠক করে এর আওতা ও ভাতা বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অর্থমন্ত্রী এ কমিটির সভাপতি। কমিটিতে আরও ৯ জন মন্ত্রী রয়েছেন। বাজেটের আগমুহূর্ত ছাড়াও প্রতি তিন মাস অন্তর কমিটি বৈঠক করে। সর্বশেষ বৈঠক করেছে গত ৯ এপ্রিল। সেখানে সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী নাজমুল হাসান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. কামরুল হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।যুগান্তর

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions