শিরোনাম
পাহাড়ের মাঠে তারকা ফুটবলার তৈরি করছেন সুইহলামং মারমা মামলার আগে যেতে হবে লিগ্যাল এইডে,আজ থেকে রাঙ্গামাটিসহ বেশ কিছু জেলায় একযোগে এ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে শিগগিরই গ্রিন সিগন্যাল পাচ্ছেন বিএনপি’র প্রার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুকধারীর হামলায় ৩ পুলিশ সদস্য নিহত ১ কাপ কফির দাম ৮৩ হাজার টাকা! বিশ্ব বাঁশ দিবস আজ,বাঁশ এখন বাণিজ্যিক চাষের উদ্ভিদ দেশে আট মাসে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১ হাজার ২০২ ১১ লাখ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে জামানত থাকা সম্পত্তির বড় অংশই ভুয়া রাঙ্গামাটির সাজেকে জীপ খাদে পরে নিহত-১ আহত ১২ রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে দুদকের অভিযান,টেন্ডারবাজি-নিয়োগবাণিজ্যসহ নানা অভিযোগে

পাহাড়ের মাঠে তারকা ফুটবলার তৈরি করছেন সুইহলামং মারমা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ২০ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- রাঙ্গামাটির কাউখালীর সুইহলামং মারমা। একজন ফুটবলার ও প্রশিক্ষক। যার হাত ধরে জাতীয় দলে উঠে এসেছেন ঋতুপর্ণা চাকমা, রুপনা চাকমা, মনিকা চাকমারা। তিনিও এক সময় স্বপ্ন দেখতেন জাতীয় দলে খেলার। কঠোর পরিশ্রমের পরও সুযোগ পাননি। তবে মনোবল হারাননি। স্বপ্নের বদল ঘটিয়ে রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলায় গড়ে তোলেন সুইহলামং ফুটবল একাডেমি। তাঁর একাডেমি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে জাতীয় দলে খেলছেন ঋতুপর্ণা, রূপনা ও মনিকারা। স্বপ্নবাজ এই ফুটবলার গড়ার কারিগরকে নিয়ে লিখেছেন সত্রং চাকমা।

সু ইহলামং ফুটবল একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে কেবল জাতীয় নারী ফুটবল দলেই খেলেছেন আট ফুটবলার। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন– ঋতুপর্ণা চাকমা, রুপনা চাকমা, মনিকা চাকমারা। এখানেই শেষ নয়; পাইপলাইনে আছেন আরও বেশ কয়েকজন। জাতীয় দল ছাড়াও বিভিন্ন বয়সভিত্তিক জাতীয় নারী ফুটবল দলেও খেলার ডাক পেয়েছেন এবং খেলছেন বেশ কয়েকজন। আনসার এবং সেনাবাহিনীতেও এই একাডেমির অনেক খেলোয়াড় সুযোগ পেয়েছেন। এছাড়াও বর্তমানে ৪৫ জন নারী প্রশিক্ষণার্থীর পাশাপাশি ছেলেরাও প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন সুইহলামং ফুটবল একাডেমিতে।

যেভাবে গড়ে ওঠে
সুইহলামং মারমা। ফুটবলার। স্বপ্ন দেখতেন জাতীয় দলের ফুটবলার হিসেবে মাঠ কাঁপানোর। চেষ্টাও করেছেন। অনেক কঠোর পরিশ্রম এবং চেষ্টার পরও তিনি জাতীয় ফুটবল দলে নিজের জায়গা করে নিতে পারেননি। জাতীয় দলে সুযোগ পাননি বলে মনোবল হারাননি। তবে স্বপ্নের বদল ঘটান। নিজে খেলতে না পারলেও ছেলেমেয়েদের প্রশিক্ষণ দিয়ে জাতীয় দলে খেলানোর স্বপ্ন দেখতে থাকেন। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের শুরুটা করেন ২০১৮ সালে। নিজের নামে কাউখালী উপজেলা সদরে গড়ে তোলেন সুইহলামং ফুটবল একাডেমি। ১৪ জন নিয়ে একাডেমির কার্যক্রম শুরু হলেও পরবর্তী সময়ে ৬০ জন প্রশিক্ষণার্থীতে গিয়ে ঠেকে। শুরুর দিকেরই প্রশিক্ষণার্থী ছিলেন জাতীয় দলের হয় মাঠ কাঁপানো ঋতুপর্ণা চাকমা, রুপনা চাকমা, মনিকা চাকমারা। জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া অনেকে আবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়ে থিতু হয়েছেন।

যেভাবে চলছে…
সম্প্রতি এই ফুটবল একাডেমি থেকে আরও ৮ জন খেলোয়াড় বিভিন্ন বয়সী জাতীয় নারী ফুটবল দলে সুযোগ পেয়েছেন। তিন পার্বত্য জেলার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে প্রতিভাবান নারী ফুটবলারদের নিয়ে শুধু ফুটবলে প্রশিক্ষণ নয়, লেখাপড়ার খচরসহ থাকা-খাওয়া সম্পূর্ণ বিনা খরচে চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ফুটবল একাডেমির আর্থিক দৈন্যদশায় থাকলেও মেয়েদের নিয়মিত ফুটবলে প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছেন সুইহলামং মারমা। তিনি বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ফুটবল দলের কোচ। সেখান থেকে মাসিক যে বেতন পান তা দিয়ে এবং সহধর্মিণীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকতার বেতন দিয়ে ফুটবল একাডেমি চালিয়ে যাচ্ছেন সুইহলামং মারমা। একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেওয়া খেলোয়াড়দের খাবারের চাল বরাদ্দ দিচ্ছে উপজেলা ও জেলা প্রশাসন।
সরেজমিন গিয়ে যা দেখা গেল
গত ১০ সেপ্টেম্বর সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কাউখালী উপজেলা সদরের বহুতল ভবনের একটি ফ্লোরে সুইহলামং ফুটবল একাডেমির বর্তমান অবস্থান। একাডেমির তিনটি কক্ষে প্রশিক্ষণ নেওয়া নারী ফুটবলাররা থাকেন এবং একটি কক্ষে তারা পড়াশোনা করেন। এই একাডেমিক ভবন থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরত্বে কাউখালী উপজেলা মাঠ। সেখানে প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দেন সুইহলামং মারমা। এখন কেবল মেয়েদের নয়; ছেলেদেরও প্রশিক্ষণ দেন তিনি।

জাতীয় দলের মালাচিং মারমা বলেন…
একাডেমিতে গিয়ে কথা হয় জাতীয় নারী ফুটবল দলের মালাচিং মারমার সঙ্গে। এই একাডেমিতে নিজের প্রশিক্ষণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালে সুইহলামং ফুটবল একাডেমিতে ভর্তি হই। তাঁর তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০২২ সালে জাতীয় নারী ফুটবল দলে সুযোগ পেয়েছি। ভবিষ্যতে জাতীয় নারী ফুটবল দলের একজন ভালো গোলকিপার হতে চাই।’
বান্দরবানের রুমা উপজেলা থেকে আসা মেয়ো মারমার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘আমার খুব ইচ্ছে ঋতুপর্ণা, রুপনাদের মতো একজন ভালো খেলোয়াড় হওয়ার। বান্দরবান তথা রুমাতে কোনো ভালো ফুটবল প্রশিক্ষণ একাডেমি নেই। আমার বড় ভাইয়ের বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারি কাউখালীতে ভালো একটি ফুটবল প্রশিক্ষণ একাডেমি রয়েছে। ২০২৪ সাল থেকে এখানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। ফুটবলের পাশাপাশি আনসারে সাইক্লিংয়ে সুযোগ পেয়েছি।’

খাবারের মান ও যত অর্জন
একাডেমিতে প্রশিক্ষণার্থীরা যে খাবার খান একজন খেলোয়াড়ের জন্য তা পরিপূর্ণ পুষ্টিসহায়ক নয়! প্রশিক্ষণার্থী মাচিং মারমা বলেন, ‘এ ফুটবল একাডেমিতে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বর্তমানে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের দ্বিতীয় শ্রেণির রেফারি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন অনেকে। আমিও এখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে জয়া চাকমার মতো একজন ফিফা রেফারি হতে চাই।’ মোহাম্মদ রাশেদ নামের আরেক প্রশিক্ষণার্থী বলেন, ‘তিন পার্বত্য জেলায় ফুটবল খেলোয়াড় গড়ে তুলতে অনেক অবদান রয়েছে এ একাডেমির। আমি নিজেও এ ফুটবল একাডেমির কোচ থেকে নিয়মিত ফুটবলে প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। এই একাডেমি প্রতিষ্ঠা পর থেকে ২০ জনের বেশি নারী ফুটবলার বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, আনসারসহ জাতীয় ফুটবল দলে সুযোগ পেয়েছেন। তবে প্রশিক্ষণের সময় একজন খেলোয়াড়ের যে রকম শক্তি ক্ষয় হয় সে পরিমাণ পুষ্টিকর খাবার আমরা পাই না। সে কারণে সরকারিভাবে আরও সহযোগিতা দেওয়া গেলে ভালো খেলোয়াড় গড়ে উঠবে এ একাডেমিতে।’
আগামীর স্বপ্ন
এ ফুটবল একাডেমির পরিচালক ও প্রশিক্ষক সুইহলামং মারমার কাছে তাঁর আগামীর স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে আমার স্বপ্ন ছিল জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে খেলার। দুর্ভাগ্যবশত সেই সুযোগ পাইনি। তাই জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড় তৈরির জন্য সুইহলামং ফুটবল একাডেমি গড়ে তুলি। এই একাডেমি থেকে জাতীয় দলে অনেকেই খেলছে। ২০০৫ সাল থেকে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ফুটবল দলের কোচের দায়িত্ব পালন করছি। কোচের বেতন ও আমার সহধর্মিণীর চাকরির বেতনের টাকা দিয়ে একাডেমি পরিচালনা করে আসছি। জানি না, কতদিন এভাবে পরিচালনা করতে পারব। যদিও বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং জেলা-উপজেলা প্রশাসন থেকে একাডেমির জন্য কিছু সহায়তা পাচ্ছি। তবে রাষ্ট্রীয় আরও সুযোগ-সুবিধা পেলে এই কার্যক্রম নিশ্চিন্তে এগিয়ে নিতে পারতাম। আসলে আমার একমাত্র নেশা ভালোমানের ফুটবলার গড়ে তোলা। সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছি। আগামীতেও এই ধারা অব্যাহত রাখতে চাই। একসময় কেবল পাহাড়ের নয়; সারাদেশ থেকে ছেলেমেয়েরা আসবে এখানে। প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করবে এটিই আমার চাওয়া! সমকাল

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions