
ডেস্ক রির্পোট:- খাগড়াছড়ির বর্মাছড়ি এলাকায় ইউপিডিএফ (প্রসিত বিকাশ খীসা/মূল) গোষ্ঠীর নাশকতামূলক ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনার প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনী অভিযান পরিচালনা করছে বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সেনাবাহিনী জানায়, গত ২৮ সেপ্টেম্বর রামসু বাজার এলাকায় ইউপিডিএফ সশস্ত্র সদস্যদের গুলিতে ৩ জন পাহাড়ি যুবক নিহত হওয়ার পর থেকেই বর্মাছড়িসহ দুর্গম এলাকায় দীর্ঘমেয়াদি অভিযান শুরু হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, ওই ঘটনার পর ইউপিডিএফ সশস্ত্র ক্যাডাররা বিভিন্ন পাড়া থেকে বর্মাছরিতে একত্র হয়ে রামসু বাজার এলাকায় সেনা সদস্য ও সাধারণ মানুষের ওপর গুলি চালায়। এরপর ১৮ অক্টোবর থেকে বর্মাছড়িতে অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী এবং সেখানে একটি অস্থায়ী পেট্রোল বেস স্থাপন করে।
সেনাবাহিনী জানায়, অস্থায়ী পেট্রোল বেসটি বন বিভাগের সংরক্ষিত জমির ওপর স্থাপিত হয়েছে, যা বর্মাছড়ি আর্য কল্যাণ বিহার থেকে প্রায় ৫০০ মিটার পশ্চিমে অবস্থিত। তবে ইউপিডিএফ ওই স্থানটিকে বিহারের জমি দাবি করে স্থানীয় নারী, পুরুষ ও শিশুদের জোরপূর্বক সমাবেশ ঘটিয়ে আন্দোলন শুরু করে এবং অনলাইন ও অফলাইনে প্রচারণা চালায়। ২৪ অক্টোবর তারা প্রায় এক হাজার মানুষকে জড়ো করে সেনা সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে, যদিও তাদের দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি।
সেনাবাহিনীর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইউপিডিএফ নেতৃত্ব দীর্ঘদিন ধরে বর্মাছড়ি এলাকাকে অস্ত্র চোরাচালান ও নাশকতার ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে। সংগঠনের অর্থ সম্পাদক অর্কিড চাকমা এবং শীর্ষ নেতা প্রসিত বিকাশ খীসা সেনা অভিযানকে বিতর্কিত করার উদ্দেশ্যে ২৭–৩০ অক্টোবরের মধ্যে আর্য কল্যাণ বিহারে বড় পরিসরে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছেন। এ অনুষ্ঠানে ১০–১৫ হাজার মানুষকে জোর পূর্বক অংশগ্রহণে বাধ্য করা হতে পারে বলে গোয়েন্দা তথ্যের বরাতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ইউপিডিএফ দেশি-বিদেশি অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের মাধ্যমে সেনাবাহিনী ও বাঙালিদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক প্রচারণা চালাচ্ছে। তাদের লক্ষ্য পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করা ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উস্কে দেওয়া। সেনাবাহিনীর দাবি, সংগঠনটি ‘মৃতদেহের রাজনীতি’ ও ‘ঘৃণার রাজনীতি’কে কাজে লাগিয়ে পরিস্থিতি আন্তর্জাতিকীকরণের চেষ্টা করছে।
২৭ অক্টোবর জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা, সেনাবাহিনীর মাঠ পর্যায়ের কমান্ডাররা এবং গণমাধ্যমের উপস্থিতিতে স্থানীয়দের কাছে জমির মালিকানার প্রমাণ চাইলে কেউ তা উপস্থাপন করতে পারেননি বলে জানানো হয়। সেনাবাহিনী জানায়, সংশ্লিষ্ট জমিটি বন বিভাগের সংরক্ষিত জমি—এ সংক্রান্ত দলিলও প্রকাশ করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে সেনাবাহিনী আরও উল্লেখ করে, ধর্মীয় অনুভূতি ও সামাজিক আবেগকে পুঁজি করে পার্বত্য অঞ্চল অশান্ত করার এটি নতুন কোনো কৌশল নয়। তারা সকল ধর্ম ও গোষ্ঠীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে অভিযান পরিচালনা করছে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় সম্ভাব্য সংঘাত এড়াতে বর্মাছড়িতে স্থাপিত অস্থায়ী পেট্রোল বেস অন্যত্র স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সেনাবাহিনী জানায়। তবে পার্বত্য অঞ্চলে চাঁদাবাজি ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড দমন ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
বিজ্ঞপ্তির শেষাংশে সেনাবাহিনী জানায়, তারা ইউপিডিএফসহ সকল রাষ্ট্রবিরোধী সংগঠনের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।প্রেস বিজ্ঞপ্তি