
ডেস্ক রির্পোট:- দীর্ঘদিন ধরে ১৩টি পৌর এলাকার বর্জ্য খোলা আকাশের নিচে, ড্রেন, পুকুর কিংবা নদীতে ফেলা হচ্ছেদীর্ঘদিন ধরে ১৩টি পৌর এলাকার বর্জ্য খোলা আকাশের নিচে, ড্রেন, পুকুর কিংবা নদীতে ফেলা হচ্ছে
রাজশাহী জেলায় পৌরসভার সংখ্যা ১৪। এর মধ্যে ১৩টিতেই নেই নির্ধারিত ময়লা-আবর্জনা ফেলার জায়গা বা ডাম্পিং স্টেশন। ফলে দীর্ঘদিন ধরে এসব পৌর এলাকার বর্জ্য খোলা আকাশের নিচে, ড্রেন, পুকুর কিংবা নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়ছে। ইতিমধ্যে অনেকে চর্মরোগ এবং ডায়রিয়াসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। দিন দিন ঝুঁকি আরও বাড়ছে।
যদিও আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য চারটি পৌরসভায় প্রায় ছয় কোটি টাকার একাধিক প্রকল্প থাকলেও দীর্ঘদিনে সেগুলোর বাস্তবায়ন হয়নি। বর্জ্য সংগ্রহ ও নির্দিষ্ট জায়গায় নেওয়ার জন্য কোটি টাকায় কেনা যানবাহন ও সরঞ্জাম ব্যবহারের সুযোগ না পাওয়ায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পৌরসভাগুলো বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বছরে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয় করলেও বাস্তবচিত্র ভিন্ন। কোথাও গড়ে তোলা হয়নি ডাম্পিং স্টেশন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভায় ডাম্পিং স্টেশন নেই। ফলে পৌর শহরের ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয় বারনই নদীতে। একই নদীতে ফেলা হয় বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ ও তাহেরপুর পৌরসভার বর্জ্য। দুর্গাপুর পৌরসভার বর্জ্য ফেলা হয় হোজা নদীতে। গোদাগাড়ী পৌরসভার বর্জ্য ফেলা হয় পদ্মার বিভিন্ন স্থানে। এ ছাড়া কাটাখালী পৌরসভার বর্জ্য ফেলা হয় সিটি হাটের ভাগাড়ে। তবে বেশিরভাগ ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয় কাটাখালী বাজারের ড্রেনে। ফলে বৃষ্টি হলে বড় ড্রেনটি সংকুচিত হয়ে পানি জমে থাকে। আর বাঘা পৌরসভার নির্ধারিত জায়গা থাকলেও বর্জ্য ফেলা হয় শাহী মসজিদের পুকুরে।
বাঘা পৌর এলাকার বাসিন্দা শহিদুল হক বলেন, ‘পৌরসভার বর্জ্য পুুকুরে ফেলার কারণে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। সেই পুকুরে গোসল করলে চর্মরোগ ছাড়াও ডায়রিয়া রোগ দেখা দিচ্ছে। কখনও কখনও খোলা আকাশের নিচে ছাড়াও বর্জ্যগুলো ফেলা হয় ড্রেনে। এর ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। জলাবদ্ধতার জমে থাকা পানিতে মশা বংশ বিস্তার করে। সেই মশা-মাছি থেকে ছড়াচ্ছে রোগব্যাধি। জমে থাকা সেই পানিতে পা চুলকায়।’
পবা উপজেলার স্কুলশিক্ষক সাকিলা খাতুন বলেন, ‘নওহাটা পৌরসভার বর্জ্য বারনই নদীতে ফেলা হচ্ছে। সেগুলো ভেসে ভেসে বাগমারায় চলে যাচ্ছে। সেই বর্জ্য পচে দুর্গন্ধ ও জীবাণু ছড়াচ্ছে।’
বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান জানান, এসব বর্জ্য ফেলায় পানি দূষিত হয়ে পড়ছে। এর ফলে নদী অববাহিকার মানুষ চর্মরোগ ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এ ছাড়া বর্জ্য থেকে সৃষ্ট বায়ুদূষণে হাঁপানি, ফুসফুসের ক্যানসার ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ছে। এজন্য এসব বর্জ্য ধ্বংস করা জরুরি।
স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯ অনুযায়ী, বর্জ্য অপসারণ ও ডাম্পিং ব্যবস্থাপনা প্রতিটি পৌরসভার অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব। অথচ রাজশাহীর ১৪টি পৌরসভার ১৩টিতে নেই ডাম্পিং স্টেশন। শুধুমাত্র চারঘাটে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থাকলেও পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই জেলার কোনও পৌরসভার।
রাজশাহী পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক কবির হোসেন বলেন, ‘নদী, পুকুর এবং খোলা স্থানে বর্জ্য ফেলার কারণে দূষণ বাড়ছে। খুব সহজে রোগ ছড়াচ্ছে। পরিবেশগত সমস্যা আমাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আমরা দূষণ প্রতিকারে অচিরেই সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করবো। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি, অল্প সময়ের মধ্যে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
এদিকে, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কাটাখালী, তাহেরপুর, বাঘা ও গোদাগাড়ী পৌরসভায় প্রায় ছয় কোটি টাকার একাধিক প্রকল্প চলমান রয়েছে। কিন্তু জমি না পাওয়া এবং প্রশাসনিক জটিলতাসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। ডাস্টবিন, ভ্যান, ভেকুসহ বিভিন্ন পরিবহন ব্যবহারের সুযোগ না পেয়ে খোলা আকাশের নিচে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। কাটাখালী পৌরসভায় কয়েক কোটি টাকার পরিবহন দীর্ঘদিন পড়ে থেকে অকেজো হয়ে পড়েছে। সেগুলো কাজে লাগানোর কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে কাটাখালী পৌরসভার প্রশাসক জাহিদ হাসান বলেন, ‘বর্জ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য এখনও নির্দিষ্ট জায়গা পাইনি। খোঁজা হচ্ছে। পেলে সেখানে একটি ডাম্পিং স্টেশন করা হবে।’
রাজশাহী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘পচনশীল বর্জ্য থেকে বিষাক্ত গ্যাস ও ব্যাকটেরিয়া ছড়ায়। এটি নানা রোগের কারণ হতে পারে। ভবিষ্যতে এটি স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এজন্য এসব বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে ধ্বংস করতে হবে।’