শিরোনাম
রাঙ্গামাটিতে পাহাড় কাটার দায়ে জনসংহতি সমিতির নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যানের নামে মামলা পাহাড়ের জনপ্রিয় খাবার ‘বাঁশ কোড়ল’ রাঙ্গামাটির কাউখালীতে অগ্নিদুর্গত ক্যাথোয়াইচিংকে ঘর উপহার সেনাবাহিনীর কফি ও কাজুবাদাম প্রকল্পের ক‌য়েক কোটি টাকা পি‌ডির পকে‌টে খাগড়াছড়িতে শ্রীকৃষ্ণের ৫২৫১তম জন্মাষ্টমী উদযাপন খাগড়াছড়িতে বজ্রপাতে এক যুবকের মৃত্যু পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের পরামর্শক কমিটিতেও বৈষম্যর শিকার বাঙালিরা,৯ সদস্যের ৮ জনই অবাঙালি, একজন বাঙালি থাকলেও তিনি পাহাড়ের বাসিন্দা নন পাহাড়ি, বাঙালি, উপজাতি সবাই মিলে শান্তিতে বসবাস করবো : সেনাপ্রধান পার্বত্য চট্টগ্রাম বড়ুয়া সংগঠনের কাপ্তাই উপজেলা কমিটি গঠন জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে আইএসপিআর

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের পরামর্শক কমিটিতেও বৈষম্যর শিকার বাঙালিরা,৯ সদস্যের ৮ জনই অবাঙালি, একজন বাঙালি থাকলেও তিনি পাহাড়ের বাসিন্দা নন

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৫
  • ১৭০ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট,রাঙ্গামাটি:- পার্বত্য চট্টগ্রামে রয়েছে বহু জাতি সত্তার বসবাস। পিছিয়েপড়া এই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড’ নামে সরকারের আলাদা একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ১৯৭৬ সাল থেকে পার্বত্যবাসীর উন্নয়নে সরকার প্রতি বছর শত শত কোটি টাকা এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বরাদ্দ দিয়ে আসছে।

তবে বিভিন্ন সময় এ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জাতিগত বৈষম্য করার অভিযোগ রয়েছে। ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী গণঅভ্যুত্থানের পর পার্বত্যবাসী মনে করেছিল, এ নতুন বাংলাদেশে বৈষম্য মুক্ত হবে পার্বত্যাঞ্চলও, বৈষম্যমুক্ত হবে উন্নয়ন বোর্ডের কার্যক্রম। কিন্তু তা হয়নি।

গত ১৩ আগস্ট (বুধবার) পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের পরামর্শ কমিটিতে ৯ জনকে সদস্য করে একটি চিঠি ইস্যু করা হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে। পরামর্শক কমিটির সদস্য মনোনয়নের ক্ষেত্রে বৈষম্যর শিকার হয়েছে দেশের বৃহত্তর জাতি স্বত্তা বাঙালী জনগোষ্ঠি।

গত ২২ জুলাই পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এই সদস্যদের মনোনীত করে মন্ত্রণালয়ে যে প্রস্তাব পাঠায়, তারই ভিত্তিতে স্বায়ত্বশাসিত এ প্রতিষ্ঠানটির পার্বত্য জেলাগুলোতে উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তা প্রদানের জন্য পরামর্শক কমিটিতে এই ৯ জনকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে চিঠি ইস্যু করে পার্বত্য মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয় থেকে ইস্যু করা চিঠি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আইন, ২০১৪ অনুসারে ১১ (১) (ঘ) ধারা অনুযায়ী তিন পার্বত্য জেলা থেকে একজন করে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান যথাক্রমে- কমিটিতে রাঙামাটি সদরের মগবান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পুষ্প রঞ্জন চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা সদরের কমলছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুনীল চাকমা এবং বান্দরবান জেলা সদরের সুয়ালক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উক্যনু মারমাকে সদস্য করা হয়েছে।

১১ (১) (ঙ) ধারা অনুযায়ী তিন পার্বত্য জেলা থেকে একজন করে হেডম্যান যথাক্রমে-কমিটিতে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার রূপকারী মৌজার হেডম্যান বিশ্বজিত চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা সদরের গোলবাড়ি মৌজার হেডম্যান উক্যসাইন চৌধুরী এবং বান্দরবান জেলা লামা উপজেলার হেডম্যান চাম্বি মৌজার হেডম্যান টি মং প্রু-কে সদস্য করা হয়েছে।

এবং ১১ (১) (চ) ধারা অনুযায়ী তিন পার্বত্য জেলা হতে সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তিন সদস্য যথাক্রমে কমিটিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙামাটির অতিরিক্ত পরিচালক নাসিম হায়দার, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী জীবন রোয়াজা এবং রাঙামাটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা অঞ্জুলিকা খীসাকে সদস্য করা হয়েছে।

সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ৯ জনের মধ্যে ৮ জনই অবাঙালি এবং তারা পার্বত্যাঞ্চলের বাসিন্দা। অন্যদিকে একজন মাত্র বাঙালি, কিন্তু তিনি সরকারি চাকরিজীবী, পাহাড়ের অধিবাসী নন। অর্থাৎ ৯ জনের মধ্যে পার্বত্যাঞ্চলের ৮ জন অবাঙালি সদস্য থাকলেও কোনো পার্বত্য বাঙালির স্থান সেখানে হয়নি।

তিন পার্বত্য জেলায় ৫০ ভাগেরও অধিক বাঙালি জনগোষ্ঠির বসবাস। পার্বত্যাঞ্চলের বাঙালি জনগোষ্ঠি থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, হেডম্যান কিংবা সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে কাউকে সদস্য না করে এমন বৈষম্যমূলক পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড পরামর্শক কমিটি গঠন নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে পাহাড়ের সর্বত্র। এই নিয়ে বাঙালিদের মধ্যে ক্ষোভেরও সঞ্চার হয়েছে।

বিশিষ্ট লেখক, গবেষক, কলামিস্ট ও সাংবাদিক সৈয়দ ইবনে রহমত তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ‘গত ১৩ আগস্ট (বুধবার) পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ইস্যু করা এক চিঠিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের পরামর্শক কমিটির জন্য ৯ জনকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে এই ৯ জনের মধ্যে ৮ জনই অবাঙালি এবং তারা পার্বত্যাঞ্চলের বাসিন্দা। অন্যদিকে একজন মাত্র বাঙালি, কিন্তু তিনি সরকারি চাকরিজীবী, পাহাড়ের কেউ না। অর্থাৎ ৯ জনের মধ্যে পার্বত্যাঞ্চলের ৮জন অবাঙালি সদস্য থাকলেও কোনো পার্বত্য বাঙালির স্থান সেখানে হয়নি।’

তিনি আরো লিখেন, ‘এই পরামর্শক কমিটির কাজ হচ্ছে উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন প্রকল্প ও স্কিম প্রস্তুত এবং তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বোর্ডকে পরামর্শ প্রদান করা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কি শুধুমাত্র অবাঙালিদের উন্নয়নের জন্য? যদি তাই না হবে, তাহলে এই অঞ্চলের বৃহত্তর জনগোষ্ঠি তথা ৫০ শতাংশের অধিক জনসংখ্যা বাঙালিদের কোনো প্রতিনিধি রাখা হলো না কেন? তাহলে কি ধরে নিব, যারা এই কমিটির সদস্য বাছাই করেছেন, যারা অনুমোদন দিয়েছেন তারা কেউ পাহাড়ে বাঙালিদের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন না? কিংবা তারা পাহাড় থেকে বাঙালিদের অস্তিত্ব মুছে ফেলতে চান বলেই এখানে পার্বত্য বাঙালিদের কোনো প্রতিনিধি রাখেননি?’

রাঙামাটি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার আল হক বলেন, ‘পার্বত্যাঞ্চলে যেহেতু ৫০ ভাগেরও অধিক বাঙালি জনগোষ্ঠির বসবাস সেহেতু পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড পরামর্শক কমিটিতে এমন বৈষম্য মেনে নেওয়া যায় না। দেশের বৃহত্তর স্বার্থের কথা মাথায় রেখে একটি সমতার ভিত্তিতে কমিটি গঠন করা যেতো।’

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ইস্যু করা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন-১ শাখার উপসচিব মোহাম্মদ নাহিদ ইসলাম। কমিটির সদস্য বাছাইয়ে পার্বত্য বাঙালিদের প্রতি কেন বৈষম্য করা হলো? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি নিয়োগ দেওয়ার কেউ নয়। আপনারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলুন। আমি সরকারি চাকরি করি।’

অন্যদিকে বিষয়টি প্রসঙ্গে জানার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) অনুপ কুমার চাকমা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা সাড়া দেননি।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions