শিরোনাম
রাঙ্গামাটিতে পাহাড় কাটার দায়ে জনসংহতি সমিতির নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যানের নামে মামলা পাহাড়ের জনপ্রিয় খাবার ‘বাঁশ কোড়ল’ রাঙ্গামাটির কাউখালীতে অগ্নিদুর্গত ক্যাথোয়াইচিংকে ঘর উপহার সেনাবাহিনীর কফি ও কাজুবাদাম প্রকল্পের ক‌য়েক কোটি টাকা পি‌ডির পকে‌টে খাগড়াছড়িতে শ্রীকৃষ্ণের ৫২৫১তম জন্মাষ্টমী উদযাপন খাগড়াছড়িতে বজ্রপাতে এক যুবকের মৃত্যু পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের পরামর্শক কমিটিতেও বৈষম্যর শিকার বাঙালিরা,৯ সদস্যের ৮ জনই অবাঙালি, একজন বাঙালি থাকলেও তিনি পাহাড়ের বাসিন্দা নন পাহাড়ি, বাঙালি, উপজাতি সবাই মিলে শান্তিতে বসবাস করবো : সেনাপ্রধান পার্বত্য চট্টগ্রাম বড়ুয়া সংগঠনের কাপ্তাই উপজেলা কমিটি গঠন জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে আইএসপিআর

পাহাড়ের জনপ্রিয় খাবার ‘বাঁশ কোড়ল’

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৫
  • ৮৮ দেখা হয়েছে

অর্ণব মল্লিক:- সাধারণত কাষ্ঠল চিরহরিৎ একটি উদ্ভিদ বাঁশ। যেটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঘরবাড়ি তৈরি, আসবাবপত্র তৈরি ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে পাহাড়ি অঞ্চলে কিন্তু এই বাঁশই খাওয়া হয়ে থাকে। এই বর্ষা মৌসুমে পার্বত্য অঞ্চলের বাজারগুলোতে পাহাড়ি সবজি বিক্রেতাদের বিভিন্ন সবজির মধ্যে প্রধান সবজি হিসেবে বিক্রি করছেন ‘বাঁশ কোড়ল’।

মূলত বাঁশ গাছের গোড়ার কচি অংশকে বাঁশ কোড়ল বলে পরিচিত সবার কাছে, যা মূলত পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীদের সবজির তালিকায় পছন্দের একটি সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। বাঁশ কোড়ল পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী নানা সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে একেক নামে পরিচিত, মারমাদের কাছে ‘মহ্ই’ আবার চাকমাদের কাছে ‘বাচ্ছুরি’, আর ত্রিপুরাদের কাছে ‘মেওয়া’ নামে ডাকা হয়।

পার্বত্য অঞ্চলে বিশেষ করে বর্ষাকালে এই সবজিটি বাজারে বেশি পরিমাণে দেখা যায়। রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে দেখা মিলছে এই বাঁশ কোড়লের। দুর দুরান্ত থেকে পাহাড়ি বিক্রেতারা এগুলো সংগ্রহ করে বাজারে নিয়ে আসছে। এই বাঁশকোড়ল কিন্তু পাহাড়িদের পাশাপাশি বাঙালীদের কাছেও একটি জনপ্রিয় খাবার। তাইতো এসব বাঁশ কোড়ল কিনতে ভিড় জমে যায় হাট বাজারে।

কাপ্তাইয়ের ডলুছড়ির পাহাড়ি সবজি বিক্রেতা সামাউ মারমা, লুরেচিং মারমার সাথে কথা বলে জানা যায়, সব বাঁশের কোড়ল খাওয়া যায় না। যেগুলো খাওয়া যায় তার মধ্যে মুলি বাঁশ, ডলু বাঁশ, মিতিংগ্যা বাঁশ, ফারুয়া বাঁশ, বাজ্জে বাঁশ, ও কালিছুরি জাতের বাঁশের কোড়ল খেতে বেশ সুস্বাদু। তারা এগুলো সংগ্রহ করে এনে কেজি প্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রয় করছেন বলে জানান।

এদিকে পাহাড়ি জনগোষ্ঠি সম্প্রদায়ের অন্যতম জনপ্রিয় সুস্বাদু খাবার ‘বাঁশ কোড়ল’। পাহাড়ের গহিনে প্রায় সব স্থানেই মেলে এ সবজি। বর্তমানে পাহাড়ি জনগোষ্ঠিদের পাশাপাশি অনেক বাঙ্গালিদেরও জনপ্রিয় একটি খাবারে পরিণত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে জেলার পাহাড়ি এলাকার গহিনে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়া বাঁশ ও ব্যক্তিগত বাগানে বাঁশ জন্ম নেয়। এসব বাঁশ পরিণত হওয়ার আগেই স্থানীয় পাহাড়িরা বাঁশ গাছের গোড়ার কচি অংশ সংগ্রহ করে তা প্রতিদিন স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে আসে।

জানা গেছে, বছরের মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এ সবজির ভরা মৌসুম থাকে। মুলি বাঁশ, ডলু বাঁশ, মিতিঙ্গ্যা বাঁশ, ফারুয়া বাঁশ, বাজ্জে বাঁশ, কালিছুরি বাঁশসহ বেশ কয়েক প্রজাতির বাঁশ কোড়ল পাওয়া যায় স্থানীয় বাজারগুলোতে। প্রত্যন্ত এলাকার দরিদ্র কিছু মানুষ এই বাঁশ করুল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বর্ষার শুরুতে বৃষ্টির পানিতে মাটি নরম হলে এটি বাড়তে শুরু করে। মাটি হতে ৪-৫ ইঞ্চি গজিয়ে উঠলে এটি খাওয়ার উপযোগী হয়। জাতের ভিন্নতার সাথে সাথে বাঁশ কোড়লের স্বাদেও ভিন্নতা আছে বলে জানা যায়।

এদিকে আরো কয়েকজন পাহাড়ি বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, মুলি বাঁশ কোড়ল সবচেয়ে সুস্বাদু হওয়ায় সবার কাছে এটি জনপ্রিয়তা বেশি। তবে দামের ক্ষেত্রে সবগুলো একই রাখা হয়। বর্ষা মৌসুমে প্রতিদিন সকাল বিকেল উপজেলার বিভিন্ন স্থানীয় হাটবাজারে বাঁশ কোড়ল নিয়ে যান স্থানীয় পাহাড়ী বিক্রেতারা।

কিভাবে এগুলো সংগ্রহ করেন জানতে চাইলে কয়েকজন বিক্রেতা বলেন, প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে বাঁশ কোড়ল আহরণ করে বিকালে বাজারে বিক্রি করতে আসেন কখনো চারশ, কখনো পাঁচ-ছয়শ টাকার বাঁশ কোড়ল বিক্রি করেন সেই টাকা দিয়ে পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে নিয়ে যান। প্রতিবছর মে মাস থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বাঁশ কোড়ল বিক্রির আয়ের টাকায় পরিবার চলে বলে জানান তারা। স্থানীয় উপায়ে রান্না করা বাঁশ কোড়ল খেতে যেমন সুস্বাদু তেমন শরীরের জন্যও উপকারী।

বাঁশ কোড়ল কিনতে আসা ক্রেতা সুমনা তঞ্চঙ্গ্যা, স্বপ্না দাশ সহ কয়েকজন বলেন, এই খাবারটি বেশ সুস্বাদু। বিশেষ করে বাঁশ কোড়ল বিভিন্ন পদ্ধতিতে রান্না করা যায়। তার মধ্যে ডাল দিয়ে রান্না, মাংস দিয়ে রান্না কিংবা ভাজি করে খাওয়ার মজাই আলাদা। তারা অনেকেই বাঁশ কোড়ল কিনে সিদ্ধ করে ফ্রীজে মজুদ করে ও খেয়ে থাকেন বলে জানান।

এদিকে বাঁশ কোড়লের রয়েছে নানা পুষ্টিগুণ। জানা যায়, দৈহিক সুস্থতায় বাঁশ বেশ উপকারী। বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি মেলাতে এর কার্যকারিতা অপরিসীম। আর তাইতো এই বাঁশের কোড়লকে চীনারা বলে থাকেন ‘স্বাস্থ্যকর খাবারের রাজা’। এর বেশ পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা রয়েছে। যেমন :-তাজা বাঁশের কোড়লে রয়েছে- পানি- ৮৮ থেকে ৯৩ শতাংশ, প্রোটিন- ১.৫ থেকে ৪ শতাংশ, চর্বি- ০.২৫ শতাংশ থেকে ০.৯৫ শতাংশ, চিনি- ০.৭৮ থেকে ৫.৮৬ শতাংশ, সেলুলোজ- ০.৬০ থেকে ১.৩৪ শতাংশ, খনিজ পদার্থ- ১.১ শতাংশ। এছাড়াও রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন।

বাঁশ কোড়লের রয়েছে অনেক উপকারিতা। যেমন:- হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, বাঁশের কোড়লে রয়েছে উপকারী সব উপাদান যা দেহের কোলেস্টরেলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। দেহের রক্তচাপের মাত্রা কমায় এটি। যারা উচ্চ রক্তচাপ সমস্যায় ভুগছে তাদের জন্য উপকারী একটি খাবার হলো বাঁশ কোড়ল। এটি ক্যানসারের ঝুঁকিও কমায়। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। হজমজনিত সমস্যা কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় খাবার তালিকায় রাখুন বাঁশ। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে দারুণ কার্যকর। এছাড়া নানা রোগের নিরাময় এই বাঁশ কোড়ল। তার মধ্যে হাঁপানি, ডায়াবেটিস, তীব্র জ্বর, মূর্ছা যাওয়া, মৃগী রোগ ইত্যাদি নিরাময়ে যথেষ্ট উপকার করে বাঁশ।

বাজারে পাওয়া যায় এমন সবজিগুলোর চেয়ে কোনো অংশেই কম নয় বাঁশের কোড়ল। বরং, এর উপকারিতা অনেক। তাই নিয়মিত বাঁশ কোড়ল খেলে নানা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সিলেট ও চট্টগ্রামের পার্বত্য এলাকাগুলোতে এটি খাওয়া হয় বেশি। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের মেঘালয়, আসাম, হিমালয় অঞ্চলে, নেপাল, ভুটান, কোরিয়া, চিন, জাপানেও বেশ জনপ্রিয় এই বাঁশ কোড়ল।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions