ডেস্ক রির্পোট:- দুই সপ্তাহ আগে পদোন্নতি দিয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুর রহমান তরফদারকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে পদায়ন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কিন্তু গত ১৪ দিনেও কাঙ্ক্ষিত চেয়ারে বসতে পারেননি বিসিএস ১৫তম ব্যাচের এই কর্মকর্তা। যোগ দিতে গেলে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা তাঁকে পরে যোগ দিতে বলেন। দুই দিন পরে গেলেও উপদেষ্টার অনুমতি মেলেনি।
ওই মন্ত্রণালয়ে তাঁকে বাদ দিয়ে নতুন আরেকজন সচিব দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
এর আগে গত ৩ আগস্ট পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে সংযুক্ত অতিরিক্ত সচিব এস এম শাকিল আখতারকে পদোন্নতি দিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তিনি ই-মেইলে যোগদানপত্র দিলেও উপদেষ্টার আপত্তির কারণে সশরীরে সচিবের চেয়ারে বসতে পারেননি। পরে গত ২০ আগস্ট মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব হিসেবে নিয়োগ পান বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের।
পরদিনই দায়িত্ব বুঝে নেন তিনি।
অথচ সচিব পদে পদোন্নতি ও পদায়নের সারসংক্ষেপ অনুমোদন দেন সরকারপ্রধান। অর্থাৎ এই দুটির পদোন্নতি ও পদায়নের সারসংক্ষেপ অনুমোদন দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার পরও প্রশাসনে এমন দুটি ঘটনায় বড় ধরনের তোলপাড় চলছে।
এতে ‘প্রশাসনের চেইন অব কমান্ড’ ভেঙে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া। তিনি বলেন, ‘উপদেষ্টারা হয়তো সচিব পদে নিজের পছন্দের লোক নিতে চাচ্ছেন। এ কারণে তাঁকে হয়তো যোগদানের অনুমতি দেননি বা গ্রহণ করেননি। তবে এ ধরনের ঘটনা সরকার এবং প্রশাসনের ভাবমূর্তি নষ্ট করে। এটা প্রশাসনের সমন্বয়হীনতার বহিঃপ্রকাশ।
প্রধান উপদেষ্টার সম্মতি ছাড়া তো সচিব পদায়ন হতে পারে না। তার পরও কেন এমন হবে?’
জানা গেছে, গত ৩০ আগস্ট শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাওয়ায় তার দুই দিন আগে গত ২৮ আগস্ট নতুন সচিব হিসেবে নিয়োগ পান গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুর রহমান তরফদার। তিনি যোগ দিতে গেলে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন তাঁকে পরে যোগ দিতে বলেন। দু-এক দিন পরে গেলেও উপদেষ্টা তাঁকে যোগদানের
অনুমতি দেননি। যোগদান করতে না পারায় আব্দুর রহমান তরফদারকে আগের কর্মস্থল গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে নিজ দপ্তরে অফিস করতে দেখা গেছে। উল্লিখিত বিষয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কথা বলতে রাজি হননি। এই ইস্যুতে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘উনি (আব্দুর রহমান তরফদার) ভালো মানুষ। তাঁর কোনো সমস্যা নেই। এই মন্ত্রণালয়ের কাজের পরিধি অত্যন্ত কঠিন। গত এক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে আমার মনে হয়েছে, এই মন্ত্রণালয়ের সচিবকে আরো দক্ষ ও অভিজ্ঞ হতে হবে। আমি সেটাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। হয়তো শিগগিরই দক্ষ ও অভিজ্ঞ একজন সচিব আসবে।’
প্রসঙ্গত, বিএনপি-জামায়াত ঘরানার কর্মকর্তার ‘তকমা’ দিয়ে বিসিএস ১৫তম ব্যাচের সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তা বলে পরিচিত আব্দুর রহমানকে পদোন্নতি বঞ্চিত করে আওয়ামী সরকার। পটপরিবর্তনের পর বঞ্চিতদের সঙ্গে তিনিও পর পর তিনটি পদোন্নতি পান।
এর আগে গত বছরের ৬ নভেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সাঈদ মাহবুব বেলাল হায়দারকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় সরকার। এরপর গত ২০ নভেম্বর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদকে এই মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। এরপর গত ২৯ ডিসেম্বর আকমল হোসেন আজাদকে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য পদে বদলি করা হয়। ফলে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর থেকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের পদটি ফাঁকা ছিল। এই সময় মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তোফাজ্জেল হোসেন সচিবের রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে গত ৩ আগস্ট পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এস এম শাকিল আখতারকে সচিব পদে পদোন্নতির পর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, সচিবের নিয়োগ আটকে দেওয়ার নেপথ্যে ছিল মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ভিন্ন পছন্দের বিষয়। তিনি তিন দফায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আধা সরকারি পত্র পাঠিয়ে অতিরিক্ত সচিব তোফাজ্জেল হোসেনকে সচিব করার অনুরোধ জানান। যদিও তোফাজ্জেল পতিত আওয়ামী সরকারের আমলে ২০১০ সালের ৩১ নভেম্বর থেকে ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ পর্যন্ত তৎকালীন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব, ২০১৩ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১০ নভেম্বর ফের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া ২০১৪ সালের ১৯ অক্টোবর থেকে ২০১৬ সালের ২২ জুন পর্যন্ত পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ বিষয়ে জানতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতারকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠিয়ে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে সচিবের তালিকায় আব্দুর রহমান তরফদারের নাম পদায়নকৃত পদে থাকলেও শাকিল আখতারের নাম দেখা যায়নি। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবদের নামের তালিকায় তাঁর নামের পাশে ‘অতিরিক্ত সচিব সংযুক্ত-পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ বলে লেখা আছে।
‘দুজন সচিবকে পদায়ন করার পরও তাঁরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যোগ দিতে পারেননি। এটা কি প্রশাসনের চেইন অব কমান্ড ভঙ্গ বা সমন্বয়হীনতা কি না?’ জনপ্রশাসন সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে মন্ত্রিপরিষদসচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘সব সিস্টেমেই তো অভিযোজনের প্রয়োজন ও সুযোগ থাকে, তাই না?’কালের কণ্ঠ