নতুন বাংলাদেশের সূচনা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৫
  • ১০ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের সূচনা হলো বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বলেছেন, আজকে যে সনদ স্বাক্ষর করলাম সেটা দিয়ে বাংলাদেশ পরিবর্তন হবে। এই পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের জন্য। ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থান করেছে বলেই আজ আমরা সুযোগ পেলাম। পুরনো কথা ফেলে দিয়ে নতুন কথা নিয়ে আসলাম। এই পরিবর্তন এখন আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমরা সে পথে অগ্রসর হবো। আমাদের জন্য আজ নবজন্ম। এই স্বাক্ষরের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করলাম। তা থেকে যেন বিচ্যুত না হই সেজন্য আল্লাহ্ পাকের মেহেরবানি চাই।

শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজিত জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। জুলাই সনদ স্বাক্ষর প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, এটা একটা ঐতিহাসিক ক্ষণ। গোটা জাতি একত্র হয়ে, সব রাজনৈতিক দলের নেতা একসঙ্গে হয়ে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছেন। এ রকম ঘটনা ঘটবে এটা কেউ আমরা কল্পনাও করিনি। যখন ঐকমত্য কমিশন গঠন করলাম তখন মনে মনে ভাবলাম- হয়তো দুয়েকটা বিষয়ে একমত হতে পারবো। কারণ রাজনৈতিক দলের নেতাদের কথা শুনলে মনে হয়, কেউ কারও কথা শুনবে না। ভয়ে ভয়ে এটা শুরু হয়েছিল। প্রফেসর আলী রীয়াজকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। অবাক কাণ্ড, সারা দেশ দেখলো, সমস্ত রাজনৈতিক দল বসলো, আলাপ-আলোচনা করলো। এতো সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে আলোচনা হলো। এটা না দেখলে বিশ্বাস হতো না। তিনি বলেন, আপনারা শুধু সীমাবদ্ধ কামরাতে বসেই আলাপ করেননি। আপনারা পুরো জাতিকে এই আলোচনায় শরিক করেছেন। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল বেশিদূর অগ্রসর হবে না। কয়েকটি বিষয়ে একমত হয়ে সমাপ্ত হবে। কিন্তু ক্রমে ক্রমে যত জটিল বিষয় হোক না কেন ঐকমত্যে এসেছেন। আজ আমরা দীর্ঘ তালিকা নিয়ে এই সনদ প্রণয়ন করতে পারছি। এ সময় আমরা রাজনৈতিক দলের সদস্যদের জন্য এবং ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের অভিবাদন জানান তিনি।

প্রফেসর ইউনূস বলেন, আজকে এই দিনটি মহান দিন। এই দিনটির কথা চিন্তা করলে গা শিউরে ওঠে। এটা শুধু জাতির জন্য নয়, গোটা পৃথিবীর জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। বহু জায়গায় এটা পাঠ্যপুস্তকে থাকবে। যে উদাহরণ আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা সৃষ্টি করেছেন, তা শুধু আমাদের দেশে নয় গোটা পৃথিবীর জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।
গণ-অভ্যুত্থানের নায়কদের স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যারা প্রাণ দিয়েছে, যারা আহত হয়েছে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। তাদের কাছে গোটা জাতি কৃতজ্ঞ থাকবে।
যে তরুণরা অসম্ভবকে সম্ভব করেছে- এই তরুণরাই আবার বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়বে, তারাই নেতৃত্ব দেবে। তারাই পথ দেখাবে। এই দেশ তরুণদের দেশ।

তিনি বলেন, ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে অর্ধেক মানুষ হলো ২৭ বছরের নিচে। এটিই আমাদের সম্পদ। সারা দুনিয়া অবাক বিস্ময়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে কখন আমরা সাহায্য করবো এই তরুণদের পাঠিয়ে। সারা দুনিয়ায় তরুণদের অভাব। কোনো কোনো দেশে তরুণ নেই বললেই চলে। আমাদের কাছে দরখাস্ত আসছে, আমাদের কাছে এতজন পাঠান, আমাদের কাছে যত খুশি পাঠান। এটা তো ২০২৫ সালের কথা। ২০২৬ সালে, ২০২৭ সালে কী বলবে। হাত জোর করে বলবে। কারণ আমাদের তরুণ ছাড়া পৃথিবীতে এত তরুণ দিতে পারে, এত সৃজনশীল মানুষ দিতে পারে আর দেশ খুঁজে পাওয়া যাবে না। সেই দেশকে গঠন করার দায়িত্ব পরবর্তী সরকারকে নিতে হবে। সেটার জন্য প্রস্তুতিই হচ্ছে জুলাই সনদ। এই সনদের মাধ্যমে আমরা বর্বরতা থেকে সভ্যতায় এলাম।
প্রফেসর ইউনূস বলেন, আমরা এক বর্বর জগতে ছিলাম। যেখানে আইন-কানুন ছিল না। মানুষ যা ইচ্ছা তা করতে পারতো। এমন সভ্যতা আমরা গড়ে তুলবো- মানুষ ঈশ্বর চোখে আমাদের দেখবে। আমাদের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত চমৎকার। শুধু আমাদের সংস্থাকে গঠন করতে পারলেই হলো।

তিনি বলেন, আজকের শিক্ষা হলো- আমরা যদি অন্যান্য কাজেও একমত হই তাহলে আমাদের দেশ অন্য দেশের মতো হবে। আমাদের দেশে সেই শক্তি আছে। সেই শক্তিকে আমরা ব্যবহার করতে পারি। তিনি বলেন, আমরা যদি গভীর সমুদ্রবন্দর করে দেই তাহলে সারা দুনিয়ার জাহাজ আমাদের এখানে ভিড়তে হবে। আমার দেশের পণ্য সিঙ্গাপুরে খালাস করে দিয়ে যেতে হবে না। আমার দুয়ার পর্যন্ত আসতে হবে। অন্য দেশের পণ্য এখান থেকে নিয়ে যাবে। এটা একটি বিরাট সুযোগ। পুরো এলাকা উন্নত করলে ওই এলাকা সিঙ্গাপুর হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, আমরা যা করলাম তা তরুণদের জানিয়ে দেয়ার জন্য সেটা পাঠ্যপুস্তকে থাকবে। কী কী বিষয়ে ঐকমত্যে এসেছি। ইস্যুভিত্তিক ভিডিও তৈরি করে ছাত্রদের হাতে দিয়ে দেয়া হবে। তারা যেন দেখে তাদের নেতারা কিভাবে তাদের বিষয়গুলো বিবেচনা করছেন। তারা যেন অনুপ্রাণিত হয়। তিনি বলেন, আজকে যে সনদ স্বাক্ষর করলাম, সেটা বহু দেশ শিখতে আসতে হবে এটা গ্যারান্টি দিয়ে বলে রাখলাম। তিনি বলেন, আমরা ঐক্যের সুর দিয়ে নির্বাচনের দিকে যাবো। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। এবং এই ঐক্য যেন বজায় থাকে। আজকে আমরা যে সনদ করলাম, রাজনৈতিক নেতারাও একসঙ্গে বসে নির্বাচনের বিষয়েও সনদ করেন- কিভাবে সুন্দর নির্বাচন করবেন। যেমন তেমন করে নির্বাচন করলে তো আবার পুরনো জায়গায় ফিরে যাবো। সবাই মিলে এমনভাবে নির্বাচন করবো দুনিয়ার কেউ এসে বলতে পারবে না এখানে কু হয়েছে এখানে গোলমাল হয়েছে। বাইরের কেউ যেন কিছু বলতে না পারে।মানবজমিন

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions