শিরোনাম
রাঙ্গামাটির কাপ্তাই বাঁধের স্প্রিলওয়ের দরজা ফের খুলে দেওয়া হলো রাঙ্গামাটির ঝুলন্ত সেতু এক মাস ধরে তিন ফুট পানির নিচে রাঙ্গামাটিতে চমক বিলেতি ধনেপাতার চাষ রাঙ্গামাটিতে ওভারহেড পানির ট্যাঙ্ক, ভূমিধসের ঝুঁকিতে ৬ পরিবার রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে পানি বৃদ্ধি, মহালছড়ির দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দি বান্দরবানে প্রদীপ কান্তির উত্থান,এক দশকে দর্জি থেকে কোটিপতি বান্দরবানের ৭২ বেইলি সেতু ঝুঁকিতে, দুর্ঘটনার শঙ্কা বান্দরবানে জুমের ধান কাটা শুরু, পাহাড়ে লেগেছে সোনালি রং ডাকসু নির্বাচন: শীর্ষ তিন পদেই এগিয়ে শিবির অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত না নিলে সংশ্লিষ্ট দেশের ভিসা সুবিধা বাতিল করবে যুক্তরা‌জ্য

বান্দরবানে জুমের ধান কাটা শুরু, পাহাড়ে লেগেছে সোনালি রং

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ৪৬ দেখা হয়েছে

বান্দরবান:- পাহাড়ে লেগেছে সোনালি রং। জেলায় পাহাড়ে আদি পদ্ধতিতে চাষ করা জুমের পাকা ধানের গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে পাহাড়ি জনপদগুলোতে। চিম্বুক-নীলগিরি সড়কসহ অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর দুপাশে শোভা পাচ্ছে সবুজ পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে জুম চাষের পাকা ধানের সোনালি রং; যেন সোনালি রং লেগেছে পাহাড়গুলোতে।

মঙ্গলবার সরেজমিন জেলা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে রোয়াংছড়ি উপজেলা আলেক্ষ্যং ইউনিয়নের এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বটতলীপাড়ার বাসিন্দা জুমচাষি ভালু কুমার তঞ্চঙ্গ্যা পাহাড়ে লাগানো জুমের পাকা ধান কাটা শুরু করেছেন। পরিবারের ছোটবড় সবাই এবং কয়েকজন নারী শ্রমিক জুমে উৎপাদিত পাকা জুমের ধান কাটছেন।

জুমে ধানের পাশাপাশি সাথীফসল হিসেবে বেগুন, ঢেড়স, কাকন, বিন্নি ধান, মরিচ, চাল কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, ভুট্টা, যব, মারফা ধনিয়া মরিচসহ বিভিন্ন প্রজাতির সবজিও চাষ করেছে।

জুমচাষি ভালু কুমার তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, জুমে উৎপাদিত ফসল খুবই ভালো হয়েছে। সাধারণত জুমের ধান গাছের উচ্চতা মানুষের কোমর সমান হলেও জুমে ধান ভালো হওয়ায় জুমের ধান বুক সমান, গলা সমান হয়েছে। ধানের সাথী ফসল হিসেবে ৩০-৩৫ প্রকারের বিভিন্ন ধরনের ফল-সবজির চাষ করেছি।

এ বছর সময়মতো বৃষ্টি এবং রোদ পাওয়ায় জুমের ফসল ভালো হয়েছে। গত বছর সময়মতো রোদ-বৃষ্টি না পাওয়াতে জুমের ধান ভালো হয়নি, এ বছর খুবই ভালো হয়েছে। এবার জুম থেকে দেড়শ আড়ি (১ আড়ি সমান ১০ কেজি) ধান পাওয়ার আশা করছেন চাষি।

এদিকে রুমা, থানচি এবং রোয়াংছড়ি উপজেলা অভ্যন্তরীণ সড়কের কয়েকটি স্থানেও জুমে উৎপাদিত ফসল গড়ে তুলতে ব্যস্ত সময় কাটাতে দেখা গেছে জুমিয়াদের।

বাগানপাড়ায় আদি পদ্ধতিতে পাহাড়ের ঝোপঝাড় পুড়িয়ে পাহাড়ের ঢালুতে চাষ করা জুম খেতের পাকা ধান কাটছেন ১১ জনের একটা দল।

শ্রমিকের সঙ্গে জুড়িয়া পরিবারের ছোট-বড় নারী সবাই জুমের ফসল গড়ে তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

আশপাশের পাহাড়গুলোতে দূরদূরান্তে শোভা পাচ্ছে জুমের পাকা ধানের সোনালি রং। চাষিদের অনেকেই ধান কাটা শুরু হলেও আগে জুমে উৎপাদিত সাথী ফসল মিষ্টি কুমড়া, ভুট্টা, মারফা ও চিনাল সংগ্রহ করা করেছেন।

স্থানীয় চাষি মেনরথ ম্রো বলেন, জুমচাষিদের এখন দম ফেলার ফুরসত নেই, জুম চাষ ঘিরে বর্তমানে ফসল গড়ে তোলার বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে সবখানে। প্রতিটি পরিবার এক থেকে দেড় আড়ি জুম করে মূলত সাথী ফসল ফলানো এবং ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য। কারণ একই জায়গায় প্রতি বছর জুম চাষ করা যায় না। একটি পাহাড়ে জুম চাষ করার পর কমপক্ষে তিন-চার বছর অপেক্ষা করতে জায়গাটি দ্বিতীয়বার জুম চাষের জন্য উর্বর উপযোগী হয়ে উঠার জন্য।

জুমচাষি উৎসবলতা তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, তঞ্চঙ্গ্যাদের ভাষায় মঙ্গোয় ধান এবং মারমাদের ভাষায় মংটং ধান এ বছর পাহাড়ে জুম চাষে লাগানো হয়ছিল। গত বছর ১ আড়ি ধানের চাড়া (১ আড়ি সমান ১০ কেজি) লাগিয়ে ৭৫ আড়ি ধান উৎপাদিন হয়েছিল। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফসল ভালো হওয়ায় এ বছর ১৫০ আড়ি ধান আশা করছেন।

কৃষি বিভাগ ও জুমচাষিদের তথ্যমতে, প্রতি বছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে জুমের জায়গা নির্ধারণ করে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে জুম চাষের জন্য নির্ধারিত জায়গায় পাহাড়ের ঝাড়-জঙ্গল কেটে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে।

মার্চ-এপ্রিল মাসে প্রক্রিয়াধীন পাহাড়ে কাটা জঙ্গল আগুন দেওয়ার জন্য প্রথমে ফায়ারিং লাইন করে জঙ্গল পোড়ানো হয়। এপ্রিল মাসজুড়েই জুমের জায়গা পরিষ্কার করে ধান বপনের জন্য প্রস্তুত করে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করে; বৃষ্টি হলেই এপ্রিল-মে মাসে পাহাড়ে জুমের ধানসহ সাথী ফসল বপন করা হয়।

যারা বৈশাখ মাসের প্রথম বৃষ্টির পর জুমে ধানসহ সাথী ফসল বপন করতে পারেন তাদের ধান আগে পাকা শুরু করে, আর যারা দেরিতে বপন করে তাদের ধান দেরিতেই পাকে।

প্রতি বছর আগস্ট মাসের শেষে অথবা সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে জুমের ধান কাটা শুরু হয় এবং সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত জুমের ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানো প্রক্রিয়া চলে।

ধান শুকানো শেষে জুমঘর থেকে মূলঘরে ধান স্থানান্তর করার পর ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে চলে ঘরে ঘরে জুম ধানের নবান্ন উৎসব ।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় ২০২১ সালে জুমের চাষ হয়েছিল ৮ হাজার ৩৭৮ হেক্টর জমিতে, আর উৎপাদন হয়েছিল ১৩ হাজার ৪৬৭ দশমিক ২২ মেট্রিক টন চাল।

২০২২ সালে চাষ হয়েছিল ৮ হাজার ২৯২ হেক্টর জমিতে, আর উৎপাদন হয়েছিল ১১ হাজার ৪১৮ দশমিক ১২ মেট্রিক টন চাল।

২০২৩ সালে জুম চাষ হয়েছিল ৮ হাজার ৫৪০ হেক্টর জমিতে, আর উৎপাদন হয়েছিল ১০ হাজার ৪৮৯ দশমিক ৭১ মেট্রিক টন চাল।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে জুম চাষ হয়েছিল ৮২৬৭ হেক্টর এবং চাল উৎপাদন হয় ১২,৪৯৯ মেট্রিক টন।

২০২৫-২৬ অর্থবছরে জুম চাষ হয়েছিল ৭৩০০ হেক্টর জমি, আর চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৩৬৬ মেট্রিক টন।

২০২৫-২৬ অর্থবছরে জুম আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮৩৬০ হেক্টর জমিতে, আর চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৩৬৬ মেট্রিক টন।

বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ এমএম শাহ নেয়াজ জানান, জেলায় চলতি বছর প্রায় সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে আউসের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু জুমের আবাদই বেশি প্রায় সাড়ে সাত হাজার হেক্টর।

জুমে ইদানীং উপসি জাতের ধানও চাষ করা হচ্ছে, সেটাও কম নয়-প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে। এবার যখন কৃষকেরা এপ্রিল-মাসে জুমে বীজ বপন করে তখন সময়মতো বৃষ্টি পেয়েছে।

আবহাওয়া অনুকুল থাকায় পাহাড়ে জুমের আবাদ ভালো হওয়াতে ফলনও ভালো হয়েছে। সবাই জানে মাইক্রো ক্লাইমেটের ভ্যারিয়েশন থাকার কারণে কোনো এলাকায় আগে কোনো এলাকায় পরে জুমের ধান পাকে।

জুমে অনেক ধরনের স্থানীয় ধানের চাষ হয় যেমন- বড় ধান, মংটং, গেলন ধান, কালো বিন্নি, লাল বিন্নি, সাদা বিন্নি, নাটং প্রু ধানসহ বিভিন্ন ধরনের ধানের আবাদ। স্থানীয় জুমচাষিরা এ ধরনের বীজ সংরক্ষণ করে থাকেন আর গত বছরের তুলনায় এ বছর জুমে ভালো ফলন হওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।যুগান্তর

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions