শিরোনাম
খাগড়াছড়ি থমথমে,এলাকাজুড়ে আগুনের ক্ষত,তিনজনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর ভারতের মদদে পাহাড়ে ইউপিডিএফের তাণ্ডব ইসলামী ব্যাংকের ৪৯৭১ কর্মী ওএসডি, পরে চাকরিচ্যুত ২০০ গাজায় যুদ্ধ বন্ধে সম্মত নেতানিয়াহু ট্রাম্পের ‘হামাসবিহীন গাজা’ প্রস্তাবে যুদ্ধ বন্ধে সম্মত ইসরাইল ৫ আগস্টই মুছে ফেলা হয় শেখ হাসিনার ১ হাজার কল রেকর্ড জুলাই অভ্যুত্থানে ৩ লাখ গুলি ছোড়ে পুলিশ, ঢাকায় ৯৫ হাজার রাউন্ড মাদাগাস্কারে জেন জি বিক্ষোভের মুখে সরকার ভেঙে দিলেন প্রেসিডেন্ট থমথমে খাগড়াছড়ি চলছে ১৪৪ ধারা,সতর্ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট গাজায় জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস সবকিছুই,বাদ যাচ্ছে না হাসপাতাল আশ্রয় কেন্দ্র

আজ বিশ্ব নদী দিবস,নদীর আপন কেউ নেই

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ২৫৪ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- আজ বিশ্ব নদী দিবস। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রোববার নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালন করা হয়। দিবসটি পালনে বাংলাদেশেও সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এবারের প্রতিপাদ্য ‘আমাদের নদী, আমাদের অস্তিত্ব’। অথচ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেশের অধিকাংশ নদনদী দখল ও দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।

দেখা গেছে, আইন ও আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে নদীর ধারে গড়ে উঠেছে অসংখ্য শিল্পকারখানা। এসব শিল্পকারখানা ও গৃহস্থালি বর্জ্য সরাসরি নদীতে পড়ছে। অপরিকল্পিত বাঁধ, দখল আর দূষণে প্রতিদিন বিলীনের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে নদীগুলোকে। যখন যেভাবে প্রয়োজন তখন সেভাবে নদীকে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রভাবশালীরা নদী ভরাট করে দখল করার উৎসবে মেতে উঠেছে। উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েও নদীর জায়গা দখলমুক্ত রাখা যাচ্ছে না। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও একই চিত্র।

অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সদরঘাট এলাকায় বুড়িগঙ্গার পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ এখন মাত্র শূন্য দশমিক ২৪ মিলিগ্রাম। অথচ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-২০০৭ অনুযায়ী, মৎস্য ও জলজ প্রাণীর টিকে থাকার জন্য প্রতি লিটার পানিতে কমপক্ষে ৫ মিলিগ্রাম অক্সিজেন থাকা আবশ্যক। ফলে মাছ তো দূরের কথা, পোকামাকড়সহ কোনো প্রাণীই এ বিষাক্ত পানিতে বাঁচতে পারছে না। ক্রোমিয়াম, আয়রন ও জিংকের মতো বিষাক্ত ভারী ধাতুতে ভরপুর পানির এই নদী এখন বিশ্বে সবচেয়ে দূষিত দশ নদীর একটি। একই পরিণতি শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, বালু ও ধলেশ্বরী নদীর। এই দূষণের কারণে নদীর পানি তার স্বাভাবিক রং হারিয়ে ফেলেছে।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা যায়, ঢাকার চারপাশের প্রধান চারটি নদী বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদীর ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে সাত হাজার শিল্প প্রতিষ্ঠান। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্যে নিষ্কাশনের জন্য নিজস্ব ট্রিটমেন্ট প্লান্ট থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে তা নেই। এসব প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন নদীতে ফেলছে গড়ে ৮০ হাজার কিউবিক মিটার তরল বর্জ্য। বুড়িগঙ্গার ২৫৮টি, তুরাগের ২৬৯টি, বালুর ১০৪টি এবং টঙ্গী খালের ৬২টি পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিন সরাসরি পয়ঃবর্জ্য ফেলা হচ্ছে। শুধু ঢাকাতেই প্রতিদিন উৎপন্ন ৪৫ হাজার টন বর্জ্যের ৮০ শতাংশ শেষমেশ গিয়ে মিশছে নদীতে। প্রতিদিন ১২ হাজার কিউবিক মিটার পয়ঃবর্জ্য বুড়িগঙ্গায় মিশ্রিত হয়। দৈনিক গড়ে পাঁচ হাজার যান্ত্রিক নৌযান চলাচল করে বুড়িগঙ্গা দিয়ে। যাদের সব ধরনের বর্জ্যর শেষ ঠিকানা হলো বুড়িগঙ্গা। জাহাজ রিপেয়ার ইন্ডাস্ট্রিগুলোর বর্জ্য ডাম্প করা হয় বুড়িগঙ্গায়।

বুড়িগঙ্গায় এখন কোনো মাছের আবাস নেই বললেই চলে। বুড়িগঙ্গা আজ একেবারেই প্রাণহীন বলে একে নদী না বলে ‘সেপটিক ট্যাংক’ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। অথচ নদী দূষণ রোধ না করেই এর তীরে বনায়ন, সৌন্দর্যবর্ধন, পার্ক, সীমানা পিলার নির্মাণে লুটপাট করা হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা।

কলকারখানার কেমিক্যাল ও বর্জ্যে নদীর পানি সরাসরি দূষিত হলেও পরিবেশ অধিদপ্তর নীরব। বুড়িগঙ্গা বাঁচাতে অভিযান থেকে শুরু করে নানা প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও বদলায়নি এর চেহারা। নদী রক্ষায় সীমানা পিলার নির্মাণ হলেও এর ভেতরেই কেউ কারখানা, কেউ বসতঘর, আবার মসজিদ বানিয়েও চালাচ্ছেন দখলদারিত্ব।

২০১৯ সালে হাইকোর্ট নদীকে জুরিসটিক পারসন বা লিগ্যাল পারসন অথবা জীবন্ত সত্তা হিসেবে ঘোষণা দিয়ে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দেন। পুরো কর্মকাণ্ড সমন্বয়ে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে নদীর ‘আইনগত অভিভাবক’ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন কার্যত অকার্যকর প্রতিষ্ঠান হয়ে পড়েছে। ২০১৮-১৯ সালে ৬৪ জেলায় তালিকাভুক্ত ৫৭ হাজার ৩৯০ দখলদারের মধ্যে মাত্র ১৮ হাজার ৫৭৯ জন বা ৩২ শতাংশ উচ্ছেদ করা হয়েছিল। এরপর থমকে যায় কার্যক্রম, আবার অনেক জমি দখল হয়ে গেছে। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার নদী দখলদারদের উচ্ছেদ ও দূষণের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।

বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নদী দূষণের কারণে পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও অর্থনীতিতে প্রতি বছর ২৮৩ কোটি ডলার ক্ষতি হচ্ছে। কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়া হলে আগামী পাঁচ বছরে এ ক্ষতি দ্বিগুণ কিংবা তিনগুণ হতে পারে।

নদী রক্ষায় সরকারের প্রতিশ্রুতি, বিশেষ করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সাবেক নদী রক্ষা কমিশন চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেছেন, নদী রক্ষা না করলে কোনো উন্নয়নই টেকসই হবে না। দেশে এমন কোনো নদী নেই, যেখানে দখলদার নেই। আবার দখলদাররা খুবই শক্তিশালী। সেই দখলদারদের উচ্ছেদ করতে হলে রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন। একই সঙ্গে নদী দূষণ সম্পর্কে সরকারের পাশাপাশি জনগণকে সচেতন হতে হবে। নতুন প্রজন্মকে নদী সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।

পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, নদী বাঁচাতে সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। আমরা তুরাগ নদী দূষণমুক্ত করার কাজ শুরু করেছি।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, নদী রক্ষায় জাতীয় ঐক্য নেই। আন্তর্জাতিক আলোচনায় আমাদের দুর্বলতা দেখা যায়। জাতিসংঘের ১৯৯৬ সালের আন্তর্জাতিক পানি কনভেনশনে স্বাক্ষর করা। নদী রক্ষায় অবিলম্বে জাতিসংঘের পানি আইনে অনুস্বাক্ষর, ডেলটা প্ল্যানের পর্যালোচনা এবং জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান তিনি।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions