যুদ্ধবিরতির পরও গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৪৫ ফিলিস্তিনি

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৫
  • ৩৫ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- ফিলিস্তিনের গাজায় ঘোষিত যুদ্ধবিরতির মাঝেও থামেনি ইসরায়েলের আগ্রাসন। অবরুদ্ধ এ অঞ্চলে আবারও প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী, যাতে বহু ফিলিস্তিনি হতাহত হয়েছেন। একই সময়ে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী কয়েকজন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিলেও ফেরত দিয়েছে আরও ডজন ডজন মরদেহ। এই পরিস্থিতি যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব নিয়ে গভীর প্রশ্ন তুলেছে আন্তর্জাতিক মহলে।

মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, যুদ্ধবিরতির মধ্যেই গাজায় ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত রয়েছে। একই সঙ্গে ইসরায়েল পাঁচ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে এবং ৪৫ জন ফিলিস্তিনির মরদেহ ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছে। এই পদক্ষেপগুলো যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে নেওয়া হলেও হামলার ঘটনাগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে, বাস্তবে গাজায় সংঘাতের আগুন এখনো নিভে যায়নি।
সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, সোমবার সন্ধ্যায় মুক্ত হওয়া পাঁচ ফিলিস্তিনি বন্দিকে গাজার মধ্যাঞ্চলের দেইর আল-বালাহ এলাকার আল-আকসা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এখনো হাজার হাজার ফিলিস্তিনি ইসরায়েলের কারাগারে আটক রয়েছেন, যাদের অনেককেই কোনো অভিযোগ ছাড়াই তথাকথিত “প্রশাসনিক আদেশে” বন্দি করে রাখা হয়েছে।
এর আগে সোমবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির (আইসিআরসি) সহায়তায় ইসরায়েল ৪৫ জন ফিলিস্তিনির মরদেহ ফেরত দিয়েছে। এতে যুদ্ধবিরতির আওতায় এখন পর্যন্ত ফেরত পাওয়া মোট মরদেহের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭০। মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, ৭৮টি মরদেহের পরিচয় ইতিমধ্যে শনাক্ত করা গেছে। অনুমোদিত চিকিৎসা প্রোটোকল অনুযায়ী বাকি মরদেহগুলোর পরীক্ষার কাজ চলছে এবং পরীক্ষা শেষে এগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
অধিকৃত ফিলিস্তিনি প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফেরত পাওয়া অনেক মরদেহেই নির্যাতনের স্পষ্ট চিহ্ন পাওয়া গেছে। কিছু মরদেহে হাত বাঁধা, চোখে কাপড় প্যাঁচানো ও মুখ বিকৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো—মরদেহগুলোর কোনো শনাক্তকরণ ট্যাগ ছিল না, ফলে সেগুলো শনাক্ত করতে পরিবারগুলোকে চরম কষ্ট পোহাতে হচ্ছে।
এদিকে যুদ্ধবিরতির মাঝেও গাজায় হামলার খবর আসছে দক্ষিণাঞ্চল থেকে। নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের এক সূত্র আল জাজিরাকে জানায়, সোমবার রাতে রাফাহ শহরের উত্তরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত তিন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার পূর্বাঞ্চলে ইসরায়েলি গুলিতে এক শিশুসহ তিনজন আহত হওয়ার খবরও দিয়েছে আল-আহলি আরব হাসপাতালের একটি সূত্র।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, কিছু ফিলিস্তিনি “ইয়েলো লাইন”— অর্থাৎ ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণাধীন সীমান্ত এলাকা — অতিক্রম করায় তারা আত্মরক্ষার্থে দক্ষিণ গাজায় হামলা চালিয়েছে। সেনাবাহিনীর ভাষায়, ওই সীমা অতিক্রম করা যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন। তবে এই দাবির সত্যতা স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি, এবং নিহতদের পরিচয় সম্পর্কেও স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে আল জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজজুম জানান, ইসরায়েল বর্তমানে কোয়াডকপ্টার ড্রোন ব্যবহার করে আংশিক ধসে পড়া ভবনগুলোর ওপর গ্রেনেড নিক্ষেপ করছে। স্থানীয় প্রশাসনের মতে, “এই ধরনের হামলা যুদ্ধবিরতির সরাসরি লঙ্ঘন এবং এটি ইচ্ছাকৃতভাবে উত্তেজনা উস্কে দেওয়ার প্রচেষ্টা।”
গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয় জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল অন্তত ১২৫ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। কার্যালয়টি সতর্ক করেছে, যদি এসব হামলা অব্যাহত থাকে, তবে পরিস্থিতি দ্রুত পূর্ণমাত্রার সংঘাতে রূপ নিতে পারে, যার পরিণতি ভয়াবহ হবে সাধারণ মানুষের জন্য। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions