শিরোনাম
রাঙ্গামাটি টেলিভিশন জার্নালিস্ট এ্যাসোসিয়েশনের যাত্রা শুরু উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত করছে আঞ্চলিক কিছু সশস্ত্র সংগঠন: রিজিয়ন কমান্ডার রাঙ্গামাটিকে মাদকমুক্ত রাখার দাবিতে মানববন্ধন পুলিশ সদস্যরাই মাদক পাচারে যুক্ত, কেউ করেছেন ডুপ্লেক্স বাড়ি, কেউ হোটেল,ওসি শহিদুলের মাদকসংশ্লিষ্টতা পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় পাহাড় কাটার দায়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলা রাঙ্গামাটির চিৎমরম ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ বিহারে অষ্টপরিস্কার দান সংঘদান রাঙ্গামাটিতে দেড় দশকে বন্যহাতির আক্রমণে ৩৬ জনের মৃত্যু অন্তর্বর্তী সরকারের ষোলো মাস,উপদেষ্টা পরিষদের ৫১ বৈঠক ও ৮১টি অধ্যাদেশ প্রণয়ন জামায়াতের তালিকা থেকে বাদ পড়ছেন ১০০ প্রার্থী,রাঙ্গামাটিতে সর্বমিত্র চাকমা বা ফরহাদ,খাগড়াছড়িতে সাদিক কায়েম,বান্দরবনে খোঁজা হচ্ছে উপজাতি প্রার্থী যেভাবে ফাঁদে পড়েন প্রভা

বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সমরূপ ছাড় চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় সোমবার, ৩ নভেম্বর, ২০২৫
  • ১০২ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ৬ বিলিয়ন ডলারের। এ ঘাটতি কমিয়ে আনতে রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ এগ্রিমেন্ট বা পাল্টা শুল্ক চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম, সয়াবিন, তুলা, উড়োজাহাজ ক্রয়সহ বেশকিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ৬ বিলিয়ন ডলারের। এ ঘাটতি কমিয়ে আনতে রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ এগ্রিমেন্ট বা পাল্টা শুল্ক চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম, সয়াবিন, তুলা, উড়োজাহাজ ক্রয়সহ বেশকিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রকে এসব প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর এখন একই ধরনের সুবিধা আদায়ে তৎপর হয়েছে জাপানসহ বিভিন্ন দেশ। সর্বশেষ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলো বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যে সমতা আনতে সচেষ্ট হয়েছে। এ লক্ষ্য অর্জনে তারা যুক্তরাষ্ট্রের মতো সমরূপ বাণিজ্যে ছাড় চাইছে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্কে ন্যায্যতা নিশ্চিতের প্রত্যাশায় বাংলাদেশকে দরকষাকষির টেবিলে আনতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠিও পাঠিয়েছে ইইউর বাংলাদেশ ডেলিগেশন বা প্রতিনিধি দলের কার্যালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশে ইইউ ডেলিগেশন সূত্রে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছে ইইউ বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের কার্যালয়। এ চিঠিতে বাংলাদেশ-ইইউ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক-সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জগুলোর একটি তালিকা সংযুক্ত করা হয়েছে। চিহ্নিত নন-ট্যারিফ, নিয়ন্ত্রক, অন্যান্যসহ মোট ১৩টি চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশ-ইইউর দীর্ঘমেয়াদি ও গভীর অর্থনৈতিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে ইইউর চিঠির বিষয়বস্তু নিয়ে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। চ্যালেঞ্জ উত্তরণে বেশকিছু সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়েছে। সেগুলো নির্দেশনা আকারে লিখিতভাবে অংশীজনদের জানানোর প্রক্রিয়া দ্রুতই শুরু হবে বলে জানা গেছে।

চিঠির প্রেক্ষাপট নিয়ে তথ্যানুসন্ধান জালানো হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন বাণিজ্য ঘাটতি ও প্রতিবন্ধকতার কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে দরকষাকষির টেবিলে বসিয়েছিল। সেই আলোচনার আদলে ইইউর পক্ষ থেকেও কিছু উদ্বেগ চিহ্নিত করে বাংলাদেশ সরকারকে সেগুলো বিবেচনায় নিতে বলা হয়েছে।

ইইউ-সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকার যুক্তরাষ্ট্রের রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ চুক্তির আওতায় বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন অন্যান্য বড় বাণিজ্য অংশীদারও তাদের উদ্বেগ উত্থাপন করতে শুরু করেছে। এক্ষেত্রে ইইউর ভাবনা হলো ৬ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশ যখন যুক্তরাষ্ট্রকে বড় ধরনের ছাড় দিচ্ছে, তখন বাংলাদেশের সঙ্গে ইইউর বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ এর প্রায় তিন গুণ; যা ১৭ বিলিয়ন ইউরো বা ডলারে আরো বেশি। এ বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে এখন ইইউ বাণিজ্য সুবিধা বা ছাড় প্রত্যাশা করছে।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইইউ-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘নন-ট্যারিফ বাধাসহ আরো কিছু চ্যালেঞ্জের তালিকা আমরা সরকারকে দিয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন এ ধরনের বাণিজ্য ঘটতি বা প্রতিবন্ধকতা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে দরকষাকষির টেবিলে বসিয়েছিল। সেই আলোচনার আদলে ইইউর পক্ষ থেকেও কিছু উদ্বেগ জানিয়ে সেগুলো বিবেচনার কথা বলা হয়েছে। এগুলো বিবেচনায় নিলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক আরো নিবিড় হওয়া সম্ভব।’

চিঠিতে উল্লেখ করা উদ্বেগগুলো বিবেচনায় নিলে ইইউ ধরে নেবে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করতে যে উদ্যোগ বাংলাদেশ নিয়েছে তার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে এবং বিষয়টিকে বাংলাদেশ যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে—এমন মত প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট ওই কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে আরো বলেন, ‘ইইউর উত্থাপন করা বিষয়গুলোয় বাংলাদেশ যথাযথ গুরুত্ব দিলে তা এফটিএ সহায়ক হবে। অর্থাৎ বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জগুলো সমাধানের পথে অগ্রসর হলে এফটিএর জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি সহজ হবে।’

জানা গেছে, ইইউ আগামী বছরের শেষের দিকে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিজনেস ফোরাম করতে চাচ্ছে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক শক্তিশালী করতে সেই ধারাবাহিকতায় বেসরকারি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করে বাংলাদেশের সঙ্গেও ফোরাম অনুষ্ঠিত হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে খুব বেশি সময় না থাকায় নতুন সরকার এলে ফোরামের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ইইউ। সব মিলিয়ে ইইউর চিঠিটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ চুক্তিবিষয়ক প্রতিশ্রুতির প্রেক্ষাপটে বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দেয়া ইইউ বাংলাদেশ ডেলিগেশনের চিঠিতে ১৩টি চ্যালেঞ্জের মধ্যে ৫০টিরও বেশি বিষয় রয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন খাতে বাংলাদেশে ব্যবসা করতে গিয়ে ইইউ সদস্যদেশের সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো যেসব সমস্যা মোকাবেলা করছে, সেগুলো সরকারকে জানানো হয়েছে। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার কর্মসূচি পরিচালনা করছে। এ কর্মযজ্ঞে ইইউর কোম্পানিগুলোর সমস্যা বিবেচনায় নিলে তাদের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো বেশি অর্থবহ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

১৩টি চ্যালেঞ্জের কথা জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দেয়া চিঠির অনুলিপি পাঠানো হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান বরাবর। চিঠির একটি অনুলিপি বণিক বার্তার হাতে এসেছে।

এ চিঠি অনুযায়ী, ইইউর সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক উন্নয়নে চিহ্নিত ১৩টি চ্যালেঞ্জের মধ্যে প্রথম পাঁচটি অশুল্ক বাধা-বিষয়ক। পরবর্তী আটটি নিয়ন্ত্রক বা নীতিগত ও অন্যান্য সমস্যা হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে।

প্রথম চ্যালেঞ্জ হিসেবে সেবা বিনিয়োগ খাতে বিদেশী মালিকানাধীন লজিস্টিক কোম্পানিগুলোর লাইসেন্স নবায়নের জটিলতাকে একটি বড় বাধা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি ২০১৯ সালের ফ্ল্যাগ ভেসেল প্রটেকশন অ্যাক্ট এবং ২০২৩ সালের সংশ্লিষ্ট বিধিমালা বিদেশী জাহাজ পরিচালনায় সীমাবদ্ধতা তৈরি করেছে বলে জানানো হয়েছে। আরো বলা হয়েছে, কাস্টম হাউজ, সিএফএস/আইসিডি, কিউসি ও বন্ডেড গুদামে বিদেশী সংস্থার প্রবেশে বিধিনিষেধও বাণিজ্যিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে। এছাড়া নমুনা আমদানির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণের কারণে অনেক ইউরোপীয় কোম্পানি নতুন পণ্য বাজারজাতের আগে প্রাথমিক পরীক্ষায় সমস্যায় পড়ছে।

দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ কাস্টমস ও বাণিজ্য সহায়তা-বিষয়ক। এসব ক্ষেত্রে নানা ধরনের জটিলতা রয়েছে উল্লেখ করে ইইউ জানিয়েছে, কাস্টমসে পণ্যের ভুল মূল্যায়ন ও শ্রেণীবিন্যাস, যানবাহন ও বিপজ্জনক পণ্যের ভুল শ্রেণীবিন্যাস, স্মার্ট কার্ডের অতিমূল্যায়ন এবং এইচএস কোডের ত্রুটিপূর্ণ ব্যবহার ইউরোপীয় রফতানিকারকদের জন্য অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। এছাড়া অস্থায়ী আমদানি ও পুনরায় রফতানির প্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত জটিলতার বিষয়টি জানিয়ে ইইউ বলছে, আমদানির ঘোষণাপত্র প্রক্রিয়ায় অদক্ষতা রয়েছে।

কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সে দীর্ঘসূত্রতা, জটিল আমদানি নিবন্ধন ব্যবস্থা, বিল অব এন্ট্রিতে মূল্য সমন্বয়ের সমস্যা এবং দুর্বল তথ্যপ্রযুক্তি সংযোগের ফলে ঘুস ও অনানুষ্ঠানিক খরচের অভিযোগ বাড়ছে। চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ নোঙরে দীর্ঘ বিলম্বও রফতানিকারকদের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা বলে চিহ্নিত করেছে ইইউ। পাশাপাশি রেলের আইসিডিতে (ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো) বিলম্ব, বিনামূল্যে সংরক্ষণের সীমিত সুবিধা, বন্দর কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত ক্ষমতা, বেসরকারি অপারেটরের সীমিত ভূমিকা এবং অনানুষ্ঠানিক খরচ ইউরোপীয় আমদানিকারকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে বলে বাংলাদেশ সরকারকে অবহিত করেছে ইইউ।

চিঠিতে সরকারি ক্রয় বা গভর্নমেন্ট প্রোকিউরমেন্ট বিষয়ে ইইউভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে অভিযোগ জানিয়েছে ইইউ। বলা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে ইউরোপে প্রচলিত সিই মার্কিংয়ের পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এফডিএ সনদ চাওয়া হয়, যা অপ্রয়োজনীয় ও ব্যয়বহুল। পাশাপাশি দরপত্র প্রক্রিয়ায় অনানুষ্ঠানিক খরচ, টেন্ডারে স্থানীয় এজেন্ট বাধ্যতামূলক করা, জালিয়াতির ঝুঁকি এবং লেটার অব ক্রেডিট বা ঋণপত্র নিষ্পত্তিতে বিলম্ব—এসবই সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা ও ন্যায্য প্রতিযোগিতাকে ব্যাহত করছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছে ইইউ।

কৃষি, খাদ্য ও দুগ্ধজাত পণ্য বাংলাদেশে আমদানিতে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো নানা ধরনের জটিলতায় পড়ছে—চতুর্থ চ্যালেঞ্জে এ তথ্য জানিয়েছে ইইউ। এক্ষেত্রে দুধের গুঁড়ায় চর্বির পরিমাণসংক্রান্ত মানদণ্ডের অসামঞ্জস্য, গুঁড়া দুধে বৈষম্যমূলক আমদানি শুল্ক এবং খাদ্য আমদানির জন্য জটিল ও অসমন্বিত প্রযুক্তিগত মানদণ্ড এসব খাতকে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দিচ্ছে বলে মনে করছে ইইউ। তাছাড়া খাদ্যপণ্যের জন্য পরীক্ষার প্রতিবেদন স্বীকৃত না হওয়া এবং কিছু খাদ্যে বিকিরণ পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা আমদানি প্রক্রিয়াকে আরো ধীর করছে।

পঞ্চম চ্যালেঞ্জ হিসেবে ওষুধ শিল্পে ইউরোপীয় বিনিয়োগকারীরা নতুন পণ্য নিবন্ধনে দীর্ঘসূত্রতা ও জটিল প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হন বলে অভিযোগ করে ইইউ বলছে, কোম্পানিগুলো ওষুধের দ্বিতীয় ব্র্যান্ড নিবন্ধনের ক্ষেত্রেও বাধার সম্মুখীন হয়। উদ্ভাবনী (ওরিজিনেটর বায়োলজিক) ওষুধ আমদানির ক্ষেত্রে প্রশাসনিক অনুমোদন না দেয়া এবং আন্তর্জাতিক ফার্মাসিউটিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের আচরণবিধি অনুসরণ না করা ইউরোপীয় কোম্পানির আস্থা কমিয়েছে বলে জানিয়েছে ইইউ।

ষষ্ঠ চ্যালেঞ্জ হিসেবে এভিয়েশন খাতে এয়ারবাস ও বোয়িং ক্রয়সংক্রান্ত স্বচ্ছতা ও ন্যায্য মূল্যায়নের অভাবের অভিযোগ তুলেছে ইইউ। সপ্তম চ্যালেঞ্জ হিসেবে আমদানি পর্যায়ে কর ব্যবস্থায় অতিরিক্ত ন্যূনতম আয়কর, ফেরতযোগ্য নয় এমন অগ্রিম আয়কর (এআইটি), উচ্চ ভ্যাটের দাবি এবং মানসম্মত আমদানিতে উচ্চ কর আরোপের মতো নীতিগত বিষয় বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছে ইইউ।

অষ্টম চ্যালেঞ্জ হিসেবে মেধাস্বত্ব অধিকার ও জালিয়াতির বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মেধাস্বত্ব সুরক্ষার প্রয়োগ দুর্বল এবং নকল পণ্যের বিস্তার রফতানি বাজারে ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। বীজের মেধাস্বত্ব সুরক্ষায়ও কোনো কার্যকর কাঠামো নেই। একই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা ইউরোপীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য অনিশ্চয়তা তৈরি করছে।

বাংলাদেশের বাইরে যাওয়া রেমিট্যান্স ও মুনাফা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে নবম চ্যালেঞ্জে। বলা হয়েছে, শাখা অফিসের মুনাফা প্রত্যাবাসনে বাধা দেয়া হয়। লভ্যাংশ বা লাইসেন্স ফি রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ রয়েছে। এছাড়া বিদেশী সেবা প্রদানে উচ্চ কর আরোপসহ স্থানীয় ব্যাংকের সঙ্গে এলসি অর্থপ্রদানে বিরোধ, কালো তালিকাভুক্ত ব্যাংকের কারণে এলসি নিশ্চিতকরণ প্রত্যাখ্যানের বিষয়গুলোও উল্লেখ করেছে ইইউ। তারা বলছে, প্রশাসনিক জটিলতার কারণে বহুজাতিক কোম্পানির এলসি খুলতে দেরি হয়। তাছাড়া আন্তঃকোম্পানি ঋণে বিধিনিষেধ বিদেশী বিনিয়োগপ্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

কর ব্যবস্থা প্রসঙ্গে মূল্যায়নে স্বেচ্ছাচারিতা ও অস্বচ্ছতা রয়েছে বলে মনে করেন ইউরোপীয় ব্যবসায়ীরা। বিষয়টি দশম চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, এর ফলে বিনিয়োগকারীরা আর্থিক অনিশ্চয়তার মুখে পড়েন।

একাদশ চ্যালেঞ্জ হিসেবে দ্বৈত করের বিষয়টি উল্লেখ করেছে ইইউ। তারা জানিয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত দ্বৈত কর পরিহার চুক্তি (ডিটিএএ) সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সেবা ফিতে কর আরোপ, রয়্যালটিতে দ্বিগুণ কর এবং কিছু চুক্তিতে ‘প্রযুক্তি সেবার ফি’ ধারা না থাকা ইইউ কোম্পানিগুলোর জন্য সমস্যা সৃষ্টি করছে।

ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট ও নিবন্ধন প্রক্রিয়াকে দ্বাদশ চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে ইইউ বলছে, ইউরোপীয় নাগরিকদের জন্য প্রক্রিয়াগুলো ধীর ও জটিল। অস্বচ্ছ প্রশাসনিক পরিবেশ ও রাজনৈতিক প্রভাব, দীর্ঘ অনুমোদন প্রক্রিয়া এবং প্রতি বছর ভিসা নবায়নের বাধ্যবাধকতা বিনিয়োগ কার্যক্রমে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে।

ত্রয়োদশ চ্যালেঞ্জ হলো বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা নিয়ে। এক্ষেত্রে ইউরোপীয় বিনিয়োগকারীরা নিরপেক্ষ ও স্বাধীন বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তি কাঠামোর অভাবের কথা উল্লেখ করেছেন। ব্যবসায়িক বিরোধ নিষ্পত্তিতে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও দ্রুত সমাধানের সুযোগ না থাকায় অনেক ইউরোপীয় কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগে সতর্কতা অবলম্বন করছে বলে বাংলাদেশ সরকারকে চিঠিতে জানিয়েছে ইইউ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দুই বছর ধরে বাংলাদেশ ও ইইউর মধ্যে একটি এগ্রিমেন্ট অন কমপ্রিহেনসিভ পার্টনারশিপ অ্যান্ড কো-অপারেশন (পিসিএ) নিয়ে আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে দরকষাকষি প্রায় শেষের দিকে। চুক্তিটি মূলত বাংলাদেশ ও ইইউর মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের আইনি কাঠামো। এখানে কোনো সুনির্দিষ্ট বাজার প্রবেশাধিকার নিয়ে কথা নেই। বিভিন্ন খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা ও প্রতিশ্রুতি নিয়ে এ চুক্তির আওতায় কথা হচ্ছে। চলতি মাসে পিসিএ নেগোসিয়েশনের পরবর্তী ধাপটি সম্পন্ন হতে পারে, যা এখনো চূড়ান্ত নয়। এদিকে বাংলাদেশ ইইউর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে।

জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ইইউর পক্ষ থেকে ১৩টি পয়েন্টে নন-ট্যারিফ ব্যারিয়ার এবং রেগুলেটরি ও অন্যান্য বিষয় জানানো হয়েছে। এর মধ্যে সবগুলো নন-ট্যারিফ ব্যারিয়ার না, বরং বাণিজ্য প্রক্রিয়া-বিষয়ক। উদাহরণস্বরূপ চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ থেকে পণ্য খালাসে বিলম্ব—এটা প্রক্রিয়াগত বিষয়, নন-ট্যারিফ হিসেবে ডিফাইন করা যাচ্ছে না। এ ধরনের প্রক্রিয়াগত বিষয় বাদে বাকিগুলো নিয়ে গত সপ্তাহে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা শেষ করেছি। গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো নির্দেশনা আকারে লিখিতভাবে অংশীজনদের জানানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে কাল (আজ)-পরশুর মধ্যে।’

যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড় দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে অন্যান্য দেশ বা জোট বাণিজ্যে ছাড়ের প্রত্যাশা করছে—বিষয়টিকে কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘রাজস্ব সংবেদনশীলতা যেসব ক্ষেত্রে বেশি সেগুলোতে আমরা কোনো ছাড় দিইনি। অন্যান্য দেশ ছাড়ের কথা বলছে ধারণা থেকে। যুক্তরাষ্ট্র যা চেয়েছে আমরা তার সবকিছু দিইনি। নিজেদের স্বার্থ সুরক্ষা নিশ্চিত করেই দিয়েছি। আর অনেকগুলো বিষয় আমরা ধাপভিত্তিক দিয়েছি। যেমন সময়সীমা দেয়া হয়েছে ৫ বা ১০ বছরের। এ ধরনের ধাপভিত্তিক সুবিধা আমরা অন্যান্য দেশকেও দিতে পারব। রাজস্ব মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এমন কোনো সুবিধা কোনো দেশকে দেয়া হয়নি, হবেও না। যুক্তরাষ্ট্রকে এমন কোনো সুবিধা দেয়া হয়নি যেটা অন্যান্য দেশ রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।’

ইউরোপীয় কমিশনের তথ্য বলছে, ২০২৪ সাল শেষে বাংলাদেশ-ইইউ বাণিজ্যের আকার দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২১৮ কোটি ইউরোতে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ইইউতে রফতানি করেছে ১ হাজার ৯৮৮ কোটি ইউরোর। আর ইইউ থেকে বাংলাদেশ আমদানি করেছে ২৩০ কোটি ইউরোর। এ হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে ইইউ সদস্যদেশগুলোর মোট বাণিজ্য ঘাটতি ১ হাজার ৭৫৭ কোটি ইউরোর বেশি। ২০২৩ সাল শেষে বাংলাদেশে ইইউ সদস্যদেশগুলোর প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের (এফডিআই স্টক) স্থিতি ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ইউরো।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সুবর্ণ বড়ুয়া বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রকে বহুমুখী বাণিজ্য সুবিধা দেয়ার বিপরীতে ইইউর এমন আহ্বান অত্যন্ত স্বাভাবিক। ইইউ বাংলাদেশের বৃহত্তর রফতানি বাজার। বাংলাদেশ এখন এলডিসি উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে বৈশ্বিক বাজারে, বিশেষ করে ইইউতে নতুন বাণিজ্য শর্তাবলির মুখোমুখি হচ্ছে। যেমন এলডিসি উত্তরণ-পরবর্তী ইইউ বাংলাদেশকে এভ্রিথিং বাট আর্মস (ইবিএ) স্কিম সুবিধা আর দেবে না। এ প্রেক্ষাপটে ইইউর পক্ষ থেকে চাওয়ার চাপ বেশি থাকবেই এবং ধারণা করা যায় তার বিপরীতে বাংলাদেশকে বেশ ছাড় দিতে হবে। তথাপি একটি আধুনিক, ভারসাম্যপূর্ণ ও ভবিষ্যৎমুখী বাণিজ্য ও বিনিয়োগ চুক্তি আমরা চাই যা উভয় পক্ষের জন্যই লাভজনক হবে। যেখানে প্রদত্ত ছাড়ের বিপরীতে জিএসপি প্লাসের মতো সুবিধাগুলো যেন আদায় করে নেয়া যায় অথবা ইইউর সঙ্গে একটি নতুন ফ্রি বা প্রেফারেনশিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট যেন করা যায়। এজন্য আলোচনার টেবিলে বসা এবং যৌথভাবে একটি ন্যায্য কাঠামো নির্ধারণ করা হবে সবচেয়ে গঠনমূলক পদক্ষেপ।’বণিক বার্তা

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions