
ডেস্ক রির্পোট:- রাজনীতির মাঠে কালো টাকার প্রভাব ঠেকাতে এবার কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীদের সম্পদ ও আয়ের উৎস যাচাইয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে সংস্থাটি।
দুদক সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া প্রার্থীদের হলফনামা, আয়কর রিটার্ন ও সম্পদ বিবরণী পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করা হবে। পাশাপাশি প্রার্থীদের মানি লন্ডারিং কার্যক্রম ও সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেন পর্যবেক্ষণে থাকবে কমিশনের গোয়েন্দা ইউনিট। অতীতের তুলনায় এবার নির্বাচনি প্রার্থীদের আর্থিক তথ্য যাচাই আরও পদ্ধতিগত ও নির্ভুলভাবে সম্পন্ন করা হবে। এ লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে কমিশন।
দুদকের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, দুদকের গোয়েন্দা সেল ইতোমধ্যে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে। যারা ইতোমধ্যে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন বা নিজের পক্ষে প্রচারণা শুরু করেছেন, তাদের আর্থিক লেনদেন ও সম্পদ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। বিশেষ করে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর, তাদের হলফনামা ও পূর্ববর্তী আয়কর রিটার্ন মিলিয়ে দেখা হবে। কোথাও অমিল বা গোপন সম্পদের তথ্য পাওয়া গেলে সেটা আমলে নেওয়া হবে।
দুদকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশের নাগরিক যেকোনও ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। তবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে কেউ যদি সম্পদ লুকাতে বা গোপন রাখতে চান, এবার সেটা আর সহজ হবে না। হলফনামায় উল্লেখিত তথ্য ও বাস্তব সম্পদের মধ্যে অমিল ধরা পড়লেই সেটি অনুসন্ধানের আওতায় আনা হবে, এমন নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে দুদকের।’
তিনি আরও বলেন, ‘এবার প্রার্থীদের আয়, সম্পদ ও লেনদেন সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে অসঙ্গতি শনাক্ত করা হবে। নির্বাচন কমিশন (ইসি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), ভূমি রেকর্ড ও নিবন্ধন অধিদফতর, ব্যাংক, রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানি এবং বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) ডেটা একত্র করে প্রার্থীদের আর্থিক অবস্থার পূর্ণাঙ্গ চিত্র তৈরি করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘ফৌজদারি আইন অনুযায়ী মিথ্যা হলফনামা জমা দেওয়া একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। একইভাবে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ধারা ২৬ ও ২৭ অনুযায়ী, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন বা তথ্য গোপন করাও দুর্নীতির অন্তর্ভুক্ত। তাই দুদক চাইলে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নিজস্ব উদ্যোগে অনুসন্ধান শুরু করতে পারে।’
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ২০১৮ সালেও দুদক প্রার্থীদের হলফনামা যাচাই করেছিল। সে সময় প্রায় অর্ধশত প্রার্থীর সম্পদ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কয়েকজনের বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধানও শুরু করা হয়েছিল। যদিও পরে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেই অনুসন্ধানের কাজ আর আলোর মুখ দেখেনি। তবে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা থাকলে পরিস্থিতি, অনুকূলে হলে যেকোনও সময় প্রয়োজন অনুযায়ী অনুসন্ধান চালানো সহজ হয়। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দুদকের কাছে থাকা তথ্য হালনাগাদ করে দ্রুত সংশ্লিষ্ট অনেক সাবেক মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান, মামলা ও তদন্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।
দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, ‘সব নির্বাচনেই সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও তথ্যের ভিত্তিতে দুদক প্রার্থীদের তথ্য যাচাই-বাছাই করে। এবারও এমন কিছু পাওয়া গেলে প্রার্থীদের হলফনামা খতিয়ে দেখা হবে।’ তবে দুদক নিজ উদ্যোগে সেটা করবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।
গত ১৪ অক্টোবর রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশনের (র্যাক) এক কর্মশালায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রার্থীদের তথ্য বা অভিযোগ পেলে সেটা যাচাই করে দেখা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘দুদক চায় জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো প্রার্থী হিসেবে সৎ লোককে মনোনয়ন দিক। দুর্নীতিগ্রস্ত কোনও ব্যক্তিকে নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া না হলেই কেবল দেশের দুর্নীতি দমনে পরিবর্তন আসবে।’
অভিযোগ না হলে কী দুদক প্রার্থীদের হলফনামা খতিয়ে দেখতে পারবে না? এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘নির্বাচনি হলফনামার বিষয়ে মৌলিক এখতিয়ার ও দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। ইসি প্রযোজ্য ক্ষেত্রে দুদক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ অন্য সংস্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সহায়তা চাইতে পারে এবং পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারে। সেক্ষেত্রে দুদক তার ম্যান্ডেট অনুযায়ী বৈধ আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যতা যাচাই এবং প্রমাণ সাপেক্ষে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারে।’ট্রিবিউন